আজ
|| ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৯শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
গাজীপুরে বিআরটি প্রকল্পের সড়ক অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত
প্রকাশের তারিখঃ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট:দেশের ইতিহাসে রেকর্ড গড়া বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প এখন গাজীপুরবাসীর জন্য দুর্ভোগের প্রতীক। পাঁচ দফায় মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হয়নি, আর সেই সুযোগেই প্রকল্পের সড়ক পরিণত হয়েছে অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানায়। রাতের আঁধার নামলেই এই সড়ক যেন মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের দখলে চলে যায়। তবে রাষ্ট্রের কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচের পর অবশেষে প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার অন্তত সিদ্ধান্ত নিতে হবে জনগণের কথা বিবেচনায়।
গাজীপুর থেকে উত্তরা পর্যন্ত এই পথ একসময় স্বস্তির স্বপ্ন দেখালেও এখন আতঙ্কের আরেক নাম। ছিনতাই, খুনসহ একের পর এক অপরাধে দিশেহারা পথচারীরা বলছেন, গাড়িতে বসে ফোনে কথা বললেও ঝুঁকি থেকে যায়। চলন্ত গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেয় মোবাইল, আবার কেউ গাড়ি থেকে নামলে নির্জন জায়গায় অস্ত্রের মুখে লুটপাট চলে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কের দুই পাশের বস্তি মাদকসেবীদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় তাদের আনাগোনা। মাদকের টাকা জোগাড় করতে ছিনতাই-খুন যেন নিয়মিত ঘটনা। তার সঙ্গে আলোহীন, ফাঁকা স্টেশনগুলো আতঙ্ক বাড়াচ্ছে আরও কয়েকগুণ। শুধু রাতেই নয়, দিনের বেলাতেও চলছে ছিনতাই। বাধা দিলে প্রাণও দিতে হচ্ছে। অথচ চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও এখনো শেষ হয়নি কাজ। বিআরটির অব্যবস্থাপনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে (জিএমপি) বলছে, তারা বারবার সহায়তা চাইলেও কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয়নি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছু এলাকায় সিসিটিভি বসানো হয়েছে, আরও কিছু জায়গায় বসানোর কাজ চলছে। সিসিটিভি চালু হলে অপরাধীদের শনাক্ত করা সহজ হবে।
গাজীপুরবাসীর এই বিষফোড়ার দায় নিতে চায় না সিটি করপোরেশনও। এরই মধ্যে রাষ্ট্রের চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পর অবশেষে অভিভাবকহীন এই প্রকল্পের যৌক্তিকা যাচাইয়ের পুনরায় সিদ্ধান্ত নিতে চায় নির্ধারকরা। বিআরটি প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, সিসিটিভি চালু হবে আরও পরে। যখন নির্মাণ কাজ শেষ হবে, তখন অটোমেটিক সিসিটিভি বসানো হবে।
বিআরটি প্রকল্পের এই ব্যর্থতার কথা অনেক আগেই কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল নগরীর মাস্টারপ্ল্যানের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (ডুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল। তবে কে শোনে কার কথা! এমন বাস্তবতায় নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ইমোশনাল নয়, এবার সিদ্ধান্ত নিতে হবে গাজীপুরবাসীর কথা বিবেচনায়।
ডুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অপচয় না করে যতটুকু সম্ভব এর সদ্ব্যবহার করতে হবে।’
বিআরটি প্রকল্প কেন্দ্রিক নানা অপকর্মের অভিযোগে এরই মধ্যে হাজারের বেশি অপরাধী তালিকা করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.