• শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন

দেশের এক তৃতীয়াংশ শিশু বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার

প্রভাত রিপোর্ট / ১০ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ শিশু বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রকাশ করা জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) সংবলিত প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে শিশুরা যেসব বঞ্চনার শিকার হয় এবং যেগুলো প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার ও সম্ভাবনাকে ব্যাহত করে চলেছে, সেগুলো অবিলম্বে মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে প্রায় তিনজন (২৮ দশমিক ৯ শতাংশ) বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। এই হার দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী প্রাপ্তবয়স্কদের হারের (২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ) চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এর ফলে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শিশুরা বাংলাদেশে বিদ্যমান দারিদ্র্যের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর মাধ্যমে প্রভাবিত হচ্ছে।
এমপিআইয়ে একটি বিস্তৃত ও সমন্বিত পদ্ধতিতে দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয়, যেখানে শুধু আয়ের ভিত্তিতে নয়, বরং শারীরিক দুর্বলতা বা খারাপ স্বাস্থ্য, শিক্ষার সুযোগের অভাব, অপর্যাপ্ত পুষ্টি, অনিরাপদ জীবনযাপণ বা থাকার ব্যবস্থা ও অত্যাবশ্যকীয় সেবাসমূহের অভাব, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। এসব সূচকের অন্তত দুটি দ্বারা প্রভাবিত হলে তাকে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসরত বলে বিবেচনা করা হয়।
এমপিআই অনুযায়ী, সার্বিকভাবে বাংলাদেশে তিন কোটি ৯০ লাখের বেশি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে। অর্থনৈতিক দারিদ্র্য ও খর্বকায় শিশুর সংখ্যা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশে বহুমাত্রিক শিশু দারিদ্র্য এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার হওয়ার শঙ্কা ৩৫ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণ এলাকার শিশুরা শহরাঞ্চলের শিশুদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি মাত্রায় বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে। সূচকে স্কুলে উপস্থিতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, শিশুর শিক্ষা-সংক্রান্ত বঞ্চনাগুলো শিশুদারিদ্র্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালক।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স এ বিষয়ে বলেন, যখন দারিদ্র্যের একাধিক মাত্রাগুলোকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যায়, তখন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশুদারিদ্র্য প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রতিবেদনে অঞ্চলভিত্তিক দারিদ্র্য বৈষম্যের চিত্রও উঠে এসেছে। দেশের পাঁচটি জেলায় ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার, বান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও ভোলা।
দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার রয়েছে বান্দরবানে (৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ)। আর দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে সিলেট বিভাগে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি, যা ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।
কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি এবং ভোলায় বিদ্যমান উচ্চমাত্রার বহুমাত্রিক দারিদ্র্য, পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগের একটি আঞ্চলিক দারিদ্র্য-ক্লাস্টার বা দারিদ্র্যের ঘনত্বের ইঙ্গিত দেয়। শিশুদারিদ্র্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের মতো পূর্বাঞ্চলের অঞ্চলগুলোতে বেশি। অন্যদিকে অর্থনৈতিক দারিদ্র্য উত্তরাঞ্চলে বেশি।
সূচক প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নীতিনির্ধারকদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল বা এলাকার বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো এর অন্তর্নিহিত কারণসমূহ উদঘাটন করা। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি সূচকের গভীরে যেতে হবে, বুঝতে হবে কীভাবে এবং কেন তা সামগ্রিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকে প্রভাব রাখছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিভিন্ন খাতে সমন্বয়ের ঘাটতি ও দুর্বলতা এবং সাম্প্রতিক অস্থিরতার মতো বিষয়গুলো, বহুমাত্রিক শিশু দারিদ্র্য মোকাবিলার জন্য যে জরুরি বিনিয়োগ প্রয়োজন তা সীমিত করছে। আর এর ফলে অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি), ইউনিসেফ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (ওপিএইচআই) মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে এমপিআই উদ্যোগটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও