মো. হাবিবুর রহমান, ডেমরা : ডেমরায় রাজাখালীবাসীর উপর অতর্কিত হামলা চালানোর ঘটনায় জড়িত ডেমরা পুলিশ লাইনের সদস্যদের শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থাসহ চাকুরিচ্যুত করা হবে বলে এলাকাবাসীদের জানিয়েছেন ওই পুলিশ লাইন ইনচার্জ ও উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি, পি ও এম-পূর্ব) কাজী নুসরাত এদিব লুনা। বৃহস্পতিবার রাতে লাঠিসোটা, এসএস পাইপ ও লোহার রড দিয়ে হামলার পর এলাকাবাসীর সঙ্গে বৈঠক শেষে ওই রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ডিসি নুসরাত ভুক্তভোগীদের আশ্বস্ত করে এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. আকরাম ও ডেমরা থানার ওসি মো. মাহমুদুর রহমানসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা। তবে ১০ বেশি ভাড়া নিয়ে অটোরিকশা চালকের সঙ্গে পুলিশের বাগবিতন্ডাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর ওপর গত বৃহস্পতিবার রাতে অতর্কিত হামলা চালানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবি জানিয়েছেন আহত ভুক্তভোগীরা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সূত্রপাত হয় এলাকাবাসীর উপর হামলার ঘটনা। প্রথমে ডেমরা পুলিশ লাইনের সামনে বালু নদের পাড় থেকে অটোরিকশাযোগে ষ্টাফ কোয়ার্টার যাওয়ার জন্য এক অটোচালকের সঙ্গে ৫০ টাকা ভাড়া ঠিক করেন এক পুলিশ। এ সময় আরেক পুলিশ সদস্য এসে পড়ায় ১০ টাকা ভাড়া বেশি চান ওই অটোচালক। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দুই পুলিশ সদস্য চালককে অকথ্য ভাষায় মা-বোন তুলে গালাগালি করায় উত্তেজিত হন চালক। তাদের সঙ্গে বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে পাশে অটোচালক আমজাদ এগিয়ে আসলেও দুই চালকের সঙ্গেই বাগবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয় পুলিশের।
আরও জানা যায়, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সদস্যরা সিভিল ড্রেসে লাঠিসোটা, রড ও এসএস পাইপ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে নির্দোশ ও নিরিহ এলাকাবাসীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের বেধড়ক মারধরে বয়স্ক নারী ও পুরুষ সহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যরা আদিল ষ্টোর নামে একটি দোকানের ক্যাশবাক্স থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ও পাশের ফার্নিচারের দোকান থেকে ২ টি এন্ড্রয়েট মোবাইল নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন দোকান মালিক আমির হোসেন ও মো. রাজু আহম্মেদ। এদিকে মারধরের এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীদের ডাক চিৎকারে এলাকাবাসীরা এগিয়ে আসলে তাদের ওপরেও হামলা চালায় পুলিশ সদস্যরা। এ সময় পুলিশ সদস্যরা এলাকার ৮ থেকে ১০ টি দোকান ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় পুলিশ প্রায় পৌনে ১ ঘন্টা সন্ত্রাসী কায়দায় সিনেমা স্টাইলে তান্ডব চালানোর পর তাদের পুলিশ সদস্যরা ব্যারাকে ফিরে যায়। এ সময় নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে ও এলাবাসীরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসলে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা এলাকাবাসীদের গুম ও প্রাণ নাশের হুমকি দেয় বলে জানায় এলাকাবাসী। এদিকে খবর পেয়ে ডেমরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। প্রায় ১ ঘন্টা চেষ্টার পর ডেমরা থানা পুলিশ উত্তেজিত বাসিন্দাদের নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা জানায়, ঘটনা ঘটল অটোচালকদের সঙ্গে, পুলিশ জুলুম করলো নিরিহ এলাকাবাসীদের। হঠাৎ করেই ডেমরা পুলিশ লাইনের সদস্যরা সিভিলে আমাদের অতর্কিত হামলা চালিয়ে অন্তত ২০ জনকে আহত করে। এ সময় পুলিশরা কারও মাথা ফাটিয়ে ফেলে, কাউকে আবার পিটিয়ে রক্তাক্ত ও নীলাফুলা জখম করে। গুরুতর আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার ওসি মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, হামলার বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক ও হৃদয় বিদারক। তবে এ ঘটনায় খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীদের বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করতে পেরেছি এটিই আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া। এক্ষেত্রে এলাকাবাসীর ওপর হামলার ঘটনায় যারা জড়িত ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাই তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জরুরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ডেমরা পুলিশ লাইন ইনচার্জ ও উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি, পিওএম-পূর্ব) কাজী নুসরাত এদিব লুনা বলেন-হামলার এ হৃদয়বিদারক ঘটনায় আমরা এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। ইতিমধ্যে জড়িতদের শনাক্তের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সঠিত তদন্তের ভিত্তিতে উস্কনিদাতা ও জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে চাকুরিচ্যুত করা হবে।