• শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম
‘ফিডব্যাক’ ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও গিটারিস্ট সেলিম হায়দারের মৃত্যুতে রুনা লায়লার শোক মোহাম্মদপুরে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের ঝটিকা মিছিল, ককটেল উদ্ধা শীতের সবজিতে ভরপুর বাজার, তবুও কমছে না দাম ব্রয়লারের দাম বাড়ল ২০ টাকা, মাঝারি ইলিশ ১৫০০ ৫ দফা দাবি আদায়ে শাহবাগে ভোলাবাসী বিরল খনিজে চোখ ভারতের নাফিস সরাফাতসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ১৬১৩ কোটি টাকা মানিলন্ডারিং মামলা বিসিআইসিকে লাভজনক করতে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ১১ নতুন উদ্যোগের প্রস্তাব বাংলাদেশে রপ্তানী সীমিত, ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম তলানিতে বাংলাদেশে পাটভিত্তিক উৎপাদনে বড় বিনিয়োগে আগ্রহী চীন: চীনা এক্সিম ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট

বাংলাদেশে রপ্তানী সীমিত, ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম তলানিতে

প্রভাত রিপোর্ট / ১ বার
আপডেট : শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম তলানিতে ঠেকেছে। তারপরও দেশটির পেঁয়াজ রপ্তানি স্থবির। সরকারি কর্মকর্তারা পেঁয়াজ রপ্তানির এই দুরবস্থা দেখে হতবাক হলেও তার পেছনের কার হচ্ছে কৃষিপণ্যটি উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি ভারতের বিকল্প হিসেবে পাকিস্তান ও চীন থেকে পণ্যটি সংগ্রহ করা। এই পরিবর্তন শুরু হয়েছে মূলত নয়াদিল্লি বারবার অস্থায়ীভাবে পেঁয়াজ রপ্তানির বন্ধ করার কারণে।
ভারতের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একসময় ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া পেঁয়াজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। তবে গত আট মাসে বাংলাদেশ ভারত থেকে খুবই সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ কিনেছে। যদিও ঢাকার বাজারে দাম ভারতের স্থানীয় বাজারের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। অন্যদিকে সৌদি আরবও প্রায় এক বছর ধরে খুব কম পরিমাণে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করেছে। এদিকে ভারতের রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ বেআইনিভাবে রপ্তানি হচ্ছে। সেই বীজই ভারতের পেঁয়াজের ঐতিহ্যবাহী ক্রেতাদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে, যা কিনা পণ্যটির বাণিজ্যে ভারতের বহুদিনের আধিপত্যকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
আমরা আমাদের গুণমানের জন্য অতিরিক্ত দাম নিতে পারতাম। যখন আমরা দীর্ঘদিন বাজারে ছিলাম না, তখন আমাদের গ্রাহকেরা বিকল্প সরবরাহকারীর খুঁজে নিয়েছে।
হর্টিকালচার প্রোডিউস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এইচপিইএ) সাবেক প্রধান ও অভিজ্ঞ পেঁয়াজ রপ্তানিকারক অজিত শাহ বলেন, ‘আমরা আমাদের গুণমানের জন্য অতিরিক্ত দাম নিতে পারতাম। যখন আমরা দীর্ঘদিন বাজারে ছিলাম না, তখন আমাদের গ্রাহকেরা বিকল্প সরবরাহকারীর খুঁজে নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন তারা (ভারতীয় পেঁয়াজের ক্রেতা) আর গুণমান তুলনা করে না; বরং আমাদের প্রতিযোগীদের সঙ্গে দামের তুলনা করে।’
২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তার আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য এবং ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ মাসের জন্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ, ভারতীয় পণ্যের ওপর নির্ভরশীল দেশের বাজারগুলোয় পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
২০২০ সালে, ঘন ঘন পেঁয়াজ রপ্তানির নীতি পরিবর্তনের বিষয়ে ভারতকে একটি কূটনৈতিক নোটও পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার তাদের দেশের কৃষকদের সুরক্ষা ও স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে না।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে ৭ লাখ ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ কিনেছিল বাংলাদেশ। ওই অর্থবছরে ভারত থেকে মোট পেঁয়াজ রপ্তানি হয়েছিল ১৭ লাখ ১৭ হাজার টন। তার মানে বাংলাদেশ একাই আমদানি করেছিল ৪২ শতাংশ পেঁয়াজ। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে মাসে ভারত থেকে মাত্র ১২ হাজার ৯০০ টন পেঁয়াজ কিনেছে বাংলাদেশ। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার মনে করে, ঢাকায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহ কম। তবে রপ্তানিকারকেরা যুক্তি দিচ্ছেন, রপ্তানির নীতি ঘন ঘন পরিবর্তনের ফলেই (যা মূলত স্থানীয় বাজারমূল্য দ্বারা প্রভাবিত হয়) ভারতের পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো অন্যত্র কেনাকাটা করতে বাধ্য হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বোর্ড অব ট্রেডের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য পাশা প্যাটেল বলেন, ‘আমরা কেবল আমাদের ঐতিহ্যবাহী অনেক ক্রেতাকে হারাইনি, তারা ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ ব্যবহার করে পেঁয়াজে স্বাবলম্বী হতেও শুরু করেছে।’
রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন, সৌদি আরবও প্রায় এক বছর ধরে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনছে না। সরকার যখন রপ্তানিকারকদের কাছে জানতে চায়, তখন তাঁরা বলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় রপ্তানিকারকদের আমদানি অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
এইচপিইএ সরকারকে জানিয়েছে, সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা ইয়েমেন ও ইরান থেকে প্রতিযোগিতামূলক দামে পেঁয়াজ কিনছে। এ ছাড়া স্থানীয় ফসল থেকেও তাদের পর্যাপ্ত সরবরাহ পাচ্ছে। এমনকি ফিলিপাইনসও চীন থেকে না পেলে তবেই ভারতীয় পেঁয়াজ কেনে।
২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত সৌদি আরবে ৫৭ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল, যা পরবর্তী বছরগুলোয় কমতে কমতে থাকে। চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত মাত্র ২২৩ টন পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করেছেন সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ ব্যবহার করে ক্রমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। এ কারণে রপ্তানিকারকেরা হর্টিকালচার কমিশনারের কাছে প্রতিযোগী দেশগুলোয় পেঁয়াজের বীজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
এইচপিইএর সহসভাপতি বিকাশ সিং বলেছেন, ‘বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও অন্য প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ ব্যবহার করে পেঁয়াজ উৎপাদন করছে। এই প্রবণতা ভারতীয় কৃষকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বীজ চীন ও পাকিস্তানেও ভারতীয় পেঁয়াজের বড় ধরনের চাহিদা রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও