• বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৩ অপরাহ্ন

সব হা‌রি‌য়ে খোলা মা‌ঠে আশ্রয় কড়াইল ব‌স্তিবাসীর

প্রভাত রিপোর্ট / ৩ বার
আপডেট : বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

প্রভাত রি‌পোর্ট: রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুন ৫ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে পুরোপুরি নিভতে আরও সময় লাগবে। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সা‌র্ভিস সদর দফতরের মি‌ডিয়া সে‌লের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার। তবে প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
এদিকে, আগুনে ঘরপোড়া মানুষের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে ঘটনাস্থলের পরিবেশ। আগু‌নের তীব্রতার কার‌ণে নিজেদের আশ্রয়স্থলের যেতে না পেরে দূরে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছেন নিঃস্ব বস্তিবাসী। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন খোলা মাঠে।
কড়াইল বস্তির বা‌সিন্দা মো. হা‌নিফ গণমাধ্যমকে জানান, ‌তি‌নি রাজমি‌স্ত্রির সহযোগী হি‌সে‌বে কাজ ক‌রেন। মাগ‌রি‌বের আজ‌ানের কিছুক্ষণ আগে আাগুন লা‌গে। তি‌নি খবর পান ১০-১৫ মি‌নিট পর। খবর পেয়ে দ্রুতে ছু‌টে আসেন নিজের প্রিয় বাসস্থা‌নের দি‌কে। কিন্তু ততক্ষ‌ণে তার সব পু‌ড়ে গে‌ছে। তবে ভাগ্য কিছুটা ভালো যে, এ সময় তার স্ত্রীও বাসায় ছিলেন না। তাই রক্ষা পেয়েছেন দগ্ধ হওয়ার ঝুঁকি থেকে।
ক্ষ‌তিগ্রস্ত আরেক বা‌সিন্দা জয়নুলও রাজ‌মি‌স্ত্রির কাজ ক‌রেন। তিনিও আগু‌নের খবর শু‌নেই কর্মস্থল থেকে দ্রুত ছুটে আসেন। তবে ঘরের কাছে যেতে পারেননি। বাসায় তার স্ত্রী-সন্তান ছিল। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, তারা নিরাপদে আছেন। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে দেখা হয়নি জয়নুলের।
তি‌নি ব‌লেন, “শু‌নে‌ছি আমার ঘর পু‌রো পু‌ড়ে ‌গে‌ছে। কিছুই বের কর‌তে পা‌রে‌নি স্ত্রী।” ব‌লেই আহাজা‌রি কর‌তে থা‌কেন তি‌নি।
ক্ষ‌তিগ্রস্ত আরেক বাসিন্দা লাভলী বলেন, “আমার সব পুইড়া শ্যাষ, কিচ্ছু নেই। সাত বছর ধরে এই বস্তিতে আছি। অনেক কষ্টে তিল তিল করে টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র কিনেছিলাম। আগুন আমার সব শ্যাষ করে দিলো”।
আরেক বা‌সিন্দা গার্মেন্টসকর্মী নাসিমা বেগম জানান, বোনের ফোনে আগু‌নের খবর পান তি‌নি। ছু‌টে আসেন ব‌স্তি‌তে। তি‌নি ব‌লেন, “শুনেছি আমার ঘর পুড়ে গেছে, সব জিনিস শেষ হয়ে গেছে।”
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিদ্যুৎহীন রয়েছে কড়াইল বস্তি এলাকা। মোবাইল ফোনের আলো ও টর্চ লাইট জ্বা‌লি‌য়ে চলাচল কর‌ছেন স্থানীয়রা। ক্ষ‌তিগ্রস্ত কয়েকজন বাসিন্দাকে দেখা গেছে, যে যার যতটুকু মালামাল রক্ষা করতে পেরেছেন, অন্ধকার সড়ক ধরে তা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
আগুন‌রে কার‌ণে ওয়ারল‌্যাস মো‌ড়ে আট‌কে দেওয়া হ‌চ্ছে যানবাহনগুলোকে। সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পু‌লি‌শের পাশাপা‌শি শিক্ষার্থী ও রেড ক্রিসে‌ন্টের স্বেচ্ছা‌সেবকরা কাজ করছেন। ঘটনাস্থলে দা‌য়িত্ব পালন কর‌ছেন সেনাবা‌হিনীর সদস‌্যরাও।
এদিকে, আগুনে ঘর হারানো মানুষ রাত কাটানোর জন্য আশ্রয় নিয়েছেন মহাখালী টিএন্ড‌টি মা‌ঠে।
রাত সা‌ড়ে ৯টার দিকে মাঠে গি‌য়ে দেখা যায়, ক্ষ‌তিগ্রস্ত বেশকিছু মানুষ সেখানে পৃথকভা‌বে ব‌সে আছেন। কেউ কেউ শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে কাগজ জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছেন।
ক্ষ‌তিগ্রসত বা‌সিন্দা জা‌মিলা ব‌লেন, তি‌নি বাসাবা‌ড়ি‌তে কাজ ক‌রেন। ঘটনার সময় তি‌নি, তার মে‌য়ে ও মেয়ের জামাই বাসায় ছিলেন। স্বামী, ছে‌লে ও তার বউ ছিলেন অফি‌সে। আগুন লাগার পরপরই তার স্বামীর ফোন চু‌রি হ‌য়ে যায়। আগুনে তাদের ঘরের সবকিছু পুড়ে গেছে। কিছুই বের করতে পারেননি।
প‌লি আক্তার না‌মের বস্তির এক বাসিন্দা জানান, তিনি ইউনিমা‌র্টে চাক‌রি ক‌রেন। বি‌কাল সা‌ড়ে ৪টার দি‌কে অফিস থে‌কে বাসায় ফিরে রান্নার জন্য তরকা‌রি কাট‌তে ব‌সে‌ছি‌লেন। হঠাৎ বি‌স্ফোর‌ণের শব্দ শু‌নে বের হ‌য়ে দে‌খেন আগুন লে‌গে‌ছে। প‌রে শুধু মাত্র এক‌টি লা‌গেজ নি‌য়ে দ্রুত বের হ‌য়ে আসেন। এরপর মাঠে এসে আশ্রয় নেন তি‌নি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। স্থানীয়রা বল‌ছেন, কড়াইল বস্তির বউবাজা‌রে দ‌ক্ষিণ পা‌শে আগুনের সূত্রপাত।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও