আজ
|| ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
সাফারি পার্ক থেকে লেমুর চুরি, আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের সদস্য গ্রেফতার
প্রকাশের তারিখঃ ৬ নভেম্বর, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট: গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিক প্রাণী পাচারচক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতার ব্যক্তির নাম মো. মজনু মিয়া (৫৫)। তিনি গফরগাঁও উপজেলার কালাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কালাইপাড়া এলাকা থেকে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে সিআইডির গাজীপুর জেলা ও মেট্রো বিভাগ তাকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ছয় আসামি গ্রেফতার হয়েছেন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গ্রেফতার মজনু মিয়া আন্তর্জাতিক প্রাণী পাচারচক্রের সদস্য। তারা গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে চুরি করা বিরল প্রাণীগুলো বিদেশে পাচার করে আসছিলেন।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে জানা গেছে, গত ২৩ মার্চ দিবাগত রাতে চোরেরা গাজীপুর সাফারি পার্কের নিরাপত্তা বেষ্টনী কেটে বিপন্ন ও বিরল প্রজাতির তিনটি রিংটেইল লেমুর (দুটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী) চুরি করে নিয়ে যায়। প্রাণীগুলোর বাজারমূল্য আনুমানিক ৩ লাখ টাকা। ঘটনার পরদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মচারীদের মাধ্যমে বিষয়টি জানা গেলে পার্ক কর্তৃপক্ষ শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করে।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, ২০১৮ সালে মাদাগাস্কার থেকে দুটি প্রতিষ্ঠান আমদানি, সংরক্ষণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ দুটি রিংটেইল লেমুরসহ ৮৬ জোড়া প্রাণী বাংলাদেশে আমদানি করে। পরবর্তীতে প্রাণীগুলো গাজীপুর সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে লেমুর দুটির আরও দুটি বাচ্চার জন্ম হলে মোট চারটি প্রাণী পার্কে ছিল; এর মধ্যে একটি মারা গেলে তিনটি বাকি ছিল। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পার্কে কাজ করতেন নিপেল মাহমুদ (৩৩)। তিনি বিভিন্ন সময় বিরল প্রাণীর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্রাইভেট গ্রুপে পোস্ট করে বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেন। এরপর ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী প্রাণীগুলো চুরি করে বিক্রি করতেন। এই চক্রের অন্যান্য সদস্যরা হলেন— জুয়েল মিয়া (৪২), ইসমাইল হোসেন হৃদয় (২৬), দেলোয়ার হোসেন তাওসীফ (২২) এবং মো. সাব্বির হোসেন তপন (২৬)। তারা তিনটি লেমুরের মধ্যে একটি ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে অর্থ ভাগাভাগি করে নেন। পরে বাকি দুটি লেমুর ৭ লাখ টাকায় ভারতীয় ক্রেতাদের কাছে বিক্রির চেষ্টা করেন। সেই প্রক্রিয়ায় মজনু মিয়া (গ্রেফতার) প্রাণীগুলো প্যাকেট ও হস্তান্তরে সহায়তা করেন।
এ ঘটনায় চুরি কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। চুরি যাওয়া তিনটি লেমুরের মধ্যে একটি উদ্ধার করা গেছে, বাকি দুটি উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘এই প্রতারক চক্রটি দেশের বিপন্ন ও বিরল প্রাণীগুলো চুরি করে সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশে পাচার করতো। তাদের পেছনে আরও বড় আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট জড়িত থাকতে পারে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’
বর্তমানে মামলাটির তদন্ত সিআইডির গাজীপুর জেলা ও মেট্রো বিভাগ পরিচালনা করছে। অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রিংটেইল লেমুর মাদাগাস্কারের স্থানীয় প্রাণী এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন তালিকাভুক্ত। আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ চুক্তি অনুযায়ী, এই প্রজাতির বাণিজ্য, সংরক্ষণ বা রফতানি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২ অনুযায়ীও এদের শিকার, বিক্রয় বা পাচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.