আজ
|| ২৭শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১১ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ৪ঠা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
যমুনা অভিমুখে প্রাথমিক শিক্ষকরা, পুলিশের জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ
প্রকাশের তারিখঃ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কনসালটেশন কমিটির সুপারিশ করা জাতীয়করণ বঞ্চিত ৫ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে যমুনা অভিমুখে শিক্ষকদের যাত্রায় বাধা দিয়েছে পুলিশ। এসময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও একটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে আন্দোলনকারীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। তারা হাইকোর্ট সংলগ্ন কদম ফোয়ারার সামনে পৌঁছালে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও এক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। পরে আন্দোলনকারীরা পিছিয়ে আবার প্রেস ক্লাবের দিকে চলে যান। প্রাথমিক শিক্ষকরা সোমবার সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন শুরু করেন।
বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষকরা এখানে জড়ো হয়েছেন। এতে হাজারখানেক শিক্ষক অংশ নিয়েছেন।
২০১৩ সালে জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ পড়া প্রায় ৫ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ আন্দোলন চালাচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারখানেক শিক্ষকরা সেখানে জমায়েত হয়েছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি তৎকালীন সরকার সারা দেশের সকল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। তখন সারা দেশে ৩০ হাজারের অধিক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কিছু বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বাদ রেখে ২৬ হাজার ১৯৩ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়।
তারা বলেন, ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয় শাখা থেকে উপসচিব গোপাল চন্দ্র দাস স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ৩য় ধাপে জাতীয়করণযোগ্য বিদ্যালয়সমূহ জেলা যাচাই-বাছাই করে ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে আবশ্যিকভাবে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এরপরে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য একটি চিঠি ইস্যু করা হয়, যার স্মারক নং ০৩.০৭৪.৩৮.০৪৮.০০.০০১.২০১৮-৬৭। এখানে বলা হয়ছে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ তালিকা বহির্ভূত বিদালয়সমূহ/আবেদনসমূহের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সারসংক্ষেপ প্রেরণের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
তারা আরও বলেন, পরবর্তীতে ২০২৫ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কয়েক দফা আন্দোলন করার পর গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়। তবে এখনও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য সুপারিশ করার পরেও জাতীয়করণের কোনো অগ্রগতি নেই।
সাধারণ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো. নওশাদ আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। শত প্রতিকূলতার মাঝেও বিশ্ব দরবারে আজ বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের চিঠি ও কনসালটেশন কমিটির সুপারিশকৃত অনধিক ৫ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জোর দাবি জানাই।
সাধারণ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক মাহবুবা মালা বলেন, জাতীয়করণ না হওয়ায় শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা অন্যের শিশুকে পাঠদান দিলেও আমাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। এমতাবস্থায় শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সাধারণ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক অহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালে সকল বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা হলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অনধিক পাঁচ হাজার জাতীয়করণ বঞ্চিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সুকৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমরা শুধু আশ্বাস পেয়েছি। বাস্তবতার কিছুই পাইনি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্যে প্রধান উপদেষ্টার হয়ক্ষেপ কামনা করছি।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.