প্রভাত রিপোর্ট: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সতর্ক করে বলেছেন, নদী দূষণের কারণে ডলফিন মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে এবং এতে মানুষও বিপদের মুখে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘ডলফিন আমাদের নদীর সুস্থতার প্রতীক। যেখানে ডলফিন টিকে থাকে, সেখানে নদীও টিকে থাকে আর নদী টিকে থাকলেই মানুষ বাঁচে।’ রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন অধিদপ্তর আয়োজিত আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এই কথা বলেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ডলফিন রক্ষা মানে নদী রক্ষা, আর নদী রক্ষা মানেই মানুষের জীবন রক্ষা।’ তিনি মনে করিয়ে দেন যে, নদীর পানি দূষিত হলে তা যেমন ডলফিনের জন্য বিপদ, তেমনি মানুষের জন্যও; নদী পরিষ্কার রাখাই মানুষের ও ডলফিনের জীবনের অন্যতম শর্ত।
পরিবেশ উপদেষ্টা নদী দূষণের জন্য ‘মানবিক দায়িত্ববোধের অভাবকে’ দায়ী করেন। তার ভাষায়, ‘আমরা নিজেরাই আমাদের নদীগুলোকে দূষিত করছি অথচ নিজেদের সভ্য জাতি দাবি করছি– এটা পরস্পরবিরোধী।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘ডলফিনের সংখ্যা বাড়লে বুঝতে হবে আমরা নদী রক্ষা করছি; আর কমলে বুঝতে হবে আমরা নদীগুলোকে বিপদে ফেলেছি।’ তিনি সতর্ক করেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে শুধু আইনি পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়, বরং প্রয়োজন মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন। তিনি বলেন, ‘যদি মানুষ নিরীহ প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর হয়, তা সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রতিফলন। এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সমাজকে দাঁড়াতে হবে।’
উপদেষ্টা জানান, দেশের প্রতিটি জেলায় বনবিভাগকে সহায়তা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও সুরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মঙ্গল একসূত্রে গাঁথা। আমরা যদি প্রাণীদের বাঁচাই, প্রকৃতি আমাদেরও বাঁচাবে।’
প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী, ডব্লিউসিএস বাংলাদেশের ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ড. মো. ইশতিয়াক সোবহা এবং সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ‘গাঙ্গেয় ডলফিন সংরক্ষণ হ্যান্ডবুক’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং ডলফিন সংরক্ষণ, নদী পরিবেশ ও মিঠাপানির জীববৈচিত্র্য বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রদর্শন করা হয়।