আজ
|| ২৩শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২৭শে মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
‘মেয়েকে ছাড়া কীভাবে স্যার বাঁচবেন, কীভাবে এই শোক সহ্য করবেন?’
প্রকাশের তারিখঃ ২২ জুলাই, ২০২৫
প্রভাত ডেস্ক: ‘স্কুলের কাছাকাছি স্যারের বাসা। প্রতিদিন সকালে স্যারকে দেখতাম মেয়ে হুমায়রাকে কখনো কোলে করে, আবার কখনো হাত চেপে ধরে স্কুলে নিয়ে আসতেন। আবার ছুটি হলে বাসায় পৌঁছে দিতেন। স্যার আবার হয়তো স্কুলে আসবেন। ক্লাস নেবেন। কিন্তু হুমায়রাকে আর স্যারের সঙ্গে দেখা যাবে না। সেই আদরের একমাত্র মেয়েকে ছাড়া কীভাবে স্যার বাঁচবেন, কীভাবে এই শোক সহ্য করবেন? হে আল্লাহ, তুমি স্যারকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দিয়ো।’
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ শাখার শিক্ষার্থী আজমাইন অনন্য গতকাল সোমবার বিকেলে ফেসবুকে তাঁর কলেজের শিক্ষক দেলোয়ার হোসাইনের মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে এমন স্ট্যাটাস দেন।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে মেহেনাজ আক্তার ওরফে হুমায়রা (৯) নিহত হয়েছে। সে ওই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। গতকালের ওই ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ২৭–এ পৌঁছেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৭৮ জন।
নিহত মেহেনাজের বাবা দেলোয়ার হোসাইন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। তবে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেলোয়ার হোসাইন অক্ষত রয়েছেন। তাঁদের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়া গ্রামে। গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে অ্যাম্বুলেন্স করে মেহেনাজের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।
মেহেনাজের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হতেয়া গ্রামের আবদুল বাছেদ মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসাইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। এরপর তিনি রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক পদে যোগ দেন। তিনি স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন।
মেহেনাজের পাশের বাড়ির গণমাধ্যমকর্মী সুজন বলেন, ছুটি পেলে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে দেলোয়ার হোসাইন গ্রামের বাড়িতে আসতেন। তার মৃত্যুর খবর শুনে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। গ্রামের মানুষ তাকে একনজর দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিল। রাত দুইটার দিকে অ্যাম্বুলেন্স আসার শব্দ শুনে গ্রামের মানুষ যেন জেগে ওঠে। মুহূর্তেই বাড়িতে লোকজন ভরে যায়। স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ রাতের আকাশ ভারী হয়ে ওঠে।
মেহেনাজের দাদা আবদুল বাছেদের আর্তনাদে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তিনি শুধু বলছিলেন, ‘এবার কোরবানি ঈদে দাদু এসেছিল। দাদু সারাক্ষণ আমার সঙ্গেই থাকত। দাদু আর কোনো দিন আসবে না। আর আমাকে দাদু বলবে না।’
হতেয়া গ্রামের নেয়ামুল হক বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টায় হতেয়া গাবলের বাজারে মেহেনাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় জামায়াতের নেতা শফিকুল ইসলাম ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সবুর রেজা উপস্থিত ছিলেন। পরে পারিবারিক কবরস্থানে মেহেনাজকে দাফন করা হয়।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.