প্রভাত রিপোর্ট : শ্রমিক নিরাপত্তা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোর ইশতেহারে এ বিষয়ে অঙ্গীকার থাকা আবশ্যক। সেখানে শ্রমিকদের নিরাপত্তা আইন ও বৈষম্য দূর করার কথা থাকবে। সমাবেশে এনে বিরিয়ানির প্যাকেট না দিয়ে দলগুলোর পক্ষ থেকে শ্রমিক নিরাপত্তা তহবিল গঠন করতে হবে। না হলে শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যাবে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম ও সদস্য সংগঠনগুলোর সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা। অব্যাহত রাসায়নিক ও অগ্নিকাণ্ডসহ সব ধরনের দুর্ঘটনার তদন্ত ও বিচার, নিহত-আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সেফটি কমিটি গঠন, আইন সংশোধন এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে বিলস এবং নিরাপত্তা ফোরাম এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ বলেন, কারখানায় নিরাপদ কর্মসংস্থান ও প্রতিবেদন পরিদর্শন জরুরি। এ ক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠন, আইনজীবী ও মিডিয়া কর্মীদেরও সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে। প্রতিটি কারখানার ফ্লোরে সেফটি সেল থাকতে হবে। নির্বাচিত হলে শ্রমিকদের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তার প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বা নিহত শ্রমিক পরিবারকে দান নয়, তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, মিরপুরে আগুন লাগা কারখানায় অনেক নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে। সেখানে কর্মরত অনেকের বয়স ১৪-১৫ বছর। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।
সঞ্চালকের বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আইনি ব্যবস্থার সঠিক প্রয়োগ থাকতে হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইনি দুর্বলতা রয়েছে; যেখানে শ্রমিক আইনের মামলার সর্বোচ্চ সাজা চার বছর, সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ ২ লাখ আর পঙ্গু হলে আড়াই লাখ টাকা। এ বিষয়টিও পুনর্বিবেচনা করতে হবে। অনেক সময় দুর্ঘটনায় কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা কাজ করে। চলতি মাসের ১৪, ১৭ ও ১৯ অক্টোবর দেশে তিনটি অগ্নিকাণ্ডের প্রত্যেকটি ঘটনায় রাসায়নিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিষয়টি সামনে রেখে ভবিষ্যতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক পরিচালক ও রাসায়নিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আবুল বাশার মিয়া বলেন, নিরাপদ পরিবেশ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু দেখা যায় না। মানুষের, সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক নিরাপত্তা কী হবে, তা নিয়ে কেউ কথা বলছে না।
কর্মজীবী নারীর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা বলেন, কেমিক্যাল কারখানা কেন আবাস্থলের কাছে হবে তার জবাবদিহি করতে হবে। কঠোর আইন করতে হবে। কেমিক্যাল গুদাম নিতে হবে ঢাকার বাইরে। কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্যের বালাই নেই। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের (জিস্কপ) প্রতিনিধি নাইমুল আহসান জুয়েল বলেন, শ্রমিকদের কান্না থামানোর কেউ নেই। ২০২৪ সালে ২০ জন দৈনিক শ্রমিক হিটস্ট্রোকে মারা গেছে। একটি কারখানার চেকলিস্ট পরীক্ষা করার জন্য তদন্ত সেল গঠন করতে হবে। ঝটিকা মনিটরিং কমিটি থাকতে হবে। আজীবন আয় অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রাখতে হবে। সোহরাওয়ার্দী কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে নিহত শ্রমিককে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
মূল বক্তব্যে এসএনএফ’র মহাসচিব এবং সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে আমাদের বিরূপ মনোভাব আছে। কারণ এটি অনেক সময় আমাদের ক্ষতির কারণ হচ্ছে। তবে এটি নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবহার হলে এমনটি হতো না। রাসায়নিক কেমিক্যালের কারখানা আবাসিক এলাকায় কোনভাবেই রাখা উচিত নয়। এ সময় তিনি কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা এবং রাসায়নিক দ্রব্য ও বিস্ফোরক মজুত সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার প্রস্তাব ও আইনি ক্ষেত্রে সরকারের জিরো টলারেন্সসহ ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) যুগ্ম সমন্বয়কারী আব্দুল কাদের হাওলাদার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সভাপতি কুতুবউদ্দিন আহম্মেদ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) পরিচালক অ্যাডভোকেট বরকত আলী ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য এ কে এম নাসিম। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রমিক প্রতিনিধিরাও শ্রমিক নিরাপত্তা নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন।