প্রভাত রিপোর্ট: চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের কাছে না দেওয়ার দাবিতে আগামী ৮ নভেম্বর চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বাম সংগঠনগুলো। সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর ১টায় গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়া চুক্তি থেকে সরকার যদি সরে না আসে তাহলে আগামী ৮ নভেম্বর চট্টগ্রামে সমাবাবেশ করবো। এতে কাজ না হলে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে যমুনা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবো। তাতেও যদি কাজ না হয় তারপর সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এর আগে বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা। পরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে তারা। মিছিলটি প্রেস ক্লাব থেকে পল্টন মোড় হয়ে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে সেখানেই সমাবেশ করে বাম সংগঠনগুলো।
সমাবেশে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, আমরা বামপন্থিরা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। বাংলাদেশে ডিসিদের কাছে স্মারকলিপি দেব। আজ মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেবো।
গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন নাসু বলেন, হাসিনা সরকার যেভাবে গোপন চুক্তি করেছিলো ঠিক একইভাবে এই সরকার বিদেশিদের সঙ্গে গোপন চুক্তি করছে। আমাদের বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে।
গণতান্ত্রিক বিল্পবী পার্টির আহ্বায়ক মোশরেফা মিশু বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থান অর্জন করেছি। সরকার সাম্রাজ্যবাদের দিকে ঝুকছে। বন্দর যাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে সেই ডিপি ওয়ার্ল্ডের অনেক বদনাম আছে। এই কোম্পানির সঙ্গে মার্কিন নৌ বাহিনীর চুক্তি আছে। তারা যেই দেশে যায় তাদের সর্বনাশ হয়। কিন্তু সরকার বন্দরকে বিদেশি কোম্পানির কাছে দেওয়ার চুক্তি করছে। এ রকম পরিস্থিতে আমরা উদ্বিগ্ন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কি আমাদের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেবে।
বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, যারা ক্ষমতায় যায় তারা দেশটাকেও বাপ দাদার সম্পত্তি মনে করেন। মার্কুন সাম্রাজ্যবাদীরা ড. ইউনূসের সহায়তায় আমাদের বন্দর দখল করার চেষ্টায় আছে। এই অধিকার ড. ইউনূসের নেই। নতুন করে যদি আমেরিকান তাবেদার করা হয় আবারও মুক্তিযুদ্ধ হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি সাজ্জাদ জাহির চঞ্চল বলেন, শুধু বন্দর ইজারা মুখ্য বিষয় না। এই অঞ্চলে আমেরিকার যে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ আছে সেটি জড়িত। আমরা এর আগেও চট্টগ্রাম বন্দর, ফুলবাড়ি কয়লার খনি বিদেশিদের দিতে দেই নাই। প্রতিবাদ করতে গিয়ে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে। আমরা বেঁচে থাকতে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন চলবে।
এদিকে রবিবার (২৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিবের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের সব টার্মিনাল, জেটি, ইয়ার্ড ও অন্যান্য স্থাপনার একক মালিকানা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো টার্মিনালের মালিকানা ইতোপূর্বে কখনোই কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা বন্দর কর্তৃপক্ষ বা সরকারের ছিল না বা এখনো নেই। বাংলাদেশের প্রচলিত বিধিবিধান প্রতিপালন সাপেক্ষে শুধু লাইসেন্সি হিসেবে অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালগুলো পরিচালনার ব্যাপারে কতিপয় সংবাদমাধ্যম সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, কল্পনাপ্রসূত, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করছে। এসব অসত্য, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সাধারণ জনগণ ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। কতিপয় গণমাধ্যমে কোনো বিষয়ে প্রকৃত তথ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত না হয়ে মনগড়া বা ধারণাভিত্তিক বা অনির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে সংবাদ পরিবেশন করা হলে তা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর সম্পর্কিত মনগড়া, অবাস্তব সংবাদ বন্দরের স্বাভাবিক কর্মপরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যা বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড চট্টগ্রাম বন্দর এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে বড় অন্তরায়। বন্দরের সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ বজায় রাখা এবং ক্রমবর্ধমান উন্নতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখাসহ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য। চট্টগ্রাম বন্দর সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আরো দায়িত্বশীল, সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ হয় বিজ্ঞপ্তিতে।