প্রভাত রিপোর্ট: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণ প্রত্যাশা করেছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর স্বাস্থ্যের সব খাতেই বৈষম্য দূর হয়ে আমূল পরিবর্তন আসবে। মানুষ ভালো সেবা পাবে, বাড়বে চিকিৎসাসেবার মান, হাসপাতালে ভোগান্তি কমবে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুর পরিবর্তন ঘটেনি। তবে গত এক বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে রদবদল এবং পদোন্নতি হয়েছে। আর সরকারের কিছু রুটিন কাজ হয়েছে এবং কিছু সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে গত এক বছরে ৮ হাজার ২৭৬ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
ফাইলবন্দি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ :এ বছর গত ৫ মে স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা নিরসনে স্বাস্থ্যসংস্কার কমিশন কর্তৃক গঠিত সংস্কার প্রস্তাব জমা দেয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে। ঐ সময় যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলোর জন্য দ্রুত উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু তিন মাসেও সেসবের কোনো অগ্রগতির বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে কমিশনের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, সরকার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, সংস্কারকাজ আর এগোবে না। এজন্য এখনই বড় ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার উপযুক্ত সময়। একই কথা শোনা যায় গত ৪ আগস্ট ‘স্বাস্থ্য পদ্ধতি সংস্কার :আমরা কোথায়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে। সেখানেই অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে গত ৭ আগস্ট ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছরে স্বাস্থ্য খাতের অর্জন এবং ভবিষ্যৎ সংস্কার পরিকল্পনা’ বিষয়ক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানান, দীর্ঘদিনের সমস্যা রাতারাতি সমাধান হবে না। জনবলসংকট নিরসনে ইতিমধ্যে ৩ হাজার চিকিৎসকের পরীক্ষা শেষ হয়েছে, তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে আরও সাড়ে ৩ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে। এছাড়া ১০ হাজার চিকিৎসকের পদোন্নতি প্রক্রিয়াধীন আছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করা হচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতে এর সুফল পাওয়া যাবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসা নিশ্চিত করা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানান, এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৮১১ জন আহতের নাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। গেজেটে প্রকাশিত যাচাইকৃত আহতের সংখ্যা ১২ হাজার ৪২ জন। তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় উন্নত চিকিৎসার জন্য ৭৮ জন আহতকে বিদেশে পাঠিয়েছে। এছাড়া, বিশ্বের সাতটি দেশ থেকে ২৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলাদেশে এসে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও সার্জারি করেছেন। আহতদের চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের কার্যক্রম চলছে। এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৩৬৩ জন জুলাই যোদ্ধাকে স্বাস্থ্য কার্ড প্রদান করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের পথ্য খরচ জনপ্রতি ১৭৫ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করা হয়েছে। আহতদের বিনা মূল্যে হাসপাতালে ভর্তি করে সেবা দেওয়া হয়েছে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত জুলাই আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চীনের সহায়তায় রোবোটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন : তবে জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় কাজগুলোকে অন্তর্বর্তী সরকারের রুটিন কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সরকারের রুটিন কাজের মধ্যে সংস্কারকাজ পড়ে না। তবে সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেছেন, গত এক বছরে স্বাস্থ্য খাতে আমরা মিশ্র একটা পথচলা লক্ষ করেছি। মিশ্র এই কারণে বলছি যে, স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা কোথায় কোথায়, সেটি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিহ্ন করতে পেরেছে। স্বাস্থ্য খাতকে উন্নয়নের পথে নেওয়ার জন্য কোন কোন জায়গায় সংস্কার করা দরকার, সে বিষয়েও একটি প্রস্তাব তৈরি হয়েছে, এটি যথার্থ। কিন্তু অন্যদিকে গত এক বছরে স্বাস্থ্য খাতকে কাজের ক্ষেত্রে অগ্রসর করার তেমন কোনো নমুনা আমরা দেখতে পাই না।