আজ
|| ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
‘১০ মাসে আটটি যুদ্ধ থামিয়েছি’, ভাষণে ট্রাম্পের দাবি
প্রকাশের তারিখঃ ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
প্রভাত ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০ মাসে বিশ্বে অন্তত আটটি যুদ্ধ বন্ধের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। নিজের জনপ্রিয়তা কমার মধ্যেই ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনের ২০২৬ সালের কর্মসূচি উপস্থাপন করতে মার্কিন জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেখানেই এ দাবি করেন তিনি। হোয়াইট হাউসে বুধবার সন্ধ্যায় দেয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘শুল্ক’ বা ট্যারিফ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় শব্দ। এটি এমন একটি নীতি, যা বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্ককে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মার্কিন শক্তি পুনরুদ্ধার করেছি, ১০ মাসে আটটি যুদ্ধ থামিয়েছি, ইরানের পারমাণবিক হুমকি ও গাজার যুদ্ধ শেষ করেছি। ৩ হাজার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়েছি।’
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন কিছু সংঘাতের স্থায়ীভাবে সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে, তবে তাঁর ‘আটটি যুদ্ধ বন্ধের’ দাবি প্রায়ই অতিরঞ্জিত মনে হয়। ট্রাম্প আগেও মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে সংঘাত মিটমাটের স্বীকৃতি নিয়েছেন। কিন্তু এটি প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ নয়, বরং নীল নদের দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক বিরোধ। তাঁর তালিকায় কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মধ্যে সংঘাত শেষ করার কথাও রয়েছে। কিন্তু সেটি এখনো চলছে, যদিও তাঁর মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তি হয়েছে।
ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনের অনেক সাফল্যকে নিজের শুল্কনীতির সঙ্গে যুক্ত করেছেন, যদিও বিষয়টি কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়েছে ও ভোটারদের কাছে তা জনপ্রিয় হয়নি।
‘আমি ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ ট্রিলিয়ন (১৮ লাখ কোটি) ডলারের রেকর্ড বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছি। এর অর্থ নতুন চাকরি, বেতন বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি, নতুন কারখানা চালু ও জাতীয় নিরাপত্তা শক্তিশালী হওয়া। এ সাফল্যের অনেকটাই ট্যারিফের কারণে। আমার প্রিয় শব্দ ট্যারিফ, যা বহু দশক ধরে অন্যান্য দেশ আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে,’ বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প বলেন, ‘কিন্তু এখন আর নয়। প্রতিষ্ঠানগুলো জানে, যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করে, সেখানে কোনো ট্যারিফ নেই। এ জন্য তারা রেকর্ড সংখ্যায় এ দেশে ফিরছে। তারা এমন কারখানা ও প্ল্যান্ট তৈরি করছে, যা আমরা আগে দেখিনি।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ১১ মাস আগে তিনি বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে একটি ‘অরাজক অবস্থা’ পেয়েছিলেন এবং এখন তা ‘ঠিক করছেন’। ট্রাম্প বাইডেন সরকারের নানা বিষয়কে সমস্যার তালিকায় ফেলেন, যেমন উন্মুক্ত সীমান্ত, অপরাধ, নারীদের খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার পুরুষদের অংশগ্রহণ, সবচেয়ে খারাপ বাণিজ্যচুক্তি এবং অসুস্থ ও দুর্নীতিগ্রস্ত কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রথম দিন থেকেই আমি আমাদের দক্ষিণ সীমান্তে অনুপ্রবেশ থামানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি। ৭ মাস ধরে শূন্য অবৈধ অভিবাসী আমাদের দেশে প্রবেশ করতে পেরেছেন। এটি এমন একটি কাজ, যা সবাই অসম্ভব বলে মনে করেছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ট্রাম্প বলেন, ‘চার বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে এমন রাজনীতিবিদেরা শাসন করেছেন, যাঁরা শুধু অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী, অবৈধ অভিবাসী, পেশাদার অপরাধী, করপোরেট লবি, কারাবন্দী, সন্ত্রাসী এবং সর্বোপরি ভিন্ন দেশের স্বার্থে লড়েছেন; যাঁরা আগে কখনো একইভাবে আমাদের সুযোগ নিয়েছে।’
ট্রাম্প দাবি করেন, হোয়াইট হাউসে ফেরার পর, কয়েক মাসের মধ্যে তাঁরা সবচেয়ে খারাপ অবস্থান থেকে সেরা অবস্থায় চলে এসেছেন।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন কিছু সংঘাতের স্থায়ীভাবে সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে, তবে তাঁর ‘আটটি যুদ্ধ বন্ধের’ দাবি প্রায়ই অতিরঞ্জিত মনে হয়। ট্রাম্প আগেও মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে সংঘাত মিটমাটের স্বীকৃতি নিয়েছেন। কিন্তু এটি প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ নয়, বরং নীল নদের দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক বিরোধ। তাঁর তালিকায় কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মধ্যে সংঘাত শেষ করার কথাও রয়েছে। কিন্তু সেটি এখনো চলছে, যদিও তাঁর মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তি হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর প্রশাসনকে অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে কঠোর নীতি গ্রহণের জন্যও কৃতিত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে এখন পর্যন্ত ‘শূন্য অবৈধ অভিবাসী’ দেশে প্রবেশ করতে পেরেছেন। তাঁর কথায়, ‘প্রথম দিন থেকেই আমি আমাদের দক্ষিণ সীমান্তে অনুপ্রবেশ থামানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি। ৭ মাস ধরে শূন্য অবৈধ অভিবাসী আমাদের দেশে প্রবেশ করতে পেরেছেন। এটি এমন একটি কাজ, যা সবাই অসম্ভব বলে মনে করেছিলেন।’
ট্রাম্প মার্কিন সেনাদের জন্য বড়দিনের এক বিশেষ আগাম উপহারের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ১৪ লাখ ৫০ হাজারের বেশি সামরিক সদস্যকে ‘ওয়ারিয়র ডিভিডেন্ড’ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক সেনাকে ১ হাজার ৭৭৬ ডলার পাঠাচ্ছি।’
বিরল সন্ধ্যাকালীন ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে তিনি ভোক্তাপণ্যের উচ্চমূল্যের জন্য তাঁর ডেমোক্র্যাট পূর্বসূরির ওপর দায় চাপান। নিজ দল রিপাবলিকান পার্টি আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ার প্রস্তুতির মধ্যে এ ভাষণ দিলেন তিনি। ২০ মিনিটের কম সময়ের এ ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘১১ মাস আগে আমি একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা পেয়েছিলাম, আর আমি সেটি ঠিক করছি।’ ভাষণটি তিনি খুব দ্রুতগতিতে দেন।
রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট প্রায়ই অভিযোগ করেন, তাঁর কাজের জন্য তিনি যথাযথ স্বীকৃতি পান না। এ ভাষণে পণ্যের উচ্চমূল্য মোকাবিলায় তিনি তেমন কোনো নতুন নীতিগত উদ্যোগ ঘোষণা করেননি; বরং সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, আগের বাণিজ্যচুক্তি, অভিবাসী ও তাঁর ভাষায় একটি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা’র ওপর দায় চাপান। ট্রাম্প এ বছর তাঁর প্রশাসনের কাজের প্রশংসাও করেন। তিনি বলেন, সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ কমানো থেকে শুরু করে কিছু পণ্যের দাম কমানোর মতো নানা ক্ষেত্রে তাঁর সরকার কাজ করেছে।
হলিডের সাজসজ্জায় ভরা একটি কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই অর্থটা সরাসরি মানুষের হাতে যাক; যেন আপনারা নিজেরাই স্বাস্থ্যসেবা কিনতে পারেন। এতে একমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিমা কোম্পানিগুলো।’
এ ভাষণ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে উদ্বেগের জবাব দেওয়ার একটি সুযোগ ছিল। অথচ ট্রাম্প আগেও এসব উদ্বেগকে বারবার ডেমোক্র্যাটদের ‘ভাঁওতাবাজি’ বলে উল্লেখ করেছেন। বুধবারও তিনি বাইডেনের শাসনামলের দিকে আঙুল তুললেও স্বীকার করেন, দাম এখনো বেশি। তবে তাঁর দাবি, অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রস্তুত অবস্থায়’ রয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এই উচ্চ দাম কমাচ্ছি এবং খুব দ্রুতই তা নামিয়ে আনছি।’
আগামী বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইছে। অন্যদিকে বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ ও স্বাস্থ্যনীতি বিষয়ে মতভেদের বিষয় তুলে ধরে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত রয়টার্স/ইপসোসের এক নতুন জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিক অর্থনীতি পরিচালনায় ট্রাম্পের কাজকে অনুমোদন করছেন।
ট্রাম্পের ভাষণ হোয়াইট হাউসের ‘ডিপ্লোম্যাটিক রিসেপশন রুম’ থেকে দেওয়া হয়। সাধারণত প্রেসিডেন্টরা এ ধরনের ভাষণ ওভাল অফিস থেকে দিয়ে থাকেন।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.