প্রভাত ডেস্ক: নারীদের মানসিক ও সামাজিক (সাইকোসোশাল) ক্ষমতায়ন খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিসহ আন্তর্জাতিক আটটি এনজিও, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থা এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ গবেষণায় এর প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। ‘সাইকোসোশাল’ বলতে বোঝানো হয় মানুষের সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে তার চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণের পারস্পরিক সম্পর্ককে।
এই গবেষণাটিতে ক্ষুধা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা ও স্যানিটেশনসংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে একসঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বড় পরিসরে প্রয়োগ করা সম্ভব এমন প্রশিক্ষণ মডিউল নিয়ে এখানে কাজ করা হয়েছে। এই গবেষণা পদ্ধতিতে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্নতার মতো বিষয়গুলো একসাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো মানুষের সাইকোসোশাল ক্ষমতায়নের সঙ্গে সম্পর্কিত।
“ইম্প্রুভিং ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সিকিউরিটি বাই ইনহেনসিং উইম্যানস এমপাওয়ারম্যান্ট” নামে এই প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে নেদারল্যান্ডসের ডাচ রিসার্চ কাউন্সিল।
এই গবেষণায় যুক্ত আটটি প্রতিষ্ঠান হলো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের (ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ) হিউম্যানিটারিয়ান হাব, ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স, নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব গ্রোনিঙ্গেন, ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার গ্রোনিঙ্গেন, ইথিওপিয়ার হারামায়া ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই), জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব পাসাউ, এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ইথিওপিয়ান মাইক্রোফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনস।
সম্প্রতি ঢাকার একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন হিউম্যানিটারিয়ান হাবের অ্যাসিসটেন্ট সায়েন্টিস্ট সায়রা পারভীন জলি। একইসাথে তিনি ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের দাবি কর্মসূচির নারী ঋণগ্রহীতাদের নিয়ে পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রভাব নিয়েও কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, গবেষক ও ডেভেলপমেন্ট পার্টনাররা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তারা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের পেছনে কোন কোন মনস্তাত্ত্বিক বিষয় কাজ করছে সেগুলো নিয়ে কথা বলেন। একই সঙ্গে, মনোসামাজিক উদ্যোগের সরাসরি প্রভাব এবং পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) কার্যক্রমের প্রভাব আলাদা করে বোঝা যায় কিনা- সেটা নিয়েও আলোচনা করেন।
আলোচকরা বলেন, ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণে তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে নারীদের পেশা এবং স্বামী–স্ত্রীর বয়সের ব্যবধানের মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, লিঙ্গভিত্তিক সামাজিক সম্পর্ক ও জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, সেটিও তারা তুলে ধরেন।
ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ এর ডিন ড. লরা রেইখেনবাখ বলেন, “নারীর ক্ষমতায়ন কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে এমন একটি দেশে, যেখানে দীর্ঘদিনের নানা চ্যালেঞ্জ মানব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে।”
অনুষ্ঠানে নারীর পুষ্টি সমস্যার ধারাবাহিকতা নিয়ে কথা বলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. জিনাত আরা। তিনি বলেন, “আজ যে মেয়ে অপুষ্টিতে ভুগছে, সেই মেয়েটিই আগামীতে অপুষ্ট মা হবে।” তিনি আরও বলেন, “তাই নারীর পুষ্টির সমস্যা সমাধান করতে হলে এই চক্রাকার প্রক্রিয়াকে ভাঙতে হবে।” ড. জিনাত আরো বলেন, লিঙ্গ সমতা শুধু নৈতিক বিষয় নয়। ভালো স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য বাস্তবসম্মত উপায়।
আইসিডিডিআরবি এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ছোটবেলা থেকেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, “অপুষ্টি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে আসে।” তিনি আরও বলেন, নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য জ্ঞান, শিক্ষা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং মানসিক শক্তি দরকার। ড. আহমেদ আরো বলেন, “এক্ষেত্রে স্বামীদের সম্পৃক্ত করা খুবই জরুরি। পুরুষরা যখন মাতৃস্বাস্থ্যে সহায়তা করে, তখন পুরো পরিবারই এতে উপকৃত হয়।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। তিনি বলেন, সরকার এসব বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় লাগাতে চায়। তিনি বলেন, “নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে আমরা ২৫ বছরের একটি কৌশলগত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।” তিনি আরও বলেন, কৃষি খাতই দেশের উন্নয়নের রানওয়ে হতে পারে।
ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ এর প্রফেসর ড. কাওসার আফসানা বলেন, ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরিকল্পনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে কার্যক্রম বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি