প্রভাত রিপোর্ট: সম্প্রতি নতুন করে এক লাখ ২৪ হাজার ১২৮ জন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের তথ্য রয়েছে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। এই হিসাবের বাইরেও নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের তথ্য সরকারি হিসাবে নেই। স্থানীয় সূত্রে নতুন অনুপ্রবেশকারীদের তথ্য রয়েছে। নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের একটি অংশের নিবন্ধন নেই। রোহিঙ্গা নেতা দীল মোহাম্মদ জানান, গত এক বছরে কমপক্ষে দেড় লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে কক্সবাজারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো প্রায় প্রতিদিন ধাপে ধাপে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে।
মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সহিংসতায় আবারও বাংলাদেশমুখী হচ্ছে রোহিঙ্গারা। সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরের বেশ কয়েকটিতে এসে তারা আশ্রয় নিয়েছে। সরকারি হিসাবে তাদের নাম নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে এখন পর্যন্ত অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরবর্তী কয়েক মাসে। গত প্রায় আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় আবার তাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প সূত্র জানায়, গত সোমবার কমপক্ষে ৩০ জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারে অনুপ্রবেশ করেছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজার সফরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত এক বছরের মধ্যে কক্সবাজারে এটি হবে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিতীয় সফর। পর্যবেক্ষকমহল মনে করছে, তাঁর দুইবারের কক্সবাজার সফর ঘটছে কেবল রোহিঙ্গাবিষয়ক সমস্যাকে কেন্দ্র করেই। প্রধান উপদেষ্টার কক্সবাজার সফর নিয়ে কেবল রোহিঙ্গা ক্যাম্প নয়, গোটা কক্সবাজার জেলায় এখন আলোচনা চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী মাসে (৩০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠেয় রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন সামনে রেখে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজার সাগরপারের ইনানী সেনা রেস্টহাউসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমরান হোসাইন সজীব বঠকটির তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আরআরআরসি কমিশনারের কার্যালয় বৈঠকটি নিয়ে কাজ করছে। বৈঠকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ রোহিঙ্গাসংশ্লিষ্ট দেড় শতাধিক ব্যক্তি যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিবকে সঙ্গে নিয়ে গত রমজান মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের এসেছিলেন। ওই সময় রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার আশা-জাগানিয়া বক্তব্য নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বস্তি নেমেছিল। এবারের আসন্ন বৈঠক নিয়েও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে।
কয়েক দিনে এসেছে শতাধিক রোহিঙ্গা। তারা ভেলায় চড়ে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে। তবে তারা ব্যাপক হারে বাংলাদেশে ঢুকতে পারছে না।
রাখাইনের বুথিডং থেকে কলাগাছের ভেলায় চড়ে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসতে চাইছে তারা। অনুপ্রবেশের জন্য মংডু সীমান্তে জড়ো হয়েছে দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি যারা ঢুকেছে তারা দালালের মাধ্যমে নৌপথে টেকনাফে অনুপ্রবেশ করেছে ধাপে ধাপে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা সংঘাত চায় না, তারা শান্তিমতো নিজ দেশে ফিরতে চায়। তারা ‘কুলাসামাজ্ঞা’র (মায়ানমারের ভাষায় জাতিসংঘের নাম) কাছে নিজ দেশে ফেরার আকুতি জানাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সীমান্তে নজরদারি কঠোর করা হয়েছে। মায়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির অনেক সদস্য আরাকান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে একজন সশস্ত্র সদস্যসহ তিনজন বাংলাদেশে ঢোকার পর আটক হয়েছেন বিজিবির হাতে। আটক আরাকান আর্মির সদস্যরা বিজিবিকে জানিয়েছেন, আরাকানের ক্যাম্পগুলো থেকে সম্প্রতি তিন শতাধিক আরাকান আর্মির সদস্য পালিয়ে গেছে। তারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় বিজিবি সীমান্তে কড়াকাড়ি আরোপ করেছে। এ কারণে ওপার থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ আগের মতো না হলেও অনেকেই সীমান্তের চোরাই পথে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে ঢুকছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাফ নদ দিয়ে রাতের বেলা ভেলায় করেও রোহিঙ্গারা আসছে উখিয়া-টেকনাফে।
নাফ নদের পূর্ব তীরের পাশের মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডু এলাকার বেশ কিছু গ্রামে বাংলাদেশি মোবাইলের নেটওয়ার্ক রয়েছে। এসব গ্রামের বাসিন্দারা বাংলাদেশি নেটওয়ার্কের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকে। মংডু এলাকার একজন রোহিঙ্গা কালের কণ্ঠকে জানান, আরাকান আর্মিকে আরাকানের রোহিঙ্গা বাসিন্দারা বলে থাকে ‘মগ বাগি’ (অর্থাৎ দস্যু)। আরাকান আর্মিতে রয়েছে চার দেশের বাসিন্দা। তারা যথাক্রমে ভারত, নেপাল, মায়ানমারের আরাকান ও বাংলাদেশের বাসিন্দা।