আজ
|| ১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে আর কত বছর লাগবে?
প্রকাশের তারিখঃ ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট : ১৪ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি মেলাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখও পেরিয়েছে শতাধিকবার। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও মেলেনি তদন্তের অগ্রগতি। তাই এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদালত। গত ২২ এপ্রিল সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ঘটনায় করা মামলা তদন্তে টাস্কফোর্সকে আরও ৬ মাস সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল। একইসঙ্গে বিভিন্ন বাহিনীর অভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে এই টাস্কফোর্স গঠন করতে বলা হয়েছিল। টাস্কফোর্স গঠনের পর ৬ মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন আদালত। টাস্কফোর্স গঠনের পর রাষ্ট্রপক্ষ দুই দফায় ৬ মাস সময় নিলেও দেখাতে পারেনি তদন্ত প্রতিবেদন।
নির্ধারিত সময় পর বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) মামলাটি বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের শুনানিতে ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ। বাদীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রিটের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ শুনানি করেন।
শুনানিকালে শিশির মনির হাইকোর্টকে বলেন, ‘আপনারা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে সময় দিয়েছিলেন। একটি হাই পাওয়ার টাস্কফোর্স করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেটা গঠিত হওয়ার পরেও তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। তাই তাদের (টাস্কফোর্স কমিটি) তলব করুন।’ এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ বলেন, ‘তারা কাজ করছে। কাজ শেষ হলেই প্রতিবেদন দেওয়া হবে। সময় লাগবে।’
শিশির মনির বলেন, ‘তারা সময় চাইলে আবেদন দিয়ে আদালতকে জানাক। তারা যে কিছু কাজ তার কিছুই আমরা জানিনা। আমাদের জানাক।’
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতকে বলেন, ‘কাজের অগ্রগতি আছে কিনা প্রয়োজনে আপনাদের জানাক।’
আরশাদুর রউফ বলেন, ‘হাইকোর্টের অর্ডারের পর টাস্কফোর্স হয়েছে। এখানে অফিসার পরিবর্তন হয়েছে। এটা টাফ কেস। ওনারা কাজ করছেন। র্যাব-পুলিশ হেডকোয়ার্টারও সাথে আছে। এটা দ্রুত শেষ হবে। এটা একটা ওল্ড কেস। সরকার এটার তদন্তে গুরুত্ব দিচ্ছে। তদন্ত শেষ করতে আমরা আরও ৬ মাস সময় চাচ্ছি।’
শিশির মনির বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ একই কথা, একই বিতর্ক আগেও করেছে। সারা দেশে এ মামলাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।’
আদালত বলেন, ‘এ নিয়ে তথ্য প্রচারের বিষয়টি কন্টিনিউ করতে হবে, এ জন্য যে এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। এটা করতে হবে, শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি।’তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আমরাও চাই এটা হোক, শেষ সময়ের মধ্যে হোক।’এ সময় আদালত চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিন্তু আর কত বছর লাগবে? এখন তদন্তের কত পার্সেন্ট এগিয়েছেন? পলিটিক্যালি যে আসুক এ মামলার অগ্রগতি তো হবে না।’তখন রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানায়, এ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই দেশের বাইরে চলে গেছেন, অনেক তথ্য-প্রমাণ দরকার, এজন্য সময় দরকার।
এ সময় মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পিবিআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজিজুল হককে আদালতের ডায়াসের সামনে ডেকে নেওয়া হয়। তার কাছে মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চান হাইকোর্ট। মামলার তদন্ত কত পার্সেন্ট এগিয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ নতুন করে সময় চাওয়ায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, ‘আমরা শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি।’ এরপর আদালত এ মামলার তদন্ত শেষ করতে টাস্কফোর্সকে শেষবারের মতো ৬ মাস সময় দেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। তাদের একমাত্র ছেলে মাহির সারোয়ার মেঘ (৫) তখন বাসায় ছিল। হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা থানায় মামলা করেন।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.