আজ
|| ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
বেকার থেকে সফল উদ্যোক্তা: শিবচরের শাহীনের অনুপ্রেরণার গল্প
প্রকাশের তারিখঃ ১৯ নভেম্বর, ২০২৫
হাসানাত আকাশ, শিবচর : করোনা–পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দায় যখন বহু মানুষ জীবিকার অনিশ্চয়তায় দিশেহারা, তখন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাচ্চর ইউনিয়নের ঢালী কান্দি গ্রামের তরুণ আসকারউদ্দিন আহমেদ শাহীন দেখিয়েছেন এক অনন্য পথ। চাকরি হারানোর পর হাল না ছেড়ে দৃঢ় সংকল্প, আত্মবিশ্বাস আর অক্লান্ত পরিশ্রমকে সঙ্গী করে তিনি গড়ে তুলেছেন সফল উদ্যোক্তার স্বপ্নভরা নতুন এক দিগন্ত।
গার্মেন্টস কোম্পানিতে কমপ্লায়েন্স ও এইচআর ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন শাহীন। ২০২১ সালের শেষ দিকে মহামারির প্রভাবে চাকরি হারানোর পর পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ এলেও— তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজের দেশেই দাঁড়াবেন নিজের পায়ে। আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় ৪ লাখ টাকাকে মূলধন করে ২০২২ সালে মাত্র ৫টি গরু দিয়ে শুরু করেন প্রথম গরুর খামার।
শুরুটা ছিল কঠিন—সংগ্রাম ছিল প্রতিদিনের সঙ্গী। কিন্তু অবিচল মনোবল আর নিয়মিত পরিশ্রমে খুব ধীরে হলেও নিশ্চিত গতিতে বাড়তে থাকে তাঁর খামারের পরিধি। বর্তমানে সেই ছোট্ট উদ্যোগটি পরিণত হয়েছে ১৮টি গরুর একটি মানসম্মত ও লাভজনক খামারে।
গরুর খামারের পাশাপাশি নতুন দিগন্তে পা রাখার উদ্দেশ্যে ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল শাহীন শুরু করেন লেয়ার মুরগির খামার। মাত্র সাত মাসের মধ্যে তাঁর খামারে এখন রয়েছে ৯২২টি লেয়ার মুরগি— প্রতিটির ওজন দুই কেজির বেশি। প্রথমে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ দিয়ে শুরু করা এই উদ্যোগে এখন মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৪০ লাখ টাকারও বেশি। একটি মুরগির দৈনিক ফিড খরচ যেখানে প্রায় ৮ টাকা, সেখানে প্রতি ডিম ৯ টাকায় বিক্রি করে নিয়মিতই লাভের মুখ দেখছেন তিনি। তাঁর খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে দুইজন স্থায়ী শ্রমিকেরও।
নিজের সাফল্যের গল্প বলতে গিয়ে শাহীন জানান, “চাকরি হারানোর পর ঠিক করেছিলাম— নিজেই কিছু করবো। প্রথমে ৫টি গরু দিয়ে শুরু করি। পরে লেয়ার মুরগির খামার দিই। অনেক কষ্ট করেছি, আলহামদুলিল্লাহ এখন আল্লাহ আমাকে সফলতা দিয়েছেন। আমি মনে করি— বেকার যুবকদের আর চাকরির পিছনে ছোটার সময় নেই, চাই শুধু ইচ্ছা আর পরিশ্রম।”
শাহীনের মামা আকতারুজ্জামান খান বলেন, “পাঁচটি গরু দিয়ে শুরু করে আজ ১৮টি গরুর মালিক। কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের ফলই আজকের এই সফলতা। লেয়ার সেড করে সে আরও বড় অর্জন করেছে। আমরা তার জন্য সত্যিই গর্বিত।”
খামারের কর্মচারী সাইদুল ইসলাম বলেন, “তিন বছর ধরে শাহীন ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করছি। তিনি ভালো মানুষ এবং সফল উদ্যোক্তা। তাঁর জন্য আমিও ভালোভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছি।”
প্রতিবেশী মুফতি আলাউদ্দিন জানান, “শাহীন ভাইয়ের সফলতা এলাকায় সবার মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। তাঁর গল্প এখন অনেকের অনুপ্রেরণার উৎস।”
শিবচর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হরিশ চন্দ্র বোস বলেন, “শাহীন সত্যিই একজন সফল ও দক্ষ খামারি। আমরা শুরু থেকেই তাঁর পাশে আছি। দেশের প্রাণিসম্পদ খাত এখন দ্রুত বিকাশমান— এই খাতে বেকার ও বিদেশফেরত যুবকদের জন্য রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। ইচ্ছা থাকলে ডেইরি ও লেয়ার খামার করে ভালো আয় করা সম্ভব। যারা উদ্যোক্তা হতে চান— প্রাণিসম্পদ বিভাগ তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে।”
করোনার কঠিন সময় অনেকের পথ রুদ্ধ করে দিলেও শাহীনের দৃঢ়তা প্রমাণ করেছে— অধ্যবসায় থাকলে পরিবর্তন সম্ভব, সাফল্য নিশ্চিত। শুধু নিজের জীবন নয়, তাঁর সফলতা বদলে দিচ্ছে চারপাশের মানুষকেও— তরুণদের অনুপ্রাণিত করছে স্বনির্ভরতার পথে হাঁটতে।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.