আজ
|| ২৭শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১১ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ৪ঠা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
চবিতে সংঘর্ষ আহত ২ শতাধিক
প্রকাশের তারিখঃ ৩১ আগস্ট, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের সহায়তা না পাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন আহত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন।
রবিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষ বাধলে প্রশাসনের থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না পেয়ে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওতে উপ-উপাচার্য ড. মো. কামাল উদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, আমি কমপারেটিভলি ভালো আছি। আমার ছাত্ররা সবচেয়ে বেশি আহত। আমরা এখন পর্যন্ত আর্মি-বিজিবির কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। প্রত্যেকটা ছাত্রকে তারা দা দিয়ে কোপাচ্ছে। এটা কোন জগতে আছি আমরা? আপনারা আমাদের ছাত্রদের উদ্ধার করুন। আমাদের প্রক্টর, প্রো-ভিসি (অ্যাকাডেমিক) আহত, আমাদের প্রায় সব শিক্ষক-ছাত্র আহত। আমরা মেডিকেলে জায়গা দিতে পারছি না। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হেলমেট পরে আমাদের ছাত্রদের মারতেছে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে কথা বলেছি, কিন্তু এখনো আমাদের পাশে কেউ নেই।
এসময় কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা তোমরা শান্ত হও। এলাকাবাসী আপনারা শান্ত হোন। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বছর ধরে আছি, এই গ্রামের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। অন্য একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটেছে। এই গেমে কেউ হাত দিয়েন না। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা শান্ত হও। আমরা তোমাদের পাশে আছি। এ ঘটনার বিচার হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মাঝে দ্বিতীয় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে দুই দিনে আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক বলে চবি মেডিক্যাল সেন্টার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এরপর চবি এলাকায়
১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাকসু) নির্বাচন ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত হন বেশ কয়েকজন।
অপরদিকে তিন দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ করে রাখেন। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কম্পিøট শাটডাউন অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, রবিবার (৩১ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। তা থেমে থেমে চলে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল আছে। ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে সেনাবাহিনীসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ। রবিবারের সংঘর্ষে কমপক্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়ে চবি মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও প্রক্টরও রয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দুদিনে আহতের সংখ্যা দেড় শতাধিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ শেষে অভিযানে নেমেছে যৌথবাহিনী। রবিবার (৩১ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করেছে। এসময় ক্যাম্পাসের আশপাশে যৌথবাহিনীর অন্তত ১০টি গাড়ি প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
জানা যায়, দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত টানা সংঘর্ষ চললেও এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। বিকেল সাড়ে ৩টায় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন সই করা বিজ্ঞপ্তিতে ১৪৪ ধারা চালু হলে এর প্রায় ৩০ মিনিট পরে ঘটনাস্থলে আসেন যৌথবাহিনীর সদস্যরা।
এর আগে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জননিরাপত্তা ও শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট থেকে পূর্ব-দক্ষিণ সীমান্ত পর্যন্ত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ৩১ আগস্ট বিকেল ৩টা থেকে আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টা পর্যন্ত এটি কার্যকর থাকবে। এ সময়ে উন্মুক্ত স্থানে সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, গণজমায়েত, অস্ত্র বহন ও পাঁচজনের বেশি লোকের একত্রিত হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা যায়, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রোভিসি-পক্টরসহ ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের অধিকাংশই দেশীয় অস্ত্রের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত ও রক্তাক্ত। শনিবার (৩০ আগস্ট) রাতে এক ছাত্রীকে দারোয়ান কর্তৃক মারধরের অভিযোগকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী-স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। রবিবার সকাল থেকে ফের সংঘর্ষে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।
চবি মেডিক্যাল সেন্টারে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফারহানা বলেন, ‘আজ (রবিবার) সকাল থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়ে চবি মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কমপক্ষে ২৫ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমার কর্মজীবনে এত সংখ্যক শিক্ষার্থী একসঙ্গে হতাহতের ঘটনা ঘটতে দেখিনি।’ এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন।
রবিবার বিকালে এক অফিস আদেশে বলা হয়, সকাল আনুমানিক সাড়ে ১১টায় স্থানীয় জনসাধারণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরস্পর মুখোমুখি ও আক্রমণাত্মক হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে তারা আক্রমণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন, সম্পদ রক্ষা ও শান্তি-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্ব দিকে রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পাশে রবিবার দুপুর ২টা থেকে ১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করা হলো।
ওই সময়ে উল্লিখিত এলাকায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ-মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সব ধরনের দেশি অস্ত্র বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির একসঙ্গে অবস্থান কিংবা চলাফেরা নিষিদ্ধ।
এর আগে শনিবার (৩০ আগস্ট) রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে বাসার দারোয়ান কর্তৃক মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, যা রাতভর চলতে থাকে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা রামদা দিয়ে কুপিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে ছাঁদ থেকে নিচে ফেলে দিয়েছে। একই সময়ে আরেকজন শিক্ষার্থীকে ধানক্ষেতে কোপাতে দেখা গেছে। রবিবার (৩১ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে এবং আহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এরই মধ্যে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। তবে এখনো কোনো বাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়নি।
একাধিক ভিডিও ফুটেজে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
আহতদের একজন হলেন রাজিউর রহমান রাজু, তিনি ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী। বাকি দুইজনের নাম ও বিভাগ এখনো জানা যায়নি, তবে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় মারধর করে মেরে ফেলছে সন্ত্রাসীরা। আমরা রাষ্ট্রের সহায়তা চাইছি অনবরত। কিন্তু তাঁরা আমাদের কথা কানে তুলছে না। এসব হামলা সাধারণ মানুষের কাজ নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব হামলা চালানো হচ্ছে।
রাকসু নির্বাচন ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত বেশ কয়েকজন: রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ছাত্রদল, শিবির ও ছাত্র সমন্বয়করাও রয়েছেন। সকাল ৯টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ সেশনের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে রাকসু কোষাধ্যক্ষ ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রদল। এরপর তারা সোয়া ১০টার দিকে মনোনয়নপত্র বিতরণ বন্ধ রাখতে বলেন। এর প্রতিবাদ করে ছাত্রশিবির, সমন্বয়ক ও অন্যান্য প্রার্থীরা। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে আহতদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা সেতাউর রহমান জানান, মনোনয়নপত্র বিতরণ বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিতরণ শুরু হবে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, চলতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র ও আবাসিক হলের কাগজপত্র প্রস্তুত না হওয়ায় ঘোষিত তফসিলে তাদের ভোটার করা সম্ভব নয়। গত বৃহস্পতিবার ২৮টি পদে ছাত্রদল মনোনয়ন তুললেও তারা ভোট পেছানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। সে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ভোট ১০ দিন পিছিয়ে দেয়। এছাড়া অন্তত সাড়ে ৫০০ শিক্ষার্থী বিভিন্ন পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
তিন দফা দাবিতে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহের জব্বারের মোড়ে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এ আন্দোলনের ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনটি এক ঘণ্টা আটকে রাখার পর ছাড়ে শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনটি আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ওসি মো. আক্তার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়েছে। এতে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছে, এই আন্দোলন কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদ-এর ব্যানারে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের মূল দাবিগুলো হল-কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দশম গ্রেডের পদগুলো শুধু কৃষিবিদদের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এছাড়া কোনো ডিপ্লোমাধারীরা যেন নামের পাশে ‘কৃষিবিদ’ পদবি ব্যবহার করতে না পারেন সে বিষয়েও তারা সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা তাদের পেশাগত সম্মান এবং অধিকার রক্ষা করতে চান।
রুবেল আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা পাঁচ বছর পড়াশোনা করে এই ডিগ্রি অর্জন করি। অথচ ডিপ্লোমাধারীরা যদি আমাদের মতোই পদবি ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে আমাদের এই ডিগ্রির গুরুত্ব কোথায়? আমরা চাই সরকার দ্রুত আমাদের দাবিগুলো মেনে নেক।
সুমাইয়া আক্তার নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা চাই না সাধারণ মানুষের কোনো দুর্ভোগ হোক। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো আদায়ের জন্য এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় আমাদের কাছে নেই। সরকার দাবি না মানলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
কমপ্লিট শাটডাউনে বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, ক্যাম্পাস ফাঁকা: তিন দফা দাবিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) তৃতীয় দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচির কারণে বুয়েটে সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। রবিবার ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। কোথাও ক্লাস হচ্ছে না। বিভাগগুলোতে শিক্ষার্থীরা আসেনি। তবে প্রশাসনিক ভবনে জরুরি কাজ চলছে। গত বুধবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন। ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার এ কর্মসূচি শুরু হয়। বুয়েটে বৃহস্পতি ও শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। তবে বৃহস্পতিবার শুধু পরীক্ষা হয়। সেদিন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করেন। গতকাল শনিবার তারা দ্বিতীয় দিনের মতো এ কর্মসূচি পালন করেন।
প্রশাসনিক ভবনের এক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করেছেন। কর্মকর্তারা নিয়মিত অফিসে আসছেন। তবে কাজের চাপ কম।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো নবম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী পদে কেবল পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ ও ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার করা। দশম গ্রেডে শুধু ডিপ্লোমাধারীরা আবেদন করতে পারেন, সেখানে যেন উচ্চ ডিগ্রিধারীরাও আবেদন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা। শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং যাঁরা সম্পন্ন করবেন, তাঁরাই যেন প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) লিখতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.