• সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
সাগরিকাদের ইতিহাস, প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব–২০ নারী এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ রাজধানীতে দুর্ধর্ষ ‘ধাক্কামারা’ চক্রের ২ নারী সদস্য গ্রেপ্তার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দুর্নীতি প্রশ্রয় দিতেন না : দুদক চেয়ারম্যান সচিবালয়ে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে: প্রেস সচিব শিক্ষার্থীরা এআই দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে প্রিন্সিপাল বসে চা খাচ্ছেন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাজারে হামলা চালালে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না: ধর্ম উপদেষ্টা সাড়ে পাঁচ বছরে সড়কে ঝরেছে ৩৭ হাজার প্রাণ পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের খোঁজ দিলে মিলবে পুরস্কার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শিক্ষার্থীরা ফিরেছেন শ্রেণিকক্ষে হাসিনা-উত্তর বাংলাদেশে এক বছর পর উল্লাস, সামনে কঠিন পথ
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর

শিক্ষার্থীরা ফিরেছেন শ্রেণিকক্ষে

প্রভাত রিপোর্ট / ৪ বার
আপডেট : রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: বিশ্বে বিস্ময় জাগানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন শিক্ষার্থীরা। অকাতরে প্রাণ বিলিয়েছেন তরুণরা। বহু ত্যাগের বিনিময়ে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন শিক্ষার্থীরাই। স্বাভাবিকভাবে আলোচিত বহু ঘটনার কেন্দ্রে শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করতে থাকেন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। কেউ পদত্যাগ করতে না চাইলে তাকে নির্যাতন ও অপমান করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেগুলোতে দেখা যায় শিক্ষককে ঘিরে ধরে পদত্যাগের জন্য জোর করছে শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো জায়গায় শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটেছে। শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানোর এসব ঘটনা রোধ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলেও এ অবস্থা চলতে থাকে প্রায় বছর জুড়েই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাঠামো। এখনো অনেক শিক্ষক কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে মারামারি, শিক্ষকদের আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীরা সময়মতো বই হাতে না পাওয়াসহ নানা ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুমে ফিরিয়ে আনাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে একের পর এক দাবি নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নেন। তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া, আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে শিক্ষকদের লাঞ্ছনা করার ঘটনা ঘটে। গত এক বছরে অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষকসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হন। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে মনোযোগী করার চ্যালেঞ্জ এখনো রয়েছে। শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, শিক্ষকদের আন্দোলনেও অচলাবস্থা তৈরি হয়। গত এক বছরে শ্রেণিকক্ষের চেয়ে আন্দোলনের মাঠেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন একশ্রেণির শিক্ষকরা। রাজধানীতে এমন কোনো শিক্ষক সংগঠন নেই, যারা তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেননি। একাধিক শিক্ষক সংগঠন রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি, অনশন, কর্মবিরতি, বিক্ষোভ, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি পালন করেছে। অনেক সময় শিক্ষকদের আন্দোলন থামানোর জন্য জলকামান, লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার করতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে। তাছাড়া শিক্ষা প্রশাসনেও ওলট-পালট করায় কার্যক্রমে দেখা দেয় স্থবিরতা।
২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ জোর করে পদত্যাগ ও শিক্ষকদের হেনস্তা বন্ধের নির্দেশনা জারি করে। ঐ নির্দেশনায় বলা হয়, ‘লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ ও নানাভাবে হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনায় ঐ সময়ের শিক্ষা উপদেষ্টা, বর্তমানে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানান। সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, ‘বেআইনি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী এবং শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের চিহ্নিত করে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ দেখা গেছে, এই নির্দেশনার পরও জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। অন্যায়ভাবে পদত্যাগের ঘটনায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আইনগত ব্যবস্থা তো দূরের কথা, অনেক শিক্ষকের বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের বেতন অব্যাহত রাখার নির্দেশনা জারি করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক বলেন, যে কোনো অভ্যুত্থানের পরই একটা অস্থিতিশীলতা থাকে, ধীরে ধীরে সেটি স্থিতিশীল হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, ‘একটি পরিবর্তিত সময়ের পর মানুষের চাওয়া-পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায়ও পরিবর্তন আসে। যখন মানুষ একটি নির্দিষ্ট শাসন কাঠামোর ভেতর দিয়ে শোষিত হয়, আর সেই কাঠামোর পতন জনরোষের মাধ্যমে ঘটে; তখন সাধারণত মানুষের মধ্যে পূর্বের অপূর্ণ চাহিদা ও দাবিগুলো পূরণের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে ওঠে। কিন্তু নতুন শাসন কাঠামো যদি এসব চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয় বা বিলম্ব করে, তখন মানুষের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মানুষ একটি ফ্যাসিবাদের ভেতরে বসবাস করেছে। ফলে তাদের মনে গভীর ক্ষোভ জমেছে। মানুষের মধ্যে বিশ্বাস বা আস্থা অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। এই বাস্তবতায়, প্রশাসনের প্রতি বা সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নানা প্রতিষ্ঠান যখন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি বা কর্মপরিকল্পনা দেয়, সেগুলোর ওপর মানুষের আস্থা সংকটে পড়ে। এটা খুবই স্বাভাবিক-কারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছে, মুখে এক কথা বলা হলেও বাস্তবে কার্যক্রম ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই হঠাৎ করে সেই হারিয়ে যাওয়া আস্থা পুনর্গঠন সম্ভব নয়, এটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এরকম একটি বড় অভ্যুত্থানের পরে এমন প্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে আশা করছি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংকট কেটে যাবে।
সম্প্রতি রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, এখন সময় এসেছে তরুণদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার, দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে নিজেকে তৈরি করার। একটা অস্থির সময় পার করছে সবাই, যা বিচক্ষণতার মধ্য দিয়ে পার করতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বমানের মাপকাঠিতে নিজেদের বিবেচনা করার জন্য কাজ করছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও তীব্র মানসিক চাপ রয়েছে। এটি নিরসনে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
এদিকে গত এক বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতিও কম হয়নি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজ নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি কার্যক্রমেরও অনুমতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ৯ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয় ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। এর আগে ২০১৭ সাল থেকে এই সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে সাতটি কলেজ নিয়ে নতুন করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি সাতটি কলেজ হলোÍঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও