আজ
|| ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
নাটোরে টি আর প্রকল্পের কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ
প্রকাশের তারিখঃ ২১ অক্টোবর, ২০২৫
খন্দকার মাহাবুবুর রহমান, নাটোর : নাটোরে টেস্ট রিলিফ (টি আর) প্রকল্পের কাজ না করেই বিল উত্তলনের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, তাহলে বরাদ্দের অর্থ গেল কোথায়? আর দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত দাবি করছেন সুশীল সমাজের নাগরিকরা। তবে পৌর টিআর প্রকল্প কমিটির সদস্য সচিবের দাবি- শতভাগ স্বচ্ছতার সহিত কাজ করেই বিল উত্তোলন করা হয়েছে। আর পৌর প্রশাসন বলছেন- বিষয়টি আমার জানা নেই।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের তথ্য মতে, টেস্ট রিলিফ (টি আর) প্রকল্পের আওতায় নাটোরের ৮টি পৌরসভায় ১ম ও ২য় পর্যায়ে সর্বমোট ১ কোটি ১৫ লক্ষ ৯৩ হাজার ৬ শত ১৬ টাকা ২৮ পয়সা, বরাদ্ধ দেওয়া হয়। নাটোর সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসের তথ্য বলছে- নাটোর পৌরসভায় ২৯ লক্ষ ১৪ হাজার ১ শত ৯০ টাকা ২৬ পয়সা ১৬ টি প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় করা হয়। এরমধ্যে নাটোর শহর নিরাপত্তায় রাখতে পৃথক ৩টি প্রকল্পে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা এবং ২টি মনিটর বাবদ মোট ব্যয় করা হয়েছে ৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। ২টি ওয়ার্ডে ৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেন সংস্কার ও জলকল বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা। নাটোর পৌরসভার ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলাদা ৩টি প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে ৪ লক্ষ ২৬ হাজার ১ শত ৯০ টাকা ২৬ পয়সা। এবং নাটোর পৌরসভার ৬টি মসজিদ এবং ১ টি মাদ্রাসায় ৭ টি প্রকল্পের মাধ্যমে বিতরণ করা হয় ৭ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা।
যত্রতত্রভাবে ১৫ টি প্রকল্পের কাজ করা হলেও ১ টি প্রকল্পের, কাজ না করেই বিল উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নাটোর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের ভবানীগঞ্জ জেলা গ্রন্থাগারের পূর্ব পাশে বলারীপাড়া রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ ও ড্রেন সংস্কারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা। এই ঠিকানায় রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ ও ড্রেন সংস্কারের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রাস্তার মাথার চা দোকানদার খোকন হোসেন বলেন, “এই মহল্লায় প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসতি। প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ এই পথ দিয়ে চলাচল করে। ড্রেন থাকলেও প্রায় ২০ বছরের মধ্যে সংস্কার করা হয়নি। ভাঙ্গাচুরা ড্রেনের মধ্যেই জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর দিন রাতেই মশার উপদ্রব। এই রাস্তা ও ট্রেন সংস্কারের জন্য যদি বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাহলে সেই বরাদ্দের টাকা কোথায় গেল?”
মহল্লাবাসী মিলন প্রামানিক বলেন, “বিগত ১৬ বছরের মধ্যে এই রাস্তা সংস্কার হয়নি। বর্ষাকালে পানি জমে থাকে। আর ড্রেনের দুর্গন্ধ পানি মিলেমিশে একাকার হয়। বাধ্যতামূলক পানির ভিতর দিয়েই বাড়িতে যাতায়াত করতে হয়, ফলে চুলকানি সহ নানান রোগে আক্রান্ত হতে হয়। রাজনৈতিক সরকারের সময় কেউ ফিরে তাকায়নি আমাদের এই রাস্তার দিকে। বর্তমানে পৌর প্রশাসন তো আমাদের এই সড়কের দিকে দৃষ্টি দিতে, পারে তাও দেননা।”
নাটোর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো. সাইদুর রহমান প্রকল্পের অনিয়ম বা কাজ না করে বিল উত্তোলন বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হলেন না।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরও) গণমাধ্যমকে বলেন, “টিআর, কাবিটা, কাবিখা প্রকল্পের কাজের অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর জেলা সভাপতি রেজাউল করিম রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, “টিআর, কাবিটা, কাবিখা কর্মসূচির কাজের স্বচ্ছতা থাকা দরকার। যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এক্ষেত্রে তদন্তের দাবি রাখি। যারা এই অনিয়মের সাথে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নাটোর জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গণমাধ্যম কর্মী বুলবুল আহমেদ বলেন, “টিআর, কাবিটা, কাবিখা এই সমস্থ প্রকল্প গুলোই লুটপাটের। দলীয় সরকারের সময় কাজ না করেই এই সমস্ত প্রকল্পের টাকা, লুটপাট করা হতো। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার বড় আশাবাদী হয়ে প্রশাসনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এখনো যদি লুটপাট হয়, তাহলে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত দাবি করি।”
নাটোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও পৌর টিআর প্রকল্প কমিটির সদস্য সচিব মো. আব্দুল মালেক বলেন “বিগত দিনে টিআর প্রকল্পের অনেক কাজ না করে, অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু ২৪-২৫ অর্থবছরে শতভাগ স্বচ্ছতার সহিত কাজ করেই বিল উত্তোলন করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও পৌর প্রশাসক মো. আবুল হায়াত বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।”
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.