আজ
|| ২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১লা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
আরও ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরির পরিকল্পনা
প্রকাশের তারিখঃ ২০ আগস্ট, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট: দেশে নতুন করে আরও অন্তত ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরির পরিকল্পনা করেছে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার অর্থায়নে এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আক্তারুজ্জামান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা যখন কমিউনিটি ক্লিনিক পরিকল্পনা করেছিলাম, তখন হিসেব ছিল প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য অথবা ৩০ মিনিট হাঁটার দূরত্বের মধ্যে একটি ক্লিনিক থাকবে। কিন্তু দেশের বাস্তবতায় সেটা সব জায়গায় সম্ভব হয়নি। পাহাড়ি এলাকা, হাওর কিংবা চর অঞ্চলে কোনো কোনো জায়গায় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার মানুষের জন্য একটি ক্লিনিক রয়েছে। ফলে সেখানকার কর্মীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এই ঘাটতি পূরণেই আমরা নতুন করে কমিউনিটি ক্লিনিক বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
আক্তারুজ্জামান বলেন, আমাদের জন্য সুখবর হলো, জাইকা এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে, সেই অর্থায়নে অন্তত ৫০০টি নতুন ক্লিনিক আমরা স্থাপন করতে পারব। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আবেদন নিচ্ছি। যারা জমি দিতে আগ্রহী, তারা যদি নোটারি করা ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে আন্ডারটেকিং দেন, আমরা তাদের আবেদন অগ্রাধিকার দিয়ে লিস্ট করছি। জমি পাওয়া গেলে দ্রুত সেই এলাকায় নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা হবে। সব মিলিয়ে আমাদের সামনে একটা বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্বাস্থ্যসেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাস্টের মাঠ প্রশাসনের পরিচালক আসিফ মাহমুদ বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট এখন শুধু সেবা দেওয়ার জন্য সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলতে চায়। এজন্য আমরা নিজস্ব ভবন নির্মাণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছি। এর ফলে সিএইচসিপি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণ পাবেন। একইসঙ্গে সারাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পুনঃনির্মাণ ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল রেফারেল সিস্টেম চালু করা হবে, যাতে একজন সেবাগ্রহীতা কোথায়, কী ধরনের চিকিৎসা পেয়েছেন তা সহজে ট্র্যাক করা যায় এবং সঠিক সময়ে সঠিক সেবা নিশ্চিত করা যায়। তিনি আরও বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়ানো। বর্তমানে ৫৪ শতাংশ সিএইচসিপি নারী হলেও আমরা সেটিকে ধাপে ধাপে ৮০ শতাংশ বা তারও বেশি পর্যায়ে উন্নীত করতে চাই। শুধু সংখ্যা বাড়ানোই নয়, আমরা তাদের ধাত্রীবিদ্যায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেব, যাতে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য সংক্রান্ত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হয়। এছাড়া বিশেষ অঞ্চল– যেমন হাওর, চর, উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় প্রতি ১৫০০ থেকে ২০০০ জন মানুষের জন্য একটি করে নতুন ক্লিনিক স্থাপন করার লক্ষ্য নিয়েছি।
কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের (সিএইচসিপি) সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল কনসেপ্ট হলো প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শমূলক সেবা দেওয়া। এখানে বড় কোনো ওষুধ থাকে নাÍঅ্যান্টিবায়োটিক নেই। সাধারণত প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন বা এন্টারসিড জাতীয় কিছু ওষুধ দিয়েই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের সেবার ব্যবস্থা রয়েছে, আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী সিএইচসিপিরা নিরাপদভাবে স্বাভাবিক ডেলিভারি করাতে পারেন। তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক মানেই হলো কমিউনিটি-ভিত্তিক সেবা। তাই সম্প্রতি ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট) নিয়োগের যে প্রস্তাব আসছে, আমরা সেটার বিরোধিতা করছি। কারণ ম্যাটসরা মূলত ডাক্তারদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকে তো কোনো ডাক্তার নেই। ফলে তারা এখানে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবেন না। তাছাড়া তাদের বেশিরভাগই ওই এলাকার স্থানীয় নন। অথচ আমরা চাই যে প্রতিটি ক্লিনিক পরিচালনা করবেন স্থানীয় নারী সহকর্মীরা, যারা কমিউনিটির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত। স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে মোট ১৪ হাজার ৪৬৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিটি ক্লিনিকে একজন সিএইচসিপির পাশাপাশি স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী সপ্তাহে দুই দিন সেবা দিয়ে থাকেন। প্রতিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালিত হয় ১৩ থেকে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিউনিটি গ্রুপের মাধ্যমে। বর্তমানে দেশে সিএইচসিপির সংখ্যা ১৩ হাজার ৯২৩ জন।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.