• সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড চট্টগ্রাম কাস্টমে

প্রভাত রিপোর্ট / ১২৯ বার
আপডেট : শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫

প্রভাত সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ৭৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৭৫৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে ৬ হাজার ৬৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। এর আগের বছর ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার ৩৫০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের গত পাঁচ অর্থবছরের কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হ্যান্ডলিং হয়েছে রেকর্ড ৩২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭ কন্টেইনার, ১৩ কোটি ৭ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন কার্গো। একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে ৪ হাজার ৭৭টি জাহাজ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হ্যান্ডলিং হয় ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ একক কন্টেইনার। একই সময়ে হ্যান্ডলিং হয় ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিকটন কার্গো। জাহাজ আসে ৩ হাজার ৯৭১টি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে হ্যান্ডলিং হয় ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫ একক কন্টেইনার। ওই বছর ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়। জাহাজ আসে ৪ হাজার ২৫৩টি।
নানা অনিশ্চয়তার মধ্যেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি ও রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নতুন রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি পণ্য আমদানি-রফতানিতেও অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। অপরদিকে কাস্টমস হাউস চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় করেছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কমে আসা, এলসি নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি, ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক বাজারে তৈরি পোশাকসহ রফতানিমুখী পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সাফল্য এসেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ও ডেপুটি কমিশনার সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস ৭৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে। যা অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। তবে গেলো অর্থবছরটিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বছরজুড়ে আমরা বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি– ধর্মঘট, আন্দোলন, পরিবহন বন্ধ। তবু রাজস্ব আদায়ে আমরা ইতিবাচক ধারায় ছিলাম।’
চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে গড়ে উঠেছে ১৯টি বেসরকারি ডিপো। এসব ডিপো দেশের এই প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে রফতানি হওয়া পণ্যের প্রায় শতভাগ, ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য এবং খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে থাকে।
বিকডা’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বেসরকারি ডিপোগুলো থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাহাজের মাধ্যমে রফতানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার গেছে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৯৯৪ একক। এর আগের বছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গেছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৬ একক কনটেইনার। একইভাবে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশে রফতানি পণ্য গেছে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৮৬২ একক কনটেইনার।
এ বিষয়ে ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন শিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গেল বছর রফতানিতে রেকর্ড গড়েছে। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় সর্বোচ্চ। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কমে আসা, এলসি নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি, ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক বাজারে তৈরি পোশাকসহ রফতানিমুখী পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সাফল্য এসেছে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর এবার কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড গড়েছে। একইভাবে কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিংও বেড়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায়। এ সাফল্যের পেছনে রয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সরাসরি দিকনির্দেশনা, মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতা, বন্দরের বোর্ড সদস্যদের তদারকি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিকতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চালু করা হয়েছে ই-গেট পাস, অটোমেটেড কনটেইনার অপারেটিং সিস্টেম, আধুনিক স্ক্যানিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এইসব ব্যবস্থার ফলে বন্দরে পণ্য খালাস ও ডেলিভারির গতি বেড়েছে, কমেছে কাগজপত্রের জটিলতা। এ ছাড়াও বন্দর ব্যবহারকারীদের সময়মতো ডেলিভারি গ্রহণ, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয় এবং অংশীজনদের সহযোগিতাও কার্যক্রমকে গতিশীল করেছে। তবে অর্থবছরের শেষের দিকে এনবিআরের শাটডাউন কর্মসূচি না থাকলে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যা ৩৩ লাখ একক ছাড়িয়ে যেত বলে মনে করা হচ্ছে।’তিনি জানান, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের মধ্যে সমন্বয়, পণ্য খালাসের সময় হ্রাস, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিও এ অর্জনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি বন্দরের ভেতরে ও বাইরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রেল ও নৌপথে পণ্য পরিবহনের বিকল্প ব্যবস্থাপনা এ সাফল্যে সহায়ক হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নন প্যাকার ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুব রানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডলার সংকট, এলসি নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় কিছুটা গতি বৃদ্ধিসহ দেশে দিন দিন ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠছে। এ কারণে রফতানি দিন দিন বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ব্যবসার প্রসারে যেসব সমস্যা আছে সেসব বাঁধা না কাটলে আগামীতে রফতানিতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিএমসিসিআই) সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘ডলার সংকট এখনও পুরোপুরি কাটেনি। গত অর্থবছরে অবরোধসহ নানা কারণে প্রায় দুই মাস বন্দর-কাস্টমস অচল ছিল। ওই সময় ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য পাঠাতে না পেরে এবং ডেলিভারি নিতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমনকি বন্দর থেকে সময়মতো পণ্য ডেভিলারি নিতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী চারগুণ বেশি জরিমানা গুনেছেন। যে কারণে ব্যবসায়ীরা এত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়তে সামগ্রিক প্রয়াস প্রয়োজন।’দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। দেশের সমুদ্রবন্দর দিয়ে পরিবহন করা পণ্যবাহী কনটেইনারগুলোর প্রায় ৯৮ শতাংশ এ বন্দর দিয়ে পরিবহন করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও