প্রভাত ডেস্ক: চলমান নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছেন বাংলাদেশের পেসার মারুফা আক্তার। পেস-সুইংয়ে ব্যাটারদের বেশ ভোগাচ্ছেন তিনি। লাসিথ মালিঙ্গা থেকে শুরু করে নাসের হোসেন—ক্রিকেট বোদ্ধারা প্রশংসায় ভাসিয়েছেন এই টাইগ্রেস পেসারকে। তবে মারুফার উঠে আসার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। এক সময় বাবার সঙ্গে কৃষি কাজও করেছেন তিনি। চরম দারিদ্র্যতা ও সমাজের কটুকথা, অবজ্ঞা পেছনে ফেলে আজ বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন এই লড়াকু নারী।
সম্প্রতি আইসিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের সংগ্রামের গল্প বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন মারুফা। এমনকি চেষ্টা করেও চোখের পানি আটতে ব্যর্থ হন এই টাইগ্রেস পেসার।
নীলফামারীর সৈয়দপুরের হতদরিদ্র এক পরিবারে জন্ম মারুফার। নিজেদের জমি না থাকায় অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করতেন মারুফার বাবা। আর্থিক সংকটের কারণে ভালো জামাকাপড় গায়ে জড়াতে পারতেন না। যে কারণে সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে আত্মীয়রাও তাদের দাওয়াত দিতেন না।
এমন কষ্টের কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে মারুফা বলেন, ‘কোথাও যদি বিয়ে বা কোনোকিছু (অনুষ্ঠান) হয়, দাওয়াত দেয় না? আমাদেরকে সেটাও দিতো না। বলতো ওদের ড্রেস নাই, ওইখানে গেলে আমাদের মান সম্মান থাকবে না। এরকম বলতো অনেকে। একটা সময় ছিল যখন আমরা ঈদেও নতুন জামা কিনতে পারিনি।’
অন্যদের কটু কথায় কান্না করতেন জানিয়ে মারুফা বলেন, ‘আমার বাবা একজন কৃষক। আমাদের ওইরকম পয়সাকড়ি ছিল না। আব্বা যখন বাসায় ছিল না, বাজারে যেত তখন মাকে এসে অনেকে অনেক কথা বলতো। অনেক খারাপ খারাপ কথা বলে যেগুলা নেওয়ার মতো না। আমার মা রুমে গিয়ে কান্না করতো। আমি আবার গিয়ে এক কোণায় কান্না করতাম যে আমার জন্য এতকিছু হচ্ছে।’
মানুষের কটু কথা দমিয়ে রাখতে পারেনি অদম্য মারুফাকে। তিনি বলেন, ‘আমি ভাবতাম ঠিক আছে, আমি একদিন ভালো কিছু করে দেখাব। এখন আমরা যেরকম অবস্থাতে এসেছি, অন্যরা এখন সেরকম জায়গায় নেই। আমি যেভাবে ফ্যামিলিকে সাপোর্ট করছি, অনেক ছেলেরাও হয়তো সেভাবে পারছে না। এটা অন্যরকম একটা শান্তি দেয়। ছোটবেলায় ভেবেছি মানুষ কবে আমাদের এভাবে দেখবে, হাততালি দিবে, এখন টিভিতে (নিজেকে) দেখলে লজ্জা লাগে (হাসি)।’