প্রভাত রিপোর্ট: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং পক্ষপাতের অভিযোগ এনেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে বিপুল জনপ্রিয় ও জনসমর্থিত সরকার যদি কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রতি হেলে যায় তাহলে তাদের প্রতি জনগণের সমর্থনও সরে যাবে। যার ফলে আগামীতে কিন্তু প্রশ্ন তৈরি হতে পারে, এই সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা। সেটা আজকের বৈঠকে আমরা সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছি।
বুধবার (২৩ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল, এখনো রাজনৈতিক মাঠে তাদের একটা শক্ত অবস্থান আছে। বিএনপির মতো একটি বড় দলের সঙ্গে সরকার আলাপ করতেই পারে, খুব স্বাভাবিক। কিন্তু চারটা দলকে কোন ক্রাইটেরিয়ায় বড় দল হিসেবে সিলেক্ট করল সরকার? গণমাধ্যমের সামনে সেই প্রশ্নও রাখেন নুর।
নুর বলেন, গতকাল রাতে বৈঠকে ডাকা চারটি দলের মধ্যে তো একটি দলের নিবন্ধন নেই। সদ্য গঠিত হয়েছে। এই অভিযোগটা আজকে ১৩ দলীয় বৈঠকের সব দলের নেতৃবৃন্দই উত্থাপন করেছেন।
বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ডে ও ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে যে সরকার এনসিপির প্রতি একটু পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা পালন করছে। এ রকম একটা গণঅভ্যুত্থানের পরে বিপুল জনপ্রিয় ও জনসমর্থিত সরকার যদি কোনো দিকে হেলে যায় তাহলে তাদের প্রতি জনগণের সমর্থন সরে যাবে। এর ফলে আগামীতে কিন্তু প্রশ্ন তৈরি হতে পারে এই সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা? সেটা আজকের বৈঠকে আমরা সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে যে আইনজীবী হত্যার ঘটনা ঘটলো চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তারের পর। যদিও সাধারণ নাগরিকের মতো আমরা আঁচ করেছি আগের রাতেই। তেমনিভাবে গোপালগঞ্জেও এমন কিছু ঘটবে তা আমরা আঁচ করতে পেরেছিলাম। যদি সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা গোয়েন্দা বাহিনী তা আঁচ করতে না পারে তাহলে তারা ব্যর্থ। না হলে তাদের সরকারের সঙ্গে সমন্বয় হচ্ছে না। ভবিষ্যতে যেন সরকার এ ধরনের পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, পতিত স্বৈরাচারী শক্তি বিভিন্ন ইস্যুতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে পৃষ্ঠপোষকতা করে বিভিন্ন ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা করতে পারে। সে বিষয়ে আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে নুর বলেন, জাতীয় ঐক্যমদ্ধ কমিশন অনেক বিষয়ে দুই একটি দল কী বলছে, সেটার উপরে ভিত্তি করে একটা কনক্লুশনে পৌঁছে যাচ্ছে বা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার লাইনে চলে যাচ্ছে। সংস্কার কমিশন বা সরকার যেন বৃহত্তর জনআকাঙ্ক্ষাকে পাশ কাটিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি বায়াস্ট হয়ে বা চাপে পড়ে এ ধরনের সিদ্ধান্তে না পৌঁছায় সেটি আজকের বৈঠকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নুরুল হক বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল এখানে আমরা বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেয়েছি। সরকারের জনপ্রিয়তা ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে হ্রাস পেয়েছে। যেটা সরকারও বোঝে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি না থাকায় একটা ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। প্রশাসন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। অতীতে দলীয় সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে যে সহিংসতা ও ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রভাব দেখেছি সে জায়গা থেকে আমরা আবারও সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি তারা অন্তত তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বা প্রশাসনের ফিটনেস যাচাই করার জন্য হলেও দু-একটি ধাপে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন করেন।
নুর বলেন, গত ১১ মাসে আমরা কিন্তু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও এনসিপি ছাড়া অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের ছাত্র নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বসতে দেখিনি, ডাকেনি। বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতাদেরকে নিয়ে একটা মতবিনিময় সভার প্রস্তাব রেখেছি। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।