প্রভাত রিপোর্ট: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ বইছে। শেষ দিনের প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা। সবার হাতে হাতে ঘুরছে প্রচারপত্র-পোস্টার।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ক্যাম্পাসের কলা ভবন, মল চত্বর, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ব্যবসা অনুষদ, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), হলপাড়া- সব জায়গায় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা ভোটারদের নজর কাড়তে ব্যস্ত আছেন।
ভোটের তফশিল অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারের জন্য শেষ দিন ছিলো রবিবার। তাই প্রার্থী ও সমর্থকেরা সরাসরি ভোটারদের হাতে তাদের প্রচারপত্র বা লিফলেট ও পোস্টার পৌঁছে দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে দোয়া ও সমর্থন চাইছেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনের ভোট নেয়া হবে। এবার মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন বর্তমান শিক্ষার্থী। যার মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯ জন।
উত্তাপ ছড়ানো ডাকসু নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর)। ভোটগ্রহণের বাকি মাত্র একদিন। শেষ মুহূর্তে সামনে আসছে নানা সমীকরণ। একের পর এক প্রকাশ পাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনের প্রাক-নির্বাচনী জরিপ। তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে প্রার্থীদের সবাই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রীদের ভোট বেশি পাবেন কে; কোন হলের ভোট কার পক্ষে যাবে; কার দিকে ঝুঁকবেন জগন্নাথ হলের বিপুলসংখ্যক ভোটার, এমন নানা প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে ডাকসু নির্বাচনের মাত্র একদিন বাকি। প্রচার-প্রচারণা শেষ দিনেও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ভিপি পদে কে এগিয়ে, জিএস পদেই বা কার জয়ের সম্ভাবনা বেশি, তা নিয়ে হিসাব কষছেন সবাই। প্যানেলগুলোও নিজেদের প্রার্থীদের কার অবস্থান কেমন, তা বিশ্লেষণে ব্যস্ত।
প্রচারণার শেষ দিনেও সবার নজর এখন ছাত্রীদের ভোটের দিকে। কারণ ডাকসুতে এবার মোট ভোটারের ৪৭ দশমিক ৫৫ শতাংশই ছাত্রী ভোটার। ফলে উত্তাপ ছড়ানো এ নির্বাচনে বড় পদগুলোর প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন ছাত্রীরাই।
ডাকসুতে এবার মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এরমধ্যে ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯টি, যা মোট ভোটারের ৪৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ছাত্রীদের পাঁচটি আবাসিক হলের মধ্যে শুধু রোকেয়া হলেই ৫ হাজার ৬৬৫ ভোট।
এছাড়া বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ২ হাজার ১১০টি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২ হাজার ৬৪৫, শামসুন নাহার হলে ৪ হাজার ৯৬ এবং কবি সুফিয়া কামাল হলে ভোটার ৪ হাজার ৪৪৩টি।
ছাত্রীদের আবাসিক হলগুলোতে প্রবেশে বিধি-নিষেধ রয়েছে। ফলে পুরুষ প্রার্থীরা চাইলেই যখন-তখন প্রবেশ করতে পারছেন না। তবে প্রত্যেক প্যানেলকে প্রজেকশন মিটিং নামে একদিন করে প্রচারণা চালানোর অনুমতি রয়েছে। ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা সব কয়টি হলে প্রজেকশন মিটিং করেছেন। ছাত্রীদের জন্য তারা কী করবেন, সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে একটি জরিপ চালিয়েছে ঢাবি রিসার্চ সোসাইটি। ক্লাবটির পক্ষ থেকে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাবি সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জরিপের তথ্য জানায় ঢাবির এই ক্লাবটি।
মিশ্র গবেষণা পদ্ধতি ও বিভিন্ন প্রশ্নের আলোকে জরিপ কার্য সম্পন্ন করা হয়। গত ২৯ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯০০ ভোটারের তথ্যের আলোকে জরিপটি হয়।
