প্রভাত ডেস্ক: গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর সম্পর্কে শীতলতা এসেছে ঢাকা-দিল্লির। দুই রাষ্ট্রের টানাপোড়েনের কারণে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে উভয় দেশে।
তবে বর্তমানে বাংলাদেশিদের আগমন কিছুটা বাড়ছে কলকাতায়। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করছেন। গত বছর ৫ আগস্টের পর সংখ্যাটা নেমেছিল ৮-১০ জনে। বাংলাদেশিরা আসায় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে কলকাতার মারকুইস স্ট্রিট।
আগত বাংলাদেশিরা জানাচ্ছেন, তারাও ভারতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন না। অপরদিকে জানা যাচ্ছে, সীমিত পরিমাণে ভ্রমণ ভিসা ছেড়েছে ভারত। এমন আবহে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক ফের স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাংলাদেশি যাত্রী বাড়ায় খুশি পরিবহন ব্যবসায়ীরা। তবে সীমান্তে যাত্রীর চাপ থাকায় কিছুটা বেড়েছে বাসের ভাড়া, এমনটাই বলছেন বাংলাদেশি যাত্রীরা। যদিও পরিবহন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভাড়া বৃদ্ধির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে সরাসরি গাড়ির ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৭০০ রুপি এবং ট্রানজিট ভাড়া চলছে ১৬০০ রুপি।
মারকুইস স্ট্রিটের সৌহার্দ্য পরিবহনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাশেদুল ইসলাম বলেছেন, ভারত ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা উদার মনভাব দেখাচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশিদের চাপ বেড়েছে সীমান্তে। কলকাতা থেকে অনেকে বাংলাদেশে যাচ্ছেন। তবে এখনো সংখ্যাটা একবারেই কম।
শ্যামলী পরিবহনের সুমন কুমার ভক্ত জানাচ্ছেন, মেডিকেল ভিসা বাড়িয়েছে ভারত, যার কারণে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের তিনটি গাড়ি বর্ডার থেকে (পেট্রাপোল) পুরো ভর্তি হয়ে আসছে। আগামী দিনগুলিতে যাত্রী সংখ্যা আরও বাড়বে বলে খবর পাচ্ছি।
যাত্রী বাড়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে মেডিকেল সেক্টরগুলো। ব্যস্ততা বেড়েছে কলকাতার হাসপাতাল এবং মেডিকেল আউটলেটগুলোয়। মারকুইস স্ট্রিটে রয়েছে আরএন টেগোর হাসপাতালের আউটলেট। আছে এমন বহু আউটলেট। আরএন টেগোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুহাম্মদ জাফর ইকবাল জানান, তাদের হাসপাতালে বাংলাদেশির সংখ্যা আগের থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তথ্য মতে আরও বাড়বে। একই মত টাটা ক্যান্সার, মেডিকা, পিয়ারলেসের মতো হাসপাতালগুলোর।
তবে তথ্য বলছে, মেডিকেল ভিসায় যে পরিমাণে বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসছেন, তার সিংভাগ আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ বা উত্তর ভারতমুখী হয়েছেন। ফলে বাঙালিরা আগের তুলনায় বেশি আসছেন ঠিকই, আর তাতে পরিবহন সংস্থা এবং কলকাতা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালগুলো লাভের মুখ দেখলেও সেভাবে খুশি নন মারকুইস স্ট্রিটের মানি এক্সচেঞ্জ, হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিমত, যতদিন না ভ্রমণ ভিসা স্বাভাবিক হবে ততদিন নিউমার্কেট স্বাভাবিক হবে না।
কলকাতার ব্যবসায়ীদের অভিমত, গত এক বছরে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিউমার্কেটের আর্থিক পরিস্থিতি। মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর ভিত্তি করে নিউমার্কেটের অবকাঠামো তৈরি হয়েছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে, শহর কলকাতা আগের মতই নিরাপদ আছে, এমনটাই জানাচ্ছেন বাংলাদেশিরাও। তাদের অভিমত, চিকিৎসার জন্য আসতেই হবে। তবে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম এমন রটনা রটাচ্ছে, তাতে কিছুটা শঙ্কিত ছিলাম। কিন্তু এসে দেখতে পাচ্ছি সবকিছু আগের মতোই আছে। এমনটাই জানিয়েছেন কিডনি রোগী শামিমা।
ঢাকার বাসিন্দা আসিফ হোসেন। তিনি মায়ের ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে ভারতে এসেছেন। তিনি বলেন, মেডিকেল ভিসার সংখ্যা বাড়ায় কলকাতায় বাংলাদেশিদের আগমন বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এই নিয়ে পরপর তিনবার এলাম। কিন্তু এবার দেখছি বাংলাদেশিতে ছেয়ে গেছে।
তার অভিমত, বিমানেও যাত্রী বেড়েছে। টুরিস্ট ও বিজনেস ভিসার যাত্রীও তিনি দেখেছেন। ভারত সরকারের কাছে তার আবেদন ভিসা ব্যবস্থা আরও সহজতর করা, যাতে দুই বাংলার মধ্যে সম্পর্ক জোরদার থাকে। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব বজায় থাকে।
আসিফ হোসেন মনে করেন, কেবলমাত্র রাজনৈতিক ইস্যুর কারণে কিছু ঘটনা ঘটছে। কিন্তু আমরা জানি, দুই দেশের একে অপরকে দরকার। আমাদের যেমন ভারতীয় পণ্য দরকার, ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরও তেমন ক্রেতা দরকার।
তথ্য বলছে, প্রতিদিন শুধু বেনাপোল-পেট্রাপেোল সীমান্ত দিয়ে প্রায় ২ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করছেন। এরমধ্যে ভারতীয় যাত্রী ৫০ জনের মতো। যাত্রী বাড়ছে আকাশ পথে ও অন্যান্য সীমান্ত দিয়েও। অপরদিকে জানা যাচ্ছে, সীমিত পরিমাণে ভ্রমণ ভিসা ছেড়েছে ভারত। এর জেরে প্রায় সব ধরনের ভিসা সচল হচ্ছে। হয়তো আর কিছুদিন সময় লাগবে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে। আর সেই আশায় বুক বেঁধেছে কলকাতা।