• শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:২০ পূর্বাহ্ন

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে : মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সামান্য

প্রভাত রিপোর্ট / ৯ বার
আপডেট : শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন দেশের প্রায় সব এলাকার জনগণ। এর আগে এই রোগ রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা একযোগে সারাদেশে বিস্তার লাভ করেছে। চলতি বছরে ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৬২৫ জন। এডিস মশা থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ হলেও এবার ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে এডিস মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে মাল্টিভেরিয়্যান্ট অ্যানালাইসিস করে ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করেছে। এর মাধ্য ওই এডিস মশার ঘনত্বের আগাম ধারণা দেয়া যায়। ওই গবেষণাগার থেকে এখন পর্যন্ত যত আগাম তথ্য দেয়া হয়েছে, তার সবগুলোই সঠিক হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের সিংহভাগ এলাকায় মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার কাঠামো নেই। যদিও ঢাকার দুই সিটিসহ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় কমবেশি জনবল রয়েছে। তবে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা না করায় সেখান থেকে কার্যত সুফল মিলছে না। এর বাইরের এলাকায় মশক নিয়ন্ত্রণ কাঠামো বলে কিছুই নেই। এই অবস্থায় এডিসের বিস্তার যেমন হওয়ার কথা তেমনই হচ্ছে। সবমিলিয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত সরকার কার্যত ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের শুরু থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত হিসাবে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭০ জন। এর মধ্যে নারী ৪৭.১ শতাংশ এবং পুরুষ ৫২.৯ শতাংশ। সিটি করপোরেশন এলাকার ভেতরে রোগী ৩৯ জন এবং সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরের রোগী ৩১ জন। জানুয়ারি মাসে মারা গেছেন-১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, মার্চে মৃত্যু নেই, এপ্রিল মাসে ৭ জন, মে মাসে ৩ জন, জুন মাসে ১৯ এবং চলতি জুলাই মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৮ জন। আর চলতি বছরের শুরু থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে আক্রান্ত হয়েছেন-১৮ হাজার ৬২৫ জন। এর মধ্যে নারী ৪১.৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৫৮.৬ শতাংশ। সিটি করপোরেশন এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২০ জন। আর সিটি করপোরেশনের বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৬০৫ জন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে আক্রান্ত হয়েছেন-১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চ মাসে ৩৩৬ জন, এপ্রিল মাসে ৭০১ জন, মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩ জন, জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫১ জন এবং জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৩২৯ জন।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত-বাংলাদেশ সরকার করোনা সংক্রমণ সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো এই ভাইরাসটি মোকাবিলা করা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নেতৃত্বে কার্যকর সমন্বয়ের ফলে এটা সম্ভব হয়। কিন্তু ২০০০ সালে শুরু হওয়া এডিস মশার উপদ্রব এখনো বলবৎ রয়েছে। শুরুর পর প্রতিবছরই কমবেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে মানুষ। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসসহ বহুবিধ রোগের বাহক এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকার অবগত হলেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় তা নিরসন হচ্ছে না।
তারা বলেন, ২০০০ সাল থেকে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে বাংলাদেশে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এই ২৫ বছরে এডিস মশার কামড়ে কয়েক হাজার মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কয়েক লাখ। এসব জনগণের শারীরিক কষ্ট ভোগ করার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয় নিজেদের গুনতে হয়েছে। অথচ বিশ্বের অনেক দেশে ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করে। একদিকে সরকার মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, অন্যদিকে চিকিৎসা ব্যয়ও বহন করছে না। তাহলে জনগণ যাবে কোথায়? সরকারকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
তারা আরও বলেন, ২৫ বছর আগে বাংলাদেশে ঢাকায় প্রথম ডেঙ্গু ভাইরাসবাহিত এডিস মশা শনাক্ত হয়। সে বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন আক্রান্ত হয় এবং তাদের মধ্যে ৯৩ জন মারা যান। শুরুতে পর্যাপ্তসংখ্যক কীটতত্ত্ববিদদের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু হলেও বছর না যেতেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে গতানুগতিক পদ্ধতিতে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ফেলে আসা সময়ের কোনো মৌসুমে ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি ছিল, কোনো মৌসুমে কম ছিল। সরকারের বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যকর উদ্যোগের অভাব এবং পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধাপে ধাপে এডিস মশার বিস্তার বেড়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো অর্পিত কাজকে গুরুত্ব না দেওয়ায় এখনো পদ্ধতিগত কাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলে বিগত দুই দশকের বেশি সময়ে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা এ দেশে শক্তভাবে জেঁকে বসেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার সচিবের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. শাহজাহান মিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার বিভাগ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ কারণে গত বছরের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের চিত্র তারা পর্যালোচনা করছে এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সিটি ও পৌরসভার বাইরে মশা নিয়ন্ত্রণে জনবল কাঠামো নেই। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের মশক নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। তবে এটা টেকসই কোনো পদ্ধতি নয়। টেকসই পদ্ধতি তো একদিনে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এজন্য সরকার ভাবছে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও