• শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
মাত্র ১২০ টাকা আবেদন ফিতে স্বপ্নের সরকারি চাকরি পেলেন পিরোজপুরের ১৫ জন তরুণ রাকসু ও চাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্যাতন-দুর্ভোগ পেরিয়ে লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন ১৭৬ বাংলাদেশি আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক মতভিন্নতার শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণ আলাদা করল সরকার একুশে বইমেলা ১৭ ডিসেম্বর থেকে একমাস সংসদ ভোটের ৭০ শতাংশ উপকরণ কেনা শেষ মানবাধিকার উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করলো ইইউ প্রতিনিধিদল রাজনীতিতে উত্তাপ, আলোচনার টেবিল থেকে রাজপথে ইসলামি সাত দল আলোচনা ছাড়া কর্মসূচি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয় : মির্জা ফখরুল
বাকৃবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলা

হল ত্যাগ না করে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি পেশ

প্রভাত রিপোর্ট / ২৯ বার
আপডেট : সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফারুক আহমেদ, ময়মনসিংহ: একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্তের প্িিরতবাদে সভাস্থলে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে রবিবার দুপুর ১টা থেকে বাকৃবি উপাচার্যসহ দুই শতাধিক শিক্ষক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এর মাঝেই রাত ৮টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বহিরাগতরা। এতে নারীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এসময় দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে আসেন শিক্ষকরা। বহিরাগতদের হামলা চলাকালে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।
বাকৃবির হেলথ কেয়ার সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সৈয়দ জারজিস আহমেদ জানান, হামলায় চারজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে ৯টায় অনলাইনে জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কোনো অবস্থাতেই হল ছাড়বেন না বলে তাৎক্ষণিকভাবে জানায়। এদিকে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে শুরু করেন। সকাল ৯টার আগেই ছাত্রীদের হলগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। তবে ছাত্ররা সবাই এখনও হল ছাড়েনি। সকাল ৯টার কিছু পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেআর মার্কেটের সামনে তারা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ প্রত্যাখান করেছেন বেশিরভাগ ছাত্র। সোমবার (সকালে নারী শিক্ষার্থীদের একাংশ হল ছাড়লেও বেশিরভাগ ছাত্রই হল ছাড়েননি। বরং বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধের নোটিশ প্রত্যাহার এবং বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কে আর মার্কেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন।
পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন আমতলায় প্রেস ব্রিফিং করেন। এসময় তারা ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- অবৈধভাবে হল ভেকেন্টের নির্দেশনা দুপুর ২টার মধ্যে প্রত্যাহার করে আদেশ তুলে নিতে হবে, হলগুলোতে চলমান সব ধরনের সুবিধা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে হবে, পশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকদের মদদে বহিরাগত দিয়ে হামলার দায় প্রক্টরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ককটেল বিস্ফোরণ, লাইব্রেরি ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং দেশীয় অস্ত্র দ্বারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্থার ঘটনার জন্য উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং গত ১ মাস ধরে চলমান যে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলন করে আসছি, সেই একক ডিগ্রি অবিলম্বে প্রদান করতে হবে। তিনটি ভিন্ন ডিগ্রি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী এহসানুল হক হিমেল জানান, গতকাল ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সামনে বহিরাগতরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। এরপর শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে হল ত্যাগের নির্দেশ দিচ্ছেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে প্রশাসন যে রকম আচরণ করেছে, ঠিক সেই রকম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে আচরণ করছে। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বহিরাগতদের দ্বারা আমাদের মারধর ও ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। আমরা এখন নিরাপদ নই, প্রবল নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
পশু পালন অনুষদের শিক্ষার্থী ফারিছা হক বলেন,আমাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করেই প্রশাসন হল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আমরা পিছিয়ে যাওয়ার জন্য আসিনি, আমরা পালিয়ে যাওয়ার জন্য আসিনি। আমাদের ওপর যে হামলা করা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এই ৬ দফা দাবি দেওয়া হয়েছে সে দাবিগুলো মেনে নেওয়া হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা আড়াই শতাধিক শিক্ষক আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছি। শতভাগ দাবি মেনে নেওয়ার পরেও কেন তারা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করলো, সেটি আমার প্রশ্ন। আট ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর শিক্ষকেরা প্যানিকড ও ট্রমায় পড়ে যান। পরে কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা, নিরাপত্তারক্ষীরা গেইট ভেঙে শিক্ষকদের বের করতে সাহায্য করেন।
বহিরাগতদের হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যে দাবি করছে- শিক্ষকেরা বহিরাগত দিয়ে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে, এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। আমরা বাইরের কাউকে বলিনি ক্যাম্পাসে আসতে, আমরা কেন বলব? ছাত্রছাত্রীরা তো আমাদের ছেলে-মেয়ের মতো। তাদের জন্যই জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে বিষয়টি সমাধানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আমি অবশ্যই কমিটি করব।
উপাচার্যের ক্ষমা চাওয়ার দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কেন ক্ষমা চাইব? আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। শিক্ষার্থীদের শতভাগ দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও