আজ
|| ২৭শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১১ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ৪ঠা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
পাহাড়ের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত কাজু ও কফি
প্রকাশের তারিখঃ ১ আগস্ট, ২০২৫
প্রভাত সংবাদদাতা, বান্দরবান: পাহাড়ের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে কাজু ও কফির চাষাবাদ। বর্তমান সময়ে বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী ৬ বিলিয়ন ডলারের কাজুবাদামের চাহিদা রয়েছে। আর বাংলাদেশের বাজারে এর চাহিদা রয়েছে ৭শ কোটি টাকা। দেশীয় বাজারে বছরে কফির চাহিদা আছে ২ হাজার টন, প্রতি বছর প্রায় ৬শ কোটি টাকার কফি দেশীয় বাজারে বিক্রি হয়।
এদিকে প্রতি বছর দেশীয় বাজারে বাড়ছে কাজুবাদাম ও কফির চাহিদা। বাড়ছে এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান ও সৃষ্টি হচ্ছে হাজারো বেকারদের কর্মসংস্থান।
একটা সময় দেশীয় বাজারে কাজুবাদামের চাহিদার শতকরা ৯৫ ভাগই পূরণ হয়েছে আমদানির ওপর। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারে এই চাহিদা পূরণ করতে নানাবিধ কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয় সরকার। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও এখন বেড়েছে কাজু ও কফির আবাদ। এই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া ও জলবায়ু কাজুবাদাম ও কফি চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় ও বিশেষজ্ঞরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮শ হেক্টর জমিতে কাজু বাদাম চাষ হলেও বর্তমানে জেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে, আর কফির চাষকৃত জমি ৪শ হেক্টর থেকে বৃদ্ধি পয়ে ১ হাজার হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। কাজুবাদাম ও কফি চাষ লাভজনক হওয়ায় পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে এর চাষাবাদ বেড়েছে ব্যাপক হারে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ইতোমধ্যেই অনগ্রসর পাহাড়ি কৃষকদের আত্মকর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পার্বত্যাঞ্চলে কফি ও কাজু বাদাম চাষাবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন।
২০২১ সালে কফি-কাজু বাদাম চাষ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে বর্তমানে প্রায় ৪২০০ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম চাষাবাদ হচ্ছে। একই সঙ্গে পূর্বে শুধুমাত্র ৬৫ হেক্টর জমিতে কফি চাষাবাদ করা হতো, বর্তমানে ১৮০০ হেক্টর জমিতে উন্নীত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে, বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এম এম শাহ নেওয়াজ বলেন, পার্বত্য বান্দরবানের আবহাওয়া ও পরিবেশ কফি ও কাজু বাদাম চাষের যথেষ্ট উপযুক্ত, অর্থকরী ফসল হিসেবে কাজুবাদাম ও কফি চাষাবাদের জন্য আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।
২০২০-২১ অর্থবছরে কাজু বাদাম ও কফি গবেষণা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে শুরু হয় ১৯টি জেলায়, যার মধ্যে বান্দরবানও অন্তর্ভুক্ত। এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কৃষকদের ভিয়েতনাম থেকে আনা উন্নত কাজুবাদাম চারা এম২৩ এবং উন্নত জাতের এরাবিকা, রোবাস্টাজাতের কফি চারা প্রদান করেছি সঙ্গে সার ও বালাইনাশক দেওয়া হয় । তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানে প্রথম কফি ও কাজুবাদামের প্রসেসিং কারখানা গড়ে উঠেছে ‘কিষান ঘর’।
এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, কাজুবাদাম ও কফি চাষাবাদের সঙ্গে ৫-৬ হাজার কৃষক জড়িত। বছর ব্যাপী বাগানের পরিচর্যার জন্য কৃষকরা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ পায় না। যা এই সেক্টরের জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। সরকারের পক্ষ হতে যদি কৃষকদের কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে এই অঞ্চলে কাজুবাদাম ও কফির উৎপাদন সক্ষমতা আরো বাড়বে। তিনি জানান কাগজে কলমে সকল ব্যাংকিং সেক্টরে কৃষি ঋনের কথা বলা থাকলেও বাস্তবিকতায় পার্বত্য এলাকায় এই সেক্টরে প্রসেসিং প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো ঋণের সুযোগ নেই। তিনি জানান, এ বছর চাষিরা কাজুবাদাম মণ প্রতি ৭-৮ হাজার টাকা পেয়েছেন। বর্তমানে চাষিদের মাঝে চাষাবাদের যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে আমরা দেশের বাজারে কাজুবাদাম ও কফির যে চাহিদা তা নিজেদের উৎপাদন দিয়ে পূরণ করতে সক্ষম হব।
এদিকে কফি ও কাজু বাদাম কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে ৩০০ উদ্যোক্তাকে পার্টনার প্রকল্পের অধীনে উন্নত প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহ্ মো. খোরশেদ কাদের বলেন, এখন পর্যন্ত ৫০ জন উদ্যোক্তাকে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০২৮ সালের মধ্যে আমরা ৩শ জন উদ্যোক্তাকে পার্টনার প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রদান করব।
ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব ও স্থানীয় পাহাড়ি কৃষকদের অসচেতনতার কারণে সঠিক সময়ে সময়োগযোগী হয়ে উঠছে না বাগানগুলো। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ২ হাজার বাগান রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে মাত্র ৬ জন মাঠ সংগঠক। উদ্যোক্তারা আমদানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এই সেক্টরের দিকে সুদৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান সরকারের কাছে।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.