• মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ইতিহাসে স্বৈরশাসকদের শেষ পরিণতি কী হয়েছিল হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিচার নিয়ে যা বললো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘আই ডোন্ট কেয়ার’ লেখা ফটোকার্ড পোস্ট, ঢাবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার আটক ৬৭৮ কোটি মানিলন্ডারিংয়ে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড মালিকের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা পীরগঞ্জে বালু উত্তোলনের সংবাদ প্রকাশের পর আর্থিক জরিমানা ও ড্রেজার আটক শীতে খুশকি দূর হবে ৩ ঘরোয়া উপাদানে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সীমান্তে ৪ বাংলাদেশি আটক কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা (এআই) ফোরামে যোগ দিল ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তিতুমীর কলেজ ও আমতলীতে ককটেল বিস্ফোরণ, মেরুল বাড্ডায় বাসে আগুন শাহবাগের ছবির হাটে ককটেল বিস্ফোরণ

দেশে বেকারত্ব আরো বেড়েছে, বিনিয়োগও তেমন বাড়ছে না

প্রভাত রিপোর্ট / ৭৮ বার
আপডেট : রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: দেশে বেকারত্ব আরো বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ ৩০ হাজার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে দেশে শুধু বিদেশি বিনিয়োগ নয়, দেশীয় বিনিয়োগও তেমন বাড়ছে না। অপরদিকে বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি তেমন বাড়ছে না। গত জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৫২ শতাংশ। আগের মাস জুনে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬.৪৯ শতাংশ। জুনের তুলনায় জুলাইয়ে সামান্য কিছুটা প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানির জন্য খোলা এলসি কমেছে ২৫ শতাংশ। একই সঙ্গে কমেছে এলসি নিষ্পত্তিও।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩.৯৭ শতাংশ। তার আগের বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪.২২ শতাংশ। শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধি নয়; সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগও কমেছে। বিদায়ি অর্থবছরে জিডিপির ২২.৪৮ শতাংশ বেসরকারি বিনিয়োগ হয়। তার আগের অর্থবছর যা ছিল ২৩.৫১ শতাংশ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটিও ব্যবসা মন্দারই ফল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত। এই খাতকে পাশ কাটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সরকারের প্রধান কাজ হবে অবিলম্বে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা। আর ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজমান আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা সরাসরি প্রভাব ফেলছে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানের ওপর।
৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর একের পর এক মামলা, কারখানা ভাঙচুর, দখল, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল। সেই সময় ব্যবসায়ীদের একটি অংশ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। তাঁদের বেশির ভাগই এখনো ফেরেননি। তাঁদের শিল্প-কারখানাগুলো যেমন ঝিমিয়ে পড়ছে, তেমনি কর্মীরাও ধুঁকছেন অর্থসংকটসহ নানা সমস্যায়। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় নতুন করে ব্যবসায়ীদের কেউ দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন, যা অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।
গত বছর আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে, বিশেষ করে গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতসহ বিভিন্ন কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে চরম অস্থিরতা। আকস্মিক শ্রমিক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শত শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য মতে, আগস্টের সহিংসতায় চার শতাধিক কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি কারখানায় উৎপাদন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অস্থিরতার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে বেসরকারি খাত ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ফিকে হতে চলেছে। মামলা-হয়রানিতে বিপর্যস্ত বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার উদ্বেগের ছায়া নেমে এসেছে। সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতির পরও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ এখনো স্বস্তিতে নেই, যা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের চাকাকে পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মামলা-হামলাসহ নানা রকম হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবসায়ীরা দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আস্থার সংকটে ভুগছেন। নতুন করে বিনিয়োগ হবে কি, এখন তাঁদের পুঁজি ধরে রাখাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। দেশের ব্যবসায়ীমহল, উদ্যোক্তা ও অভিজ্ঞজনদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্রমে স্থবির হয়ে পড়ছে উৎপাদনমুখী শিল্পের চাকা।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা স্বীকার করছেন, যতক্ষণ না সরকার এই খাতকে আস্থায় নিয়ে একটি হয়রানিমুক্ত, নিরাপদ ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে, ততক্ষণ অর্থনীতির চাকায় আশানুরূপ গতি ফেরানো সম্ভব নয়।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বেসরকারি খাতের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। বেসরকারি খাতের পরিস্থিতি ভালো করতে গেলে বিনিয়োগ করতে হবে। শুধু টাকা থাকলে বিনিয়োগ হয় না। বিনিয়োগের জন্য পরিবেশ লাগে এবং স্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রয়োজন হয়। এমনিতেও আর্থিক খাতের অবস্থা ভালো নয়। আগের চেয়ে আরো খারাপ হয়েছে। যত দিন পর্যন্ত অবাধ, সুষুম ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার আসবে না, তত দিন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে উন্নতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা-হয়রানিতে অনেকেই বিনিয়োগে নিরুৎসাহ হচ্ছেন, কেউ কেউ দেশ ছাড়ছেন। বিজিএমইএ, বিকেএমইএর তথ্য মতে, শতাধিক কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এর বাইরেও অনেক কারখানায় কর্মী ছাঁটাইয়ের খবর আমরা শুনেছি। সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি আস্থায় ফিরতে পারেননি। আস্থার সংকট দূর করা এখন জরুরি।’


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও