আজ
|| ৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৩শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষকের পদ পুনর্বহালের দাবিতে ঢাবিতে প্রতিবাদ
প্রকাশের তারিখঃ ৬ নভেম্বর, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট: প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত এবং শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক পদ পুনর্বহালের দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সংগীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
কর্মসূচিতে স্মারকলিপি পাঠ করেন সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. প্রিয়াঙ্কা গোপ এবং বক্তব্য দেন নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষক লাবণী বন্যা, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক কামাল চৌধুরীসহ বিভিন্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ঢাকা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক এবং বিভিন্ন হল সংসদের সংস্কৃতি সম্পাদকরা কর্মসূচিতে সংহতি জানান। সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানও সংহতি জানিয়েছেন।
সংগীত বিভাগের শিক্ষক আজিজুর রহমান তুহিন বলেন, সভ্যতা বেঁচে আছে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ওপর ভর করে। প্রাথমিকে সংগীত শিক্ষকের পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত আগামীর প্রজন্মের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে। তিনি বলেন, আমি যদি চাই, আগামী দিনে আমার যে শিশুটা বড় হবে, সে যথার্থ মানুষ হয়ে উঠবে, তাকে সংগীত শিক্ষা, সংস্কৃতি শিক্ষা এবং শরীরচর্চা ছাড়া কি যথার্থ মানুষ হিসেবে বড় করে তুলতে পারবো?
সংগীতশিল্পী শায়ান বলেন, আগে আমরা প্রতিবাদের গান গাইতাম, এখন গান গাওয়াটাই প্রতিবাদ। একটা চক্র আছে, যারা সংগীত এবং ধর্মকে মুখোমুখি করার চেষ্টা করছে। এই ফাঁদে পা না দিয়ে বরং কারণে-অকারণে গানে গানে উত্তর দিন।
ডাকসুর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য হেমা চাকমা বলেন, আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি, একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর চাপের কারণে সংগীত কিংবা শারীরিক শিক্ষা বাতিল করা হচ্ছে। তিনি ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে জাতীয় সংগীতকে ‘রঠা’ সংগীত বলে আখ্যায়িত করার অভিযোগও করেন।
থিয়েটার অ্যান্ড পারফর্ম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ঈস্রাফিল শাহীন বলেন, হুকুম যখন দিয়েছেন, হুকুমটা বাতিল করেন। শুধু ধর্ম দিয়ে একটি রাষ্ট্রের বিকাশ সম্ভব নয়। সংস্কৃতি কখনোই ধর্মের বিরোধিতা করে না।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলের সংস্কৃতি সম্পাদক হুমায়রা উপন্যাস বলেন, সংগীতকে শুধু বিনোদনের বিষয় বিবেচিত করা হয়, কিন্তু এটি অধ্যয়নের বিষয়। আক্ষেপের জায়গা এই যে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যারা আছেন তারা সংগীতের গুরুত্ব কতটুকু জানেন। সংগীত এবং শারীরিক শিক্ষা এ জন্যে প্রয়োজন যে, একটা শিশু যাতে সুস্থ মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠে।
গত ২৮ আগস্ট জারি করা ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫’ গেজেটে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক পদ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও রবিবার (২ নভেম্বর) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে তা বাদ দেওয়া হয়। নিয়োগ ঘোষণার পর ধর্মভিত্তিক সংগঠন ও কয়েকটি রাজনৈতিক দল আপত্তি জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে এবং সংগীত শিক্ষকের পরিবর্তে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের দাবি তোলে। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগে কার্যকর সুফল পাওয়া যাবে না এবং বৈষম্য সৃষ্টি হবে বিধায় সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.