মো. বাবুল শেখ, পিরোজপুর : পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার সেখমাটিয়া ইউনিয়নের বাকসী এস এম দারুচ্ছুনাত দাখিল মাদ্রাসার অফিস কক্ষ ব্যক্তিগত থাকার ঘরে পরিণত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সুপার আব্দুল মান্নান—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এতে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবক ও স্থানীয়র।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে—প্রতিষ্ঠানটিতে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে না। স্থানীয়দের দাবি, প্রায়ই দুপুর একটা থেকে দেড়টার মধ্যেই মাদ্রাসায় ছুটি দিয়ে দেয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে—মাদ্রাসার চারটি কক্ষের মধ্যে দুটি কক্ষই বসবাসের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। খাটে চাদর ও বালিশ বিছানো, কক্ষে পর্দা ঝোলানো, রান্না করার আসবাবপত্র —সব মিলিয়ে অফিস কক্ষটি পুরোপুরি বসতঘরে রূপ নিয়েছে। এ দৃশ্য দেখে স্থানীয়দের মধ্যে বিস্ময় ও নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক বাবুল শেখ বলেন, আমি দেশে আসার পর থেকে দেখি মাদ্রাসার সুপার সাহেব অফিস কক্ষে বসবাস করেন। তিনি বলেন , সরেজমিনে দেখলাম খাট পাতানো এবং রান্নাবান্না হচ্ছে লাইব্রেরির ভিতরে। বাবুল বলেন, আইনগতভাবে অধ্যক্ষ এখানে থাকতে পারেন না । তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষক এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখানে ছেলে মেয়েদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও তিনি এভাবে থাকতে পারেন না। তিনি বলেন, লাইব্রেরিতে রান্না করার সময় দুর্ঘটনা ঘটলে কে নিবে এ দায়ভার । কুকারে রান্না করার সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে । এখানে মাদ্রাসার সব কাগজপত্র রয়েছে সে ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করি । রান্না করার কাজটা অন্য কোথাও হওয়া উচিৎ ।
শিক্ষার্থী অভিভাবক আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, মাদ্রাসাটি ১২টা একটার মধ্যেই ছুটি হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি এমন ভাবে লক্ষ্য করছি।
অভিভাবক বেদার হোসেন শেখ বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর পূর্বে তিনি এখানে এসেছেন। বহু বছর ধরে তিনি এখানে রাতে থাকেন এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ।
অভিভাবকদের অভিযোগ—বাসা ভাড়া না নিয়ে সুপার মাদ্রাসার ভেতরই নিজের বসত বাড়ি বানিয়ে নিয়েছেন। তাদের ভাষায়, আশেপাশের এলাকায় ভাড়া নিয়ে থাকার সুযোগ থাকলেও তিনি তা না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন।এখানে ছেলেমেয়েরা এ পরিবেশে পড়াশুনা করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন । কারন যে কোনো মুহূর্তে ইভটিজিংয়ের শিকার হতে পারে শিক্ষার্থীরা এমন অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা তুহীন বলেন, মাদ্রাসার সুপার আঃ মান্নান সাহেব দীর্ঘদিন যাবত লাইব্রেরি কক্ষে থাকেন এবং রান্না করেন একই রুমে । তবে আমার মতে এতে করে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ।
মাদ্রাসা মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ইলিয়াস বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন তবে আমি মনে করি লাইব্রেরি কক্ষে থাকা এবং রান্না করায় একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয় । তবে তার অবস্থান পরিবর্তন করা উচিত । এ মাদ্রাসা দুপুর ১২ টা থেকে ১টার মধ্যে ছুটি হয় । কোন নিয়মে চলে জানা নেই । এ ব্যপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি ।
এই প্রতিষ্ঠানের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোঃ বাইজিদ শেখ বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকেই লাইব্রেরি কক্ষে সুপারিনটেনডেন্ট সাহেব থাকেন এবং এখানে রান্না করেন । তবে লাইব্রেরিতে এভাবে থাকা ঠিক নয় বলে জানান এ শিক্ষক ।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপার আঃ মান্নান বলেন, দুপুর একটা থেকে দেড়টার মধ্য ছুটি দেওয়ার বিষয়ে যে বলা হচ্ছে—এরকম কোনো ইতিহাস নেই।
অফিস কক্ষে রাত্রি যাপনের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা ও শিক্ষকেরা থাকে, আপনারা সেই জায়গা দেখেন না। দেখেন এসে আলিয়া মাদ্রাসা। এখানে আমার আর কোনো বক্তব্য নেই।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম আবু দাউদ বলেন, মাদ্রাসার রুম কম থাকায় সুপার আঃ মান্নান সাহেব লাইব্রেরিতে থাকেন এবং রান্না করেন । এ ব্যাপারে শিক্ষা অফিসের অনুমতি ও মাদ্রাসা ম্যানেজমেন্ট কমিটির অনুমতি আছে বলে জানান । তবে লিখিত কোনো অনুমতি পত্র তিনি দেখাতে পারেননি । তাকে প্রশ্ন করা হয় সকাল কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত মাদ্রাসার ক্লাস চলে এমন প্রশ্নে এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম আবু দাউদ সাংবাদিকদের সংঙ্গে খারাপ আচরণ করেন । এ সময় অধ্যক্ষ আঃ মান্নান অনুপস্থিত ছিলেন ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল আলম বলেন, এরকম বিষয় আমার জানা নেই। যদি করে থাকে সেটা সম্পূর্ণ অনিয়ম। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।