প্রভাত রিপোর্ট: জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক দেওয়ার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত তালিকায় এনসিপির দাবি করা প্রতীকটি না থাকায়, তা দিতে পারিনি। যখন কোনো দল নিবন্ধিত হয়, তখন তাকে কমিশনের নির্ধারিত প্রতীকের তালিকা থেকেই একটি প্রতীক নিতে হয়। এনসিপি যেটি চেয়েছিল, সেটা তালিকাভুক্ত ছিল না। তবে কমিশন চাইলে প্রতীক বাড়াতে ও কমাতে পারে। রবিবার দুপুরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশাসন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি অংশ নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও। সভায় নির্বাচন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘বিধান হলো যে তালিকাভুক্ত প্রতীক আছে, ওখান থেকে নিতে হবে। এখন পর্যন্ত তালিকার বাইরে থাকা প্রতীক কমিশন কাউকে দেয়নি। তবে কমিশন চাইলে প্রতীক বাড়াতে ও কমাতে পারে। আগে ১১৫টি প্রতীক ছিল না, এখন আছে।’
রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করেছে এনসিপি। কিন্তু তাদের চাওয়া শাপলা প্রতীক ইসির সংশ্লিষ্ট বিধিমালায় নেই। তাই বিধিমালায় থাকা একটি প্রতীক পছন্দ করে ৭ অক্টোবরের মধ্যে জানাতে এনসিপিকে চিঠি দিয়েছিল ইসি। তবে দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ই চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ই–মেইলের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবর পাঠিয়েছে দলটি।
নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে এনসিপি বলেছে, তারা আশা করে, সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন করে এনসিপিকে শাপলা, সাদা শাপলা অথবা লাল শাপলা থেকে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ দেবে।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, শাপলা প্রতীক ছাড়া এনসিপি নিবন্ধন নেবে না। তিনি বলেন, ‘শাপলা প্রতীক পেতে আইনি ও রাজনৈতিক কোনো বাধা দেখছি না। এরপরেও যদি শাপলা প্রতীক না দেওয়া হয়, তাহলে লড়াই চালিয়ে যাব। শাপলা ছাড়া এনসিপি নিবন্ধন নেবে না। শাপলা ছাড়া এনসিপি নিবন্ধন মানবে না।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থার ব্যাপারে এনসিপির বক্তব্য তিনি শোনেননি। কোন পরিপ্রেক্ষিতে বলছেন, তা বুঝতে পারছেন না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘…যাঁরা এনসিপিতে নেতৃত্বে আছেন, যাঁদের দেখি বা আমাদের সঙ্গে যাঁরা মিটিং করতে আসেন, তাঁরা কিন্তু ২০২৪এর আন্দোলনে অ্যাকটিভলি পার্টিসিপেট, ইনভলভ ছিলেন (সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ)। এমন লোকজন কিন্তু এই দলটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা (এনসিপি) গণতন্ত্রায়ণের পথে নিজেরা বাধা সৃষ্টি করবে, এটা আমি মনে করি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাঁদের দেশপ্রেমিক এবং কোনো অংশেই, তাঁদের কম দেশপ্রেমিক আমি ভাবতে চাই না। তা না হলে তাঁরা এ রকম জান দেওয়ার জন্য রাস্তায় নামতেন না। তাই যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনসিপিকে, তাঁরা জীবনের অনেক ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সুতরাং তাঁরাও দেশের মঙ্গল চান। তাঁরাও দেশের গণতন্ত্র চান। আমার বিশ্বাস, গণতন্ত্রের উত্তরণটা যাতে সুন্দর হয়, সুষ্ঠু হয়, এ রকম একটা পরিবেশে ওনারা সম্মতি দেবেন।’