আজ
|| ২৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৩ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
নাজিরপুরে নদী ভাঙনে হাজারো মানুষের জীবন অন্ধকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৯ অক্টোবর, ২০২৫
মো. বাবুল শেখ,পিরোজপুর:পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার ৮নং শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের উত্তর জয়পুর গ্রামে ভয়াবহ নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে স্থানীয়দের বসতভিটা সংলগ্ন ইটের রাস্তা। উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত এই সড়কটি ছিল এলাকার হাজারো মানুষের একমাত্র যাতায়াতের পথ।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের পূর্ব পাশে প্রায় ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম মাস্টারের বাড়ি থেকে আদর্শ গ্রাম পর্যন্ত রাস্তাটি নদীর পেটে ঢুকে যাচ্ছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে অচিরেই হাজারো ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙনের ভয় নিয়ে বসবাস করছেন এখানকার মানুষ। চোখে-মুখে আতঙ্ক, কণ্ঠে কেবল বাঁচার আকুতি।
স্থায়ী বাসিন্দা লুৎফর রহমান অসহায়ভাবে বলেন, প্রতিদিন দেখি নদীটাকে একটু একটু করে আমাদের গ্রামটা গিলে নিচ্ছে। ঘুম ভাঙে নদীর গর্জনে, ঘুমাতে যাই বুকভরা ভয় নিয়ে। জানি না, কাল সকালে রাস্তাটা থাকবে কিনা।
আরেক বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এই রাস্তাটাই ছিল আমাদের জীবনের ভরসা। উপজেলা পরিষদে যাওয়া, স্কুলে যাওয়া, বাজারে যাওয়া—সবই এই পথ দিয়ে। এখন গর্ভবতী নারী, অসুস্থ মানুষ, ছোট ছোট স্কুলপড়ুয়া বাচ্চারা—কেউই যেতে পারছে না। এম্বুলেন্স আসতে পারে না, ভ্যান চলে না। আমাদের জীবন থমকে গেছে। তিনি আরও জানান, আদর্শ গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে প্রায় বিশ হাজার মানুষ বসবাস করে। এই আদর্শ গ্রামে ৪৫০টি পরিবার রয়েছে,৪টি মসজিদ, ২টি মাদ্রাসা, ২টি কলেজ, উপজেলা সদর হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ ৪টি বড় বাজার। কিন্তু রাস্তা ধসে পড়ায় ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়। প্রতিদিনই নদী অগ্রসর হচ্ছে মানুষের দিকেই।
একজন বৃদ্ধা চোখ মুছতে মুছতে বলেন,রাস্তাটি সব নদীতে যাচ্ছে। কেউ শুনছে না আমাদের কথা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ একযোগে দাবি জানিয়েছেন—
নদী ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণ, জিওব্যাগ ফেলা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে অচিরেই আদর্শ গ্রামসহ আশপাশের এলাকাগুলো মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।এলাকা বাসিন্দাদের উদ্যোগে গাছ দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা ।
নদীভাঙনের তীব্রতা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মানুষের কান্না, উদ্বেগ ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা। উত্তর জয়পুরের মানুষ আজ শুধু একটি রাস্তা নয়—তাদের জীবনরেখাই হারাতে বসেছে। এখন তাদের একটাই আবেদন— বাঁচান আমাদের গ্রাম, বাঁচান আমাদের রাস্তা, বাঁচান আমাদের স্বপ্ন।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.