• সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন

রুমিন ফারহানা এখন আর ‘বহিরাগত’ নন

প্রভাত রিপোর্ট / ১৮৩ বার
আপডেট : রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফিরে তৌফিক আহমেদ তফছির : ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ হওয়ায় পাল্টে গেছে অনেক হিসাব–নিকাশ। সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা এখন আর ওই আসনে ‘বহিরাগত’ নন। তাঁর এলাকায় হয়েছে আনন্দ মিছিল। উচ্ছ্বসিত রুমিন ফারহানার সমর্থকরাও।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদের ৩৭টি নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা (গেজেট) প্রকাশ করেছে। পুনর্নির্ধারিত চূড়ান্ত তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়ন দুটিব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে এ আসনটি সরাইল, আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরের একাংশ হিসেবে পরিচিতি পেল।
বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী, চান্দুরা ও হরষপুর এ তিনটি ইউনিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে সীমনা পুনর্নির্ধারণ করে এরপূর্বে ইসি একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করে। এর পক্ষে ছিলেন রুমিন ফারহানা। বিপক্ষে ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী খালেদ হোসেন মাহবুব (শ্যামল) এবং এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
আসন পুনর্নির্ধারণের পক্ষে-বিপক্ষে বিজয়নগরে একাধিকবার মহাসড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া গত ২৪ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে শুনানিকালে রুমিন ফারহানার সঙ্গে এনসিপির নেতাদের হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ওই দিন সরাইল ও বিজয়নগরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন রুমিন ফারহানার অনুসারীরা। শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে এনসিপি।
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মাঠে নেমেছিলেন রুমিন ফারহানা। এখনো মাঠে রয়েছেন তিনি। প্রায় প্রতি সপ্তাহে এলাকায় এসে গণসংযোগসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আসছেন। তবে দলের ভেতর তাঁর প্রতিপক্ষও আছে। তাঁরা নানা সময় রুমিন ফারহানকে ‘বহিরাগত’ বলে কটূক্তি করে আসছিলেন। আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারিত হওয়ায় তাঁর এ বদনাম কেটে গেল।
রুমিন ফারহানার বাবা ভাষাসংগ্রামী অলি আহাদ ছিলেন বর্তমান বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তবে রুমিন ফারহানা বর্তমানে সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঠিত বিজয়নগর উপজেলাটি একসময় ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার অধীন। ২০১২ সালে সদর উপজেলার বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়নসহ ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে বিজয়নগর উপজেলার যাত্রা শুরু হয়।
প্রথম থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়ন দুটি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ সংসদীয় আসনের সঙ্গে। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউনিয়ন দুটি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সঙ্গে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চান্দুরা ও বুধন্তী ইউনয়ন দুটি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সঙ্গে। এবার সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে ইউনিয়ন দুটি ফিরে এসেছে পুরোনো আসনে।
১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা–২ (বর্তমানে ব্রহ্মণবাড়িয়া–২) আসন থেকে রুমিন ফারহানার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের তাহের উদ্দিন ঠাকুরের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই বিতর্কিত নির্বাচনে তাহের উদ্দিন ঠাকুর নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রুমিন ফারহানা গত শুক্রবার রাতে শাহবাজপুর গ্রাম থেকে ইসলামপুর গ্রামে তাঁর দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করেন। এ সময় সরাইল উপজেলা থেকে তাঁর সফরসঙ্গী হন কয়েক শ সমর্থক। বিজয়নগর উপজেলার রামপুর এলাকায় আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন আরও কয়েক শ অনুসারী। পরে শত শত অনুসারী রুমিন ফারহানাকে সামনে রেখে আনন্দ মিছিল করেন। রাত নয়টার দিকে ইসলামপুর গ্রামে রুমিন ফারহানা বাড়িতে সমাবেশ হয়।
সমাবেশে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আজ আমি আমার দাদার ভিটায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি। আজকে আমি যে আবেগ-আনন্দ পাচ্ছি, গত ১৫ বছরে আমি এ আবেগ এ আনন্দ কোথাও পাই নাই।’ এ সময় পুরোনো একটি ঘর দেখিয়ে বিএনপির এই নেত্রী বলেন, ‘আমার জন্ম এই ঘরে। আমার বাবা–চাচাদের জন্ম এই ঘরে। তবে তাঁরা এ বাড়িতে তেমন আসেননি। আজ আমি এসেছি আপনাদের দরজায়। আপনারা আমার হাতকে শক্তিশালী করেন। আমি ওয়াদা দিচ্ছি আমি আজীবন আপনাদের পাশে থাকব। আপনারা গুজবে কান দেবেন না। কোনো রকমের বিভাজনে কান দেবেন না।’
ভোটার ও নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমার বাবাকে আপনারা ৭৩ সালে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করেছিলেন না? কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান ফলাফল উলটাই দিছে। তিনি তো (বাবা) আপনাদের ভোটের এমপি ছিলেন। আগামী দিনে কোনো শক্তি যেন আপনাদের এমপির ফলাফল পরিবর্তন করতে না পারে। সজাগ থাকতে হবে। আপনাদের মেয়েকে পাস করানোর দায়িত্ব আপনাদের। আমার হেফাজতের দায়িত্ব আপনাদের। আমি ওয়াদা করছি, আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন আমি আপনাদের সুখে–দুখে পাশে থাকব।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও