• বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন

অপরিবর্তিত থাকছে নীতি সুদহার

প্রভাত রিপোর্ট / ৮ বার
আপডেট : বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: মূল্যস্ফীতি কমে গত জুনে ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ অবস্থায় বিনিয়োগ বাড়াতে সুদহার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তবে নতুন মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাতত প্রধান নীতি সুদহার (রেপো) ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখতে পারে। অন্যদিকে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৯ শতাংশ। প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা প্রকৃত অর্জনের চেয়ে বেশি হলেও গত অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। আর সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার আগামী ৬ মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এবারও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রধান অগ্রাধিকার থাকছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে আগামী বছরের জুন নাগাদ গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নীতি সুদহার কমালে বিনিয়োগ বাড়বে, তেমন নয়। তবে কমালে মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। ফলে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখাই যৌক্তিক হবে। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের আশপাশে নামলে তখন হয়তো ভাবা যেতে পারে। তিনি বলেন, এর আগে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল ডলারের দর বেড়ে যাওয়া এবং ডলার না পাওয়া। ডলারের দর কমার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তবে অন্য কারণ বিবেচনায় সেই সুযোগ নেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, এর আগে সুদহার ৯ শতাংশে বেঁধে দিয়ে ঋণ বাড়ানো গেছে। তবে বিনিয়োগ বাড়েনি। সুতরাং বর্তমান পরিবেশে সুদহার কমালে বিনিয়োগ বাড়বে বলে মনে হয় না। বিনিয়োগে অনিশ্চয়তার জন্য যেসব কারণ রয়েছে, বিশেষ করে জ্বালানি, গ্যাস ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সমস্যা সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ গত বছরের ২২ অক্টোবর প্রধান নীতি সুদহার রেপো ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে। মূলত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ধক রেখে রেপোর বিপরীতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়। অন্যদিকে, নতুন মুদ্রানীতিতে আন্তঃব্যাংক ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে নীতি সুদহার স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে। অবশ্য গত ১৫ জুলাই স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৮ শতাংশে নামানো হয়েছে। ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে টাকা রাখার ক্ষেত্রে এ সুদহার প্রযোজ্য হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ওঠে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। এরপর থেকে প্রতি মাসে কমে জুনে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমেছে। মূল্যস্ফীতি কমে আসার প্রধান দুটি কারণ হলো, ডলারের দরে স্থিতিশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ভালো হওয়া। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ভালো প্রবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন উৎস থেকে কম সুদের ঋণের কারণে জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আপাতত বড় কোনো পরিশোধের চাপ নেই। ডলারের দর কমতির দিকে ছিল। তবে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমে আসতে পারে বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রেখেছে। ফলে আপাতত দর বৃদ্ধির শঙ্কা দেখছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতি কমার ধারাবাহিকতা বজায় থাকার আশা করা হচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে জুন নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল। তবে অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর আগে গত ডিসেম্বরেও একই রকম লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। সরকারি খাতে এবার ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হতে পারে ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরের জন্য ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ ধরা হলেও গত জুন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর নাগাদ মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা সামান্য বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরা হতে পারে। গত জুন পর্যন্ত মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ছিল। তবে মে পর্যন্ত হিসাবে যা ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ হয়েছে। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কেনায় বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ছে। আবার দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থায় ধার দেয়া হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও