আজ
|| ৬ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২২শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১১ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ মুরাদনগরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছেন: ছাত্রদলের সম্পাদক
প্রকাশের তারিখঃ ৪ আগস্ট, ২০২৫
প্রভাত সংবাদদাতা, কুমিল্লা: ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কুমিল্লার মুরাদনগরে একধরনের মাফিয়াততন্ত্র কায়েম করেছে। আপনারা দেখেছেন যে যারা জুলাই ও আগস্টে খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, তার পূর্বে খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে একাধিকবার জেলে গিয়েছে, গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে দুঃখজনকভাবে তারা জেলে রয়েছে।’ আজ সোমবার দুপুরে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে তিনি এ কথা বলেন।
মুরাদনগর থানায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে করা মামলায় কুমিল্লা কারাগারে আছেন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিম উদ্দীন। আজ তাঁর সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করেন নাছির উদ্দীন। পরে তিনি কারাগারের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী (আবু), সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা (টিপু) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশ একটি ইতিবাচক রাজনীতিতে থাকলেও কুমিল্লার মুরাদনগর কোনোভাবে ইতিবাচক রাজনীতিতে নেই। এখানে একজন উপদেষ্টা মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছেন।’
উচ্চ আদালত থেকে নেওয়া জামিনের মেয়াদ শেষে গত ২৭ জুলাই বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের ১৩ নেতা–কর্মী কুমিল্লার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই ১৩ জনের মধ্যে ছিলেন মুরাদনগর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিম উদ্দীন। নাজিমকে কারাগারে পাঠানোর খবরে তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩১ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। রাতে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে হাতকড়া পরা অবস্থায় মায়ের জানাজায় অংশ নেন নাজিম।
বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে নাছির উদ্দীন বলেন, ‘মুরাদনগরে যাঁরা গত ১৭ বছরে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছেন, সেই আওয়ামী লীগের কোনো দোসর আজ এই কুমিল্লা কারাগারে নেই। তাঁরা প্রকাশ্যে মুরাদনগরে ঘোরাফেরা করছেন, জনাব আসিফ মাহমুদের বাবার সঙ্গে তাঁরা বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। অথচ সাড়ে ১৭ বছর ধরে যে রাজনৈতিক কর্মীরা খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, বারবার জেল খেটেছেন, পাঁচ তারিখের পরে গায়ের জোর দিয়ে তাঁদের আবার জেলে প্রেরণ করা হয়েছে। মাহমুদ এখন উপদেষ্টা, আসিফ মাহমুদ কীভাবে নির্বাচন করবেন? কিন্তু অনেকে বলছেন যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে আসিফ মাহমুদ পদত্যাগ করবেন। এই সরকারকে আমরা কীভাবে নিরপেক্ষ বলব? এখানে (পুলিশের) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, অভিযোগ শতভাগ সত্য। কারণ, আসিফ মাহমুদ যে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছেন, সে মাফিয়াতন্ত্র থেকে তো থানার ওসি নিশ্চয়ই ওনাকে ভয় পাবেন এবং ওনার কথামতো তিনি মামলা করেছেন। পাঁচ তারিখের পরে হয়েছে, সেই মামলায় আমাদের নেতা–কর্মীদের, আমাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও গণমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টি আকষণ করে নাছির উদ্দীন বলেন, ‘মুরাদনগরের থানার ওসির বিষয়ে আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, উনি (ওসি) কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নন। উনি আসিফ মাহমুদ, তাঁর বাবা ও আওয়ামী লীগের দোসরদের শেল্টার দিচ্ছেন। অপর দিকে যাঁরা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মী, সাড়ে ১৭ বছর ধরে যারা মাঠে আন্দোলন–সংগ্রাম করেছেন, তাঁদের হয়রানি করছেন, গ্রেপ্তার করছেন। সে জন্য আমরা গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করছি। এই বিষয়গুলোকে নিরপেক্ষভাবে বিচার–বিশ্লেষণ করে সংবাদ পরিবেশন করার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২৪ মার্চ ইফতারের আগে কোম্পানীগঞ্জ বাজার এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী পরিবহনে চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রতিবাদ করায় তাঁর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান স্থানীয় শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম। উবায়দুল সিদ্দিকী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার চাচাতো ভাই। ওই ঘটনার পর পুলিশ আবুল কালামকে আটক করে থানায় নেয়। এরপর তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদলের এক নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া আবুল কালামের বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। পরদিন থানায় হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলী আক্কাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানাকে। মামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিনসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া উপজেলা বৈষম্যবিরোধী নেতা আবু ফয়সাল বাদী হয়ে চাঁদাবাজি ও হামলা করে মারধরের অভিযোগে আবুল কালামকে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। ওই ১৩ জন পুলিশের করা মামলায় উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন। দুই মামলার আসামিদের প্রায় সবাই সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারী।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.