• রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:০৯ পূর্বাহ্ন

বিয়ে না করেই ফেরত যেতে হলো ভারতীয় তরুণী রিংকি বেগমকে

প্রভাত রিপোর্ট / ৯ বার
আপডেট : শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নুরুল ফেরদৌস,লালমনিরহাট : প্রেমের টানে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় তরুণী রিংকি বেগমকে অবশেষে বিয়ে না করেই ফিরতে হলো ভারতে। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে বিজিবি ও ইমিগ্রেশন পুলিশের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে তাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বুড়িমারী স্থলবন্দর চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ইনচার্জ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আইনগত প্রক্রিয়া শেষে বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যদের উপস্থিতিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে রিংকি বেগমকে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার থানার কড়াই ক্রান্তি গ্রামের আব্দুল রহিমের মেয়ে রিংকি বেগম (২০) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচিত হন লালমনিরহাটের রবি নামের এক যুবকের সঙ্গে। দেড় বছরের সেই প্রেমের সম্পর্ক গভীর হলে রবি বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। পরিবারের চাপে অন্যত্র বিয়ে ঠিক হলে রবির ডাকে গত ৮ সেপ্টেম্বর ভোরে দালালদের সহযোগিতায় কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন রিংকি।
কিন্তু বাংