• সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৭ অপরাহ্ন

পুলিশ ও বুয়েট শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ১০

প্রভাত রিপোর্ট / ৪১ বার
আপডেট : বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: পূর্বঘোষিত ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাওয়ার পথে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় কমপক্ষে ১০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ সংঘর্ষের পর রাজধানীর শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। কাছেই হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান নেয় পুলিশ। দুপক্ষের অবস্থানে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ‘আউট’ গেট-এ অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। কিছুটা দূরে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায় পুলিশকে।
অপরদিকে আন্দোলনরত প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চারজন উপদেষ্টাকে নিয়ে একটি কমিটির গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বুধবার (২৭ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
ফাওজুল কবির বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বুয়েট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে একটা কথা (আন্দোলন) আছে। সেজন্য একটা কমিটি হয়েছে। এ কমিটিতে তিনি নিজে (উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান) ছাড়াও উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আদিলুর রহমান খান (গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা) ও অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা) আছেন। কমিটিতে প্রকৌশলীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা থাকবেন।’ তিনি বলেন, ‘এটার সূত্রপাত হয় নেসকোতে (নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি) একটা ঘটনা (একজন প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকি) ঘটেছিল, সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে। শাস্তিমূলকভাবে বদলি করা হয়েছে।’
প্রকৌশলীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কমিটি গঠন হয়ে যাওয়ার পর কমিটি শিগগির বসবে বলেও জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা।
এদিকে কমিটি প্রত্যাখ্যান, ৫ দাবি ঘোষণা করে অনড় রয়েছেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জুবায়ের আহমেদ এ কথা জানান। এ সময় তিনি পাঁচটি দাবি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জুবায়ের আহমেদ বলেন, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে আন্দোলনকারীদের সামনে এসে ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে এবং জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিতে আমাদের প্রতিনিধিত্বের অনুপস্থিতি থাকায় আমরা সেটিকে প্রত্যাখ্যান করলাম। তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিসহ প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে কমিটি সংস্কার করতে হবে। পেশ করা তিন দফা দাবিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেনে নিয়ে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান এবং সৈয়দ রিজওয়ানা হাসানকে আজকেই এর নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, পুলিশের হামলায় আহত সব শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সব শিক্ষার্থীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ দিয়ে এই যৌক্তিক আন্দোলনে আর কোনো প্রকার হামলা করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং চাকরিচ্যুত করতে হবে।এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে দুপুর দেড়টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হন তারা। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানেগ্যাস ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। তখন ১০জন শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো- ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে প্রকৌশলী লিখতে না দেওয়া, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাউকে পদোন্নতি দিয়ে নবম গ্রেডে উন্নীত না করা এবং দশম গ্রেডের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্নাতক প্রকৌশলীদের সুযোগ দেয়া।
পুলিশের লাঠিচার্জ-টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে কমপক্ষে ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যমুনার সামনে বসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যাওয়ার পথেই পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। লাঠিচার্জ করে আমাদের ভাইদের আহত করেছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের পাথর ও ইট নিক্ষেপে বেশ কয়েকজন পুলিশও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে দুপুর ১টার পর বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।
এদিকে আন্দোলনরত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের দাবি-দাওয়ার প্রস্তাব দিলে সচিব কমিটি সমস্যা সমাধান করে দেবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। বুধবার (২৭ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব এ কথা জানান।
তিন দফা দাবিতে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক শাহবাগ মোড় পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ করে রেখেছিলেন বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়ায় আজও (২৭ আগস্ট) সারাদেশের প্রকৌশলীদের নিয়ে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। ইতোমধ্যে আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ে সচিব বলেন, ‘তারা (আন্দোলনরত প্রকৌশলী) যদি তাদের দাবিগুলো স্মারকলিপি আকারে দেন, এগুলো নিয়ে তারা অনেক রিসার্চ করেছেন, তাদের কাছে আইন-কানুন আছে, এগুলো যদি অ্যাটাচ করে দেন, আমরা অল্প সময়ে এটা সমাধান করে দিতে পারব। আমাদের কাছে কোনো আবেদন আসেনি, আমরা বিষয়টি শুনেছি। এখন আপনারা আমার কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেছেন।’


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও