প্রভাত সংবাদদাতা, মাদারীপুর: মাদারীপুরের কালকিনিতে শুরু হয়েছে ২০০ বছরের পুরোনো ঐহিত্যবাহী কুন্ডুবাড়ি মেলা। কালীপূজাকে ঘিরে অনুষ্ঠিত এই মেলায় শুধু কয়েক কোটি টাকার ফার্নিচারই বিক্রি হয়। এ ছাড়া, সুলভে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়ায় হাজারো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর মেলা প্রাঙ্গন।
পূর্ব পুরুষের ঐহিত্য ধরে প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন করা হয় বলে জানায় আয়োজক কমটি। মেলায় ব্যাপক নিরাপত্তা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিরাপত্তায় নিয়জিত রয়েছে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ। তবে মেলাটি দুই দিনের জন্য অনুমতি পেলেও মূলত সোমবার (২০ অক্টোবর) থেকেই শুরু হয়ে গেছে। যা চলবে বুধবার পর্যন্ত।
দোকানি ও দর্শনার্থীরা জানায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্যামা পূজা উপলক্ষে মাদারীপুরের কালকিনির ভুরঘাটায় শুরু হয়েছে এই মেলা। মেলাকে ঘিরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের দুই পাশসহ প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে সারি সারি দোকান। এর অধিকাংশ দোকানি রাজধানী ঢাকা, নরসিংদী, বগুড়া, রাজশাহী, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে। মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কাঠের তৈরি খাট, সোফা, আলমারিসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। শুধু কয়েক কোটি টাকার ফার্নিচারই বিক্রি হয় এই মেলায়। এ ছাড়া, অন্য দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সুলভে এই পণ্য কিনতে ভিড় করছেন দূরদূরন্তের ক্রেতারা। বেশি বেশি বিক্রি হওয়ায় খুশি বিক্রেতারাও।
মেলার আয়োজকরা জানান, বাংলা ১৭৮৩ সালে মহেষ চন্দ্র কুন্ডু সর্বপ্রথম এই মেলা শুরু করেন। সেই থেকে টানা হয়ে আসছে কুন্ডুবাড়ি মেলা। পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সবার সহযোগিতায় প্রতিবছরই এই মেলা মিলন মেলায় পরিণত হয়। সেনাবাহিনী, র্যাব আর পুলিশের সমন্বয়ে মেলাজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা নিয়েছে প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মেলার আসামাজিক কর্মকাণ্ড বন্ধ, জুয়া-মাদক নিষেধ, উচ্চস্বরে শব্দযন্ত্র পরিহার, অবৈধ পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ’সহ ১৫টি বিধিনিষেধ দিয়েছে প্রশাসন। বুধবার দিবাগত রাত ১১টায় শেষ হবে এই মেলা। কুন্ডুবাড়ি মেলা প্রতিবছর ৫-৭ দিন হলেও এবার দুই দিনের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। তবে ক্রেতা-দর্শনার্থী ও বিক্রেতার স্বার্থে মেলার মেয়াদ বাড়ানোর দাবি এলাকাবাসীর।
মেলায় আসা ক্রেতা জুয়েল সাহা নামে একজন বলেন, এই মেলা আমাদের জন্য এক মিলন মেলা। সবাই স্বাচ্ছন্দে ঘুরছি, কেনাকাটা করছি। আনন্দ উপভোগ করছি।
রত্মা আক্তার সাথী নামে এক দর্শনার্থী বলেন, হিন্দু-মুসলিম সবাই এই মেলায় আসে। এখানে স্বল্প দামে সব জিনিসপত্র পাওয়া যায়। প্রতিবছরই এই মেলায় বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটা করি।
নরসিংদী থেকে আসা ফার্নিচার বিক্রেতা গোলাম সরোয়ার বলেন, প্রতিবছর এই মেলায় ৮-১০ গাড়ি ফার্নিচার বিক্রি করি। এবারও একই আশা রয়েছে। আমার দোকানে কাঠের তৈরি সব আসবাবপত্র রয়েছে।
বগুড়ার বড় বাজার এলাকা থেকে আসা আরেক বিক্রেতা শাহাতাৎ সরদার বলেন, গত বছর মেলায় ৫০ লাখ টাকার ফার্নিচার বিক্রি করেছি। এবারও একই আশায় এসেছি। ক্রেতারা আসছেন, বিক্রি ভালোই হচ্ছে।
মেলার আয়োজক বাসুদেব কুন্ডু বলেন, ছোটবেলা থেকে দেখছি এভাবেই প্রতিবছর এই কুন্ডুবাড়ি মেলা হয়ে আসছে। প্রতিবছরই বাড়ছে মেলার পরিধি। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে, মেলার সময়সীমা বেশি হলে সবার জন্যই ভালো হয়।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, কুন্ডুবাড়ি মেলাকে ঘিরে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে আগত দর্শনার্থীর ব্যাপক নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, উৎসব শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।