• মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ডেমরার সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের গনিতভীতি গবেষণা কেন্দ্র উদ্বোধন শারদীয় দুর্গাপূজার পর ১৬ অক্টোবর রাকসু নির্বাচন ইউনিলিভার বাংলাদেশের নতুন সিইও ও এমডি রুহুল কুদ্দুস খান ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে বৈশ্বিক সম্মেলন নিউইয়র্কে, আয়োজক ফ্রান্স-সৌদি তামিমের অভিযোগের জবাবে যা বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা তামিমকে সামনে রেখে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হচ্ছে, দাবি ক্রীড়া উপদেষ্টার বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বলাকা ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিমানের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ শাপলা প্রতীক থেকে সরছি না, এনসিপি ১৫০ আসন পাবে: পাটওয়ারী

নাজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেনো রোগী বেচাকেনার হাট

প্রভাত রিপোর্ট / ২৩৩ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

মো. বাবুল শেখ,পিরোজপুর : পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে রোগী বেচাকেনার হাটে পরিণত করেছে ডায়াগনস্টিকের দালাল ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এ যেন রোগী ভাগানোর মহোৎসব। রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে হয়রানি ও বিরক্তির জায়গা নিয়ে গেছে এই চক্র। চক্রটির কাছে রোগীদের পাশাপাশি ডাক্তাররা অসহায়। যেখানে রাজত্ব চলে ডায়াগনস্টিকের দালাল ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের।
চক্রটি সশরীর হাসপাতালে উপস্থিত থেকে রোগী ভাগিয়ে ক্লিনিকে পাঠানো কিংবা রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া অথবা প্রয়োজনীয় প্রেসক্রিপশন এর ওষুধের জন্য ফার্মেসি সবই তাদের নির্ধারিত থাকে।
সেবা নিতে আসা এক রোগী বলেন, তার কাছ থেকে রোগের কথা শুনে এক ব্যক্তি কোন ডাক্তার, কোন ল্যাবে টেস্ট হবে সব কিছু ঠিক করে দেন তিনি। সিজারিয়ান এক নারীর স্বজনকে দালাল চক্র বলে হাসপাতালে সিজার হয় না ক্লিনিকে যান। মূমূর্ষ এক রোগীকে রক্ত দেয়ার জন্য হাসপাতালের ডাক্তারের রুমে যেতে বাধা সৃষ্টি করেন এক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি – এমন সব ভয়ানক তথ্য আসে সাংবাদিকদের হাতে।
এ তথ্যের সত্যতা জানতে সাংবাদিকেরা সরজমিনে গিয়ে দেখেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে ডায়াগনস্টিকের ২৫ থেকে ৩০ সদস্যের একটি দালাল চক্র ও ২০টির বেশি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরাদের সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে। এই যে দালাল চক্রটি রয়েছে তাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। তাদের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ এর মধ্যে। চক্রটি এতোটা বেপরোয়া যে তারা হাসপাতাল কতৃপক্ষকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের রাজত্ব। তথ্য সংগ্রহকালে তারা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন।
উপজেলায় একটি মাত্র সরকারি হাসপাতাল থাকায় প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা দরিদ্র ও অসহায় রোগীদের ও তাদের স্বজনদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন দালালরা। রোগীদের প্রেসক্রিপশন দেখার জন্য হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়ছেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরাও। হাসপাতালের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে ভিতরের প্রতিটি রুম পর্যন্ত পুরো হাসপাতালের দালাল ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবাধ বিচরণ ও আধিপত্য দেখা যায়। উপজেলা হাসপাতালে পা ফেললেই দালালদের মুখোমুখি হতে হয় চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় দরিদ্র ও অসচ্ছল রোগী ও স্বজনদের।
দেখা যায়, এ সমস্ত নারী ও পুরুষ দালালরা হাসপাতালের সামনে থাকা ২০ ফুট দূরে অবস্থিত ৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেতনভুক্ত অথবা রোগী ভাগানোর ওপর নির্ভর করে তারা কমিশন নেন বলে জানা যায়। হাসপাতালের সামনেই মাত্র ২০ ফুট দুরত্বে অবস্থিত ৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরাই এই সমস্ত দালালদের নিয়মিত দেখভাল করেন।
হাসপাতালে আসা কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনরা বলেন, দালালরা প্রথমে হাসপাতালে রোগী সেজে পরিচয় দেন। আবার কেউ কেউ হাসপাতালের কর্মী বলেও পরিচয় দেন। এসব দালাল প্রথমে হাসপাতালের অবস্থাপনার কথা বলে এবং হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ভালো হয় না অথবা হাসপাতালের মেশিন নষ্ট বলে তাদের ভাগিয়ে নিয়ে যান নিজেদের কর্ম স্থল ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে।
হাসপাতালের এক নৈশ প্রহারী জানান, ল্যাবের লোকজন এসে ডিস্টার্ব করে রোগীদের। দালালদের তাড়িয়ে দিলেও তারা আবার আসে। আমাকে বলে তুমিকে। রোগী নিয়ে যায় ল্যাবে। আমার কথা তারা শোনে না।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকা এক কর্মচারী বলেন, নাইট গার্ডকে আমরা দাড় করিয়ে রেখেছি কিন্তু ওকে মানতে চায় না ঢুকে পরে। ওর পাশাপাশি আমরাও প্রতিবাদ করি। প্রশাসনকে জানালে তারা মাঝে মাঝে আসে তাদেরকে (দালাল) তাড়ানো চেষ্টা করে। প্রশাসন আসলে তারা (দালাল) থাকে না।
নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মশিউর রহমান বলেন, কোনো কিছুই প্রশাসন দিয়ে কন্ট্রোল সম্ভব না। এটা একটি সামাজিক আন্দোলন সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। হাসপাতালে সকল ধরনের টেস্ট হয়। আমাদের হাসপাতালে ম্যান পাওয়ারের কারণে কিছু রোগী বাহিরে যায়। দালালদের বিরুদ্ধে বরিশাল বিভাগে ও পিরোজপুর জেলায় বিভিন্ন সময় মোবাইল কোট চালানো হয়েছে আমরা ও প্রশাসন তৎপর আছি। সমাজের সবাই এগিয়ে আসলে নাজিরপুরবাসী আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালো স্বাস্থ্য সেবা পাবে।
নাজিরপুর উপজেলা প্রসাশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আস্থস্ত করেন অচিরেই দালাল চক্র ও অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অভিযান চালানো হবে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও