• মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২৭ পূর্বাহ্ন

আইনি নোটিশ : আইনি বিধিবিধানে কমন ল’ কান্ট্রির আওতাভুক্ত

প্রভাত রিপোর্ট / ৫০ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: যেকোনও ব্যক্তি তার বক্তব্য বা দাবির বিষয়টি আইনি নোটিশ তথা লিগ্যাল নোটিশের মাধ্যমে অপর কোনও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকারের কাছে তুলে ধরতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রেই এই আইনি নোটিশের বিষয়টি কারও কাছে আতঙ্কের, আবার কারও কাছে উপহাসের বিষয় হয়ে ওঠে। নোটিশের আইনগত ভিত্তি কিংবা দাবির স্পষ্টতার ওপরেই নির্ভর করছে—নোটিশটির কার্যকারিতা কতদূর পর্যন্ত গড়াবে। তবে নোটিশের মাধ্যমে কাউকে হয়রানি বা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়ার বিষয়টিও যেন এখন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনজীবী বা কেউ মনে করলে নোটিশ দিতেই পারেন। কিন্তু সেটা যেন হয়রানি বা গুরুত্বহীন বা অসত্য বিষয়ে না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি।
আইনি নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি ‘প্রি-অ্যাকশন প্রোটকল’-এর ভিত্তি বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাইজুল্লাহ ফয়েজ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কমন ল’ কান্ট্রিগুলোতে প্রি-অ্যাকশন প্রোটকলের অংশ হিসেবে এই আইনি নোটিশের উদ্ভব। অর্থাৎ যে কেউ কারও বিরুদ্ধে কোনও মামলা করার বিষয়ে সেটি নোটিশের মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানাতেই এই নোটিশ দিয়ে থাকেন। আমরাও আইনি বিধিবিধানে কমন ল’ কান্ট্রির আওতাভুক্ত। ‘যেকোনও ব্যক্তি বা তার পক্ষে কোনও আইনজীবী আইনি নোটিশ পাঠাতেই পারেন। কিন্তু নোটিশের আসল উদ্দেশ্য কী সেই বিষয়টির ওপর নোটিশের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করছে’ বলে মনে করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
আইনি নোটিশ পাঠানোর গুরুত্ব তুলে ধরে আইনজীবী ফাইজুল্লাহ ফয়েজ বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনি নোটিশ পাঠানো বাধ্যতামূলক। যেমন- চেকের মামলা, আরবিট্রেশন মামলা প্রভৃতি। সাধারণভাবে নোটিশ পাঠানোর কোনও আইনি ভিত্তি নেই। তারপরও আমরা নোটিশ পাঠাই কোনও আইনি প্রক্রিয়া শুরুর আগে, কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার আগে মামলা করার বিষয়টি এড়ানোর জন্য।’
গুণগত ভিত্তি না থাকলে সেসব আইনি নোটিশকে বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মতো রাষ্ট্রপক্ষও গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না বলে মন্তব্য করেছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আইনি নোটিশের সঠিক কোনও আইনি ভিত্তি নেই। ব্যক্তি পর্যায় ছাড়াও সরকারের কাছে কোনও বক্তব্য জানার থাকলে তখন নোটিশ দেওয়া হয়। সে নোটিশের জবাব না পেলে তখন মামলা করার (বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে) সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু এখন দেখছি, কোনও গুরুত্ব ছাড়াই যে কেউ এসব নোটিশ পাঠাচ্ছেন।’
বিভিন্ন বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানোর উদাহরণ রয়েছে অনেক। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ফেনী নদী থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পানি সরবরাহ বন্ধের দাবিতে গত ১৮ মে ১৪ দলীয় জোটের বাকি দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা চেয়ে, গত ১৭ আগস্ট নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে ‘জৈব বিবর্তন’ তত্ত্ব বাদ দিতে, গত ১৮ আগস্ট এজাহারভুক্ত সব পুলিশ অফিসারকে সাময়িক বরখাস্ত চাওয়াসহ বিভিন্ন সময়ে এসব আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। তবে নোটিশের জবাব না পেলেও রিট দায়েরের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত এসব নোটিশের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কোনও রিট দায়ের করা হয়নি।
ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, ‘আমার মনে হয় মূলত সংবাদের শিরোনাম হওয়ার জন্য অনেকে এসব নোটিশ পাঠাচ্ছেন। কিছু দিন আগে এমন একটি নোটিশ পেয়েছি, যার নাম বলছি না। সেই নোটিশে থাকা তথ্যগুলো দেখলাম একেবারেই মিথ্যা আর ভুলে ভরা। এসব মূলত (নোটিশ পাঠানো) পাবলিসিটির জন্য করেছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) এমন নোটিশকে কখনও গুরুত্বের সঙ্গে নিই না। তবে যেসব নোটিশে আইনগত প্রশ্ন বা ঘটনাগত বিষয়ে ভাববার মতো গভীরতা থাকে, আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) অবশ্যই সেসব নোটিশকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে থাকি।’
আইনি নোটিশ পাঠানোর বিষয়ে কোনও নীতিমালা বা নির্দেশনা থাকার প্রয়োজন রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটাতে সংস্কারের কিছু নেই। কোনও আইনজীবী বা কেউ মনে করলে নোটিশ দিতেই পারেন। কিন্তু সেটা যেন হয়রানি বা গুরুত্বহীন বা অসত্য বিষয়ে না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি।’
আইনজীবীরা কোনও বিষয়ে কোনও অসত্য তথ্য-হয়রানি-হুমকি বা অবৈধ কিছু অর্জনের উদ্দেশ্যে নোটিশ দিলে, সেটি বার কাউন্সিলের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। এজন্য বার কাউন্সিলের ক্যাননস অ্যান্ড কনডাক্ট আপডেটের মাধ্যমে করা যেতে পারে। তবে পৃথক কোনও নীতিমালার প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন আইনজীবী ফাইজুল্লাহ ফয়েজ।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও