প্রভাত ডেস্ক: বিরল খনিজ চুম্বকের ক্ষেত্রে বৈদেশিক নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন ও স্বনির্ভরতার পথে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য এবং সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক টানাপড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘স্কিম টু প্রোমোট ম্যানুফ্যাকচারিং অব সিন্টার্ড রেয়ার আর্থ পার্মানেন্ট ম্যাগনেট’ নামে একটি বিশেষ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ৭ হাজার ২৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশেই বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণ করে শক্তিশালী স্থায়ী চৌম্বক পদার্থ তৈরি শুরু করা হবে।
বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় সরকারের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রথম পর্যায়ে ভারতে বাৎসরিক প্রায় ৬ হাজার টন বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণ করে শক্তিশালী চৌম্বক পদার্থ উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি করা হবে। এতে শুধু ‘রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট’ উৎপাদনেই নয়, দীর্ঘমেয়াদে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ও কাঁচামালেও ভারত স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারবে।
নয়া দিল্লি দাবি করছে, অত্যাধুনিক শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে দেশীয় উৎপাদন বাড়লে আন্তর্জাতিক বাজারেও ভারতের অবস্থান শক্তিশালী হবে।
বর্তমানে নিওডিমিয়াম এবং সামারিয়াম-জাতীয় বিরল খনিজ থেকে শক্তিশালী চৌম্বক পদার্থ তৈরি হয়। এগুলো ইলেকট্রিক মোটর, ড্রোন, স্মার্টফোন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং বিমান পরিবহন শিল্পে অপরিহার্য। এই খনিজগুলো বাজারে বহু বছর ধরে চীনের প্রায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশই বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে চীন রপ্তানিতে কড়াকড়ি শুরু করায় আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। বিভিন্ন দেশ অভিযোগ করে, চীন কৌশলগত কারণে ‘রেয়ার আর্থ’ সরবরাহে নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে। এর জেরে ভারতেও প্রায় ছয় মাস বিরল খনিজ আমদানিতে বিপত্তি দেখা দেয়। পরে গত মাসে শর্তসাপেক্ষে চীন থেকে ভারতে রপ্তানি শুরু হয়। তবে শর্ত অনুযায়ী ভারত চীন থেকে আনা খনিজ আমেরিকাকে রপ্তানি করতে পারবে না এবং সামরিক খাতে ব্যবহারও নিষিদ্ধ।
আন্তর্জাতিক জটিল পরিস্থিতিতে এমন কৌশলগত খনিজের ক্ষেত্রে বৈদেশিক নির্ভরতা দেশের প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি ব্যবস্থার জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তকে ‘যথোপযুক্ত’ এবং ‘কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নয়া দিল্লি আরও দাবি করে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে স্থায়ী চৌম্বক পদার্থের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। বর্তমানে এ ধরনের উপাদানের প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভারত শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণেই নয়, ভবিষ্যতে একটি বড় রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও উঠে আসতে পারে—এমনটাই আশা করছে নয়াদিল্লি।