জরিপে দেখা যায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ৯০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০৪ জন নারী ও ৩৯৬ জন পুরুষ শিক্ষার্থী। যেখানে ৪৯৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থী ও ৪০৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
নির্বাচনের তফশিল সম্পর্কে ধারণা আছে ৭০২ শিক্ষার্থীর, আংশিক অবগত আছেন ১৮৯, কিন্তু ৯ জন শিক্ষার্থীর তফশিল সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। সাংবিধানিক ধারণা রাখে ২৩০ জন শিক্ষার্থী, ধারণা রাখে না ২৪৩ জন শিক্ষার্থী ও সামান্য ধারণা রাখে ৪০৩ জন শিক্ষার্থী।
৮৫ জন শিক্ষার্থী মনে করেন ডাকসুর সংবিধান বাস্তবায়িত হবে, ২৯৬ জন মনে করেন আংশিক বাস্তবায়িত হচ্ছে, ১৬১ জন মনে করেন একেবারেই বাস্তবায়িত হচ্ছে না ও ৩৫৮ জন শিক্ষার্থী কোনো সুস্পষ্ট মতামত প্রকাশ করেননি।
বয়সসীমা নিয়ে ৫৯৮ জন শিক্ষার্থী মনে করেন প্রার্থীর বয়স ২০-২৫ হওয়া উচিত, ১৫৩ জন শিক্ষার্থী মনে করেন ২৬-৩০ হওয়া উচিত ও ১১৯ শিক্ষার্থী মনে করেন বয়সসীমা থাকা উচিত নয়। ভোট প্রদানে সিদ্ধান্তহীনতায় আছে ১১৮ জন শিক্ষার্থী, না দেওয়ার পক্ষে আছেন ২০ জন শিক্ষার্থী ও ভোট প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ৭৬৩ জন শিক্ষার্থী।
কোন প্যানেল বেশি ভোট পেতে পারে? এই ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৩১০ জন শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিতে ইচ্ছুক, শিবির সমর্থিত প্যানেলে ১৬৭ জন ও ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে ১৩১ জন।
ভোট দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন ১০২ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে তিনটি প্রধান কারণ হলো : রাজনৈতিক হতাশা, অনাস্থা ও ভয়/চাপ। এ থেকে বোঝা যায়, কিছু শিক্ষার্থীর নির্বাচনের প্রতি বিভিন্ন কারণে আস্থা নেই এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ন্যায়পরায়ণতা ও ব্যক্তিত্বের আলোকে ভোট দেবেন ৫০৪ জন শিক্ষার্থী ও প্রার্থীর নেতৃত্বের দক্ষতার আলোকে ভোট দেবেন ২৭৩ জন শিক্ষার্থী। ৩৫৩ জন শিক্ষার্থী মনে করেন আগামীতে ডাকসু হবে, ৩৬৮ জন শিক্ষার্থী আশাবাদী ও ১৭৯ জন মনে করেন আগামীতে ডাকসু হবে না।
জরিপে দেখা যায়, ২৩৯ জন শিক্ষার্থী মনে করেন ভোট স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, ২০৬ জন মনে করেন আংশিক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, ২৬৭ জন শিক্ষার্থী নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন ও ১৭৪ জন শিক্ষার্থী মতামত দেয়নি।
৯০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৪৫ জন শিক্ষার্থী মনে করেন নারী প্রার্থীরা সাইবার বুলিংয়ের স্বীকার হচ্ছে, ২২১ জন মনে করেন অনেক পরিমাণে হচ্ছে ও ১৬৬ জন কোনো মতামত দেয়নি।
নির্বাচনকালীন ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ে জরিপে দেখা যায়, ৬৩৩ জন শিক্ষার্থী মনে করছেন নির্বাচনের সময় ক্যাম্পাসে পরিবেশ অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে, ১৪৯ জন মনে করেন শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকবে ও ৮৯ জন মনে করেন ক্যাম্পাস অনিরাপদ হয়ে উঠবে।
জরিপের গবেষক মো. ফাহিম হাসান মেহেদী বিশ্লেষণে জানায়— প্রথমত, স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি আস্থা বৃদ্ধি ছাত্ররাজনীতিতে একটি নতুন ধারা তৈরি করছে, যা প্রচলিত দলীয় রাজনীতির বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভোট না-দেওয়ার প্রবণতা মূলত আস্থা ও বিশ্বাসের সংকটে নিহিত। যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক করা যায়, তবে এই আস্থাহীনতা কাটানো সম্ভব। তৃতীয়ত, সিদ্ধান্তহীন শিক্ষার্থীদের (ঝরিহম ঠড়ঃবৎ) নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে ‘কিং-মেকার’ ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের ভোট কোন দিকে যাবে, তা শেষ মুহূর্তে ফলাফলকে পাল্টে দিতে পারে।