মো. বাবুল শেখ পিরোজপুর : পিরোজপুরে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, তাদের তালিকা অনুযায়ী দেয়া হয় না খাবার । যা দেয়া হয় তা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম এবং নিম্নমানের এবং সাস্থ্য সম্মত না । নির্ধারিত আসনের বিপরিতে রোগী বেশি থাকায় রয়েছে খাবার না পাওয়ার অভিযোগ। ফলে ভর্তি হওয়া রোগীদের যেমনি বাড়ছে ভোগান্তি, তেমনি বাড়ছে খরচ। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের দাবি, খাবারের জন্য যে বরাদ্দ রয়েছে তাতে মানসম্মত খাবার দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর খাবার সরবরাহে কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সিভিল সার্জন।
রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, সকালের নাস্তার জন্য দুইটি পাউরুটি, একটি ডিম, সামান্য চিনি ও একটি কলা দেয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ৪ ইঞ্চি আকারের একটি সবরি জাতের কলা দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয় ছোট একটি চিনিচাপা জাতের কলা। দুপুরের খাবারে মাছ দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয় মুরগীর মাংস। ৬০ গ্রামের উপরে একটুকরো মাংস দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয় ৫০ গ্রামের কম ওজনের মাংসের টুকরা। বাজারে মাছের দাম মুরগির তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় প্রায় দিনই মাছের পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে মুরগি। পরিমানেও দিচ্ছে কম।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিভাগে ভর্তি রোগীদের ওষুধের পাশাপাশি প্রতিদিন সরকারি ভাবে ১৭৫ টাকা মূল্যের তিন বেলা খাবার (সকালে নাশতা, দুপুরে ও রাতে ভাত) দেয়া হয়। এ ছাড়া বিশেষ দিবসে প্রতি রোগীকে ২০০ টাকার খাবার দেয়া হয়। দরপত্রের শর্ত অনুয়ায়ী, হাসপাতালে প্রতিদিন দুপুর ও রাতে ২৮ ইরি চালের ৩৩০ গ্রাম ভাত, সপ্তাহে পাঁচ দিন মাছ ও মাংস ৬৩.৬৬ গ্রাম করে দুই বেলা দেয়ার কথা। সপ্তাহে দুইদিন মাছ ও ডিম দেয়ার কথা। এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে রোগীদের দুটি পাউরুটি, একটি সিদ্ধ ডিম ও একটি পাকা সবরি কলা দেয়ার কথা। কিন্তু মাছ-মাংসের অংশ আকারে ছোট, কলাও ছোট ও নিম্নমানের পাউরুটি দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মসলার পরিমাণ কম দিয়ে তরকারি রান্না করে রোগীদের দেয়া হচ্ছে, যেটি খেতে রোগীরা আগ্রহী হচ্ছে না।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দরপত্র মূল্যায়নে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি ছিল শেখ এন্ড সন্স ট্রেডার্স। বেশি দরে খাবার সরবরাহের দরপত্র বাগিয়ে নিলেও রোগীদের পাতে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের খাবারে ক্ষুব্ধ রোগীরা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পরে আর কোনো দরপত্র আহ্বান করেনি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে দরপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসপাতালের খাবার সরবরাহ করছে।
রাধুনী লাইলি আক্তার বলেন, আজকে (রবিবার) মাছ দেয়ার কথা ছিল কিন্তু মাছের পরিবর্তে মাংস দেয়া হয়েছে। ঠিকাদার মাছের পরিবর্তে মাংস পাঠিয়েছে তাই মাংস দিয়েছি। বাজারে আজ (রবিবার) সবরি কলা পাওয়া যায় নি তাই চিনি চাপা কলা দেয়া হয়েছে। আমরা সবকিছুই ঠিক মত কিন্তু রোগির অভিযোগ থাকবেই।
সিভিল সার্জন, ডা. মো. মতিউর রহমান জানান,পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে সকল বিষয়ে মনিটরিং করার জন্য একটি কমিটি আছে। আমি প্রায়ই কমিটির সদস্যদের সাথে নিয়ে পরিদর্শন করি। আপনাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাল আমরা আরএমও সাহেব সহ আমাদের যে ঠিকাদার আছে তাদের সাথে নিয়ে পরিদর্শন করবো। আশাকরি খুব শীঘ্রই আমরা সকল সমস্যার সমাধান করতে পারবো।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে দুদকের ৫ সদস্যের একটি দল হাসপাতাল পরিদর্শন করে খাবারের পরিমাণ কম দেয়ার সত্যতা পেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্ক করেছিল। তবে সচেতন মহলের দাবি দুদক থেকে সতর্ক করার পরেও কোন ভ্রুক্ষেপ করেনি কর্তৃপক্ষ।