প্রভাত ডেস্ক: সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন। এই পদক্ষেপকে বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং ভিন্নমতের অধিকার চর্চার চরম লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেছে সংস্থাটি। আজ বৃহস্পতিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি এমন মন্তব্য করেছে।
সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গত রোববার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরদিন রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দিনই পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত তাঁর পাঁচ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আর্টিকেল নাইনটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আনিস আলমগীর টেলিভিশন টক শোতে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্যের জন্য পরিচিত। ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। পরদিন মামলা দায়েরের আগে কয়েক ঘণ্টা তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল।
মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, কোনো অভিযোগ ছাড়াই একজন সাংবাদিককে আটকে রাখা এবং পরে নিরাপত্তার অজুহাতে বিশেষ আইন প্রয়োগ করা অমার্জনীয় এবং এটি ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের মূলনীতির পরিপন্থী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মামলায় অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মডেল মারিয়া কিশপট্ট ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজের নামও রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ’ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এটি ভীতি প্রদর্শনের উদ্বেগজনক ধারা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আরেক সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেলকেও ডিবি কর্মকর্তারা আটক করে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা তাঁদের কার্যালয়ে বসিয়ে রাখার পর মুক্তি দিয়েছিলেন।
আর্টিকেল নাইনটিন বলেছে, আনিস আলমগীরের গ্রেপ্তার সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বর দমনের একটি বিস্তৃত ও উদ্বেগজনক প্রবণতার প্রতিফলন। এ ধরনের পদক্ষেপ অতীতের সেই চর্চাগুলোর স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যেখানে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা ভিন্নমত প্রকাশের কারণে হয়রানি, নির্বিচার আটক এবং মিথ্যা মামলার শিকার হতেন।
মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, সাংবাদিকতার বিধিবদ্ধ কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী বিধানের ব্যবহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারণ, এটি ন্যায়বিচারের নীতিকে ক্ষুণ্ন করে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট করে। এসব ঘটনা যাঁরা মতপ্রকাশে সরব, তাঁরা যে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মুখে রয়েছেন এবং এর ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বৃহত্তর গণতান্ত্রিক পরিবেশে যে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়, তা-ই তুলে ধরেছে।
আনিস আলমগীরকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে এবং তিনিসহ অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন। মানবাধিকার সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে মিজানুর রহমান সোহেলসহ সাংবাদিকদের ওপর হয়রানি বন্ধ করার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলার আহ্বান জানাই।’
আর্টিকেল নাইনটিন বলেছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের মৌলিক বিষয়। বাংলাদেশকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে সাংবাদিকেরা এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সময়ে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের শিকার হওয়ার ভয় ছাড়াই কাজ করতে পারবেন।