প্রভাত রিপোর্ট: আওয়ামী লীগ সরকার পতন আন্দোলনের যুগপৎ সঙ্গী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে এক হাত নিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ‘অপপ্রচারের’ জন্য জামায়াতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, ‘যারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুকম্পায় এ দেশে রাজনীতি করতে পেরেছেন, এখন তার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে আপনারা টার্গেট করেছেন। বুক-পিঠ বলে আপনাদের কিছু নেই। আপনারা সবসময় সুবিধা ও ধান্দা খুঁজে বেড়ান’
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে কুড়িগ্রাম শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থানে কুড়িগ্রামে জুলাই-আগস্ট-২০২৪ ছাত্রজনতার আন্দোলনে কুড়িগ্রাম জেলায় ১০ শহীদ পরিবারের পাশে আমরা বিএনপি পরিবার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তারেক রহমানের প্রতি হিংসাবোধ থেকে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে মন্তব্য করে রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘এ দেশের মানুষের হৃদয়ের অংশ হয়ে গেছেন তারেক রহমান। এ কারণে কেউ কেউ হিংসায় ভুগছেন।’
জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলোকে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ‘মানুষের জন্য, মানুষের কণ্ঠের যে স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল সেটা উদ্ধার করার জন্য যারা জীবন দিয়েছে, যারা হাত, পা, চোখ দিয়েছে, যাদের শরীরের মধ্যে অসংখ্য বুলেট এখনও রয়ে গেছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যার (তারেক রহমান) মানবিক অনুভূতি; তাকে আপনারা চিহ্নিত করছেন নানাভাবে। কারা করছেন? যারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুকম্পায় এ দেশে রাজনীতি করতে পেরেছেন।’
জামায়াতকে উদ্দেশ করে রিজভী আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মারা গেলেন, এরশাদ বন্দুকের নল দিয়ে গণতন্ত্র হত্যা করলো। সেই এরশাদের অধীনে কেউ যাবে না বললো। আপনারা চলে গেলেন। কার সঙ্গে? -শেখ হাসিনার সঙ্গে। সবসময় সুবিধা খুঁজে বেড়ান! সবসময় ধান্দা খুঁজে বেড়ান! বিএনপি যায়নি, বেগম খালেদা জিয়া যাননি। তিনি (খালেদা জিয়া) জনগণের কাছে যে অঙ্গীকার করেছেন সেখান থেকে সরেননি।’
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘ইসলামের নামে রাজনীতি করেন। ইসলামের মূল কথাটাইতো হচ্ছে, তুমি অঙ্গীকার, ওয়াদা ভঙ্গ করো না। আপনারা ইসলামের নামে রাজনীতি করেন আর আপনারা প্রতি পদে পদে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন! আপনাদের ছাত্রদেরকে দিয়ে বিভিন্ন লেখালেখি করছেন। আপনারা অনেক আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছেন। আমরা কিন্তু জানি, এটা আপনারাই করছেন। কিন্তু আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের বলেছি, খবরদার কোনও উসকানিতে পা দেবেন না।’
‘ইসলামের জন্য যদি কারও অনুভূতি থাকে সেটাতো বিএনপির। বাংলাদেশের সংবিধানে কে আল্লাহর নাম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করেছিলেন, কে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস সংযোজন করেছিলেন- তিনি জিয়াউর রহমান। ইসলামের নাম নিয়ে রাজনীতি করে খালি সুযোগসন্ধানী কাজ করবেন, এটা কিন্তু মানুষ কখনও গ্রহণ করবে না, মানুষকে আপনি কনভিন্স (সন্তুষ্ট) করতে পারবেন না,’ যোগ করেন রিজভী।
বিএনপি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘আজকে আপনারা যারা বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করছেন, মিছিল করছেন তারেক রহমান সাহেবের নামে- এটার উদ্দেশ্য ভালো নয়। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা কোনও না কোনোভাবে ওই পরাজিত আওয়ামী দোসরদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করছেন। দেশের মানুষ শান্তি চায়, দেশের মানুষ শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন চায় না। আবার সেই দুঃশাসন চায় না।’
ঢাকার মিটফোর্ডের ঘটনার উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘একটা পরিবারে অনেক সন্তানের মধ্যে দুই একটা দুষ্ট সন্তান থাকতে পারে। অনেক পরিবার দেখেছি, ছেলে মাদকসেবী, তাকে নিজেরাই জেলখানায় পাঠিয়েছে। এমন দৃষ্টান্ত আছে। (মিটফোর্ডে) যাদেরকে আমরা দেখলাম নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডে করতে, ওদেরকে কি বিএনপি কোনও ধরনের আশকারা দিয়েছে? সঙ্গে সঙ্গেই যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারেক রহমানের নির্দেশে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’
আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদসহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। পরে চব্বিশের জুলাই-আগস্ট শহীদ পরিবারের মাঝে সহায়তা হস্তান্তর করা হয়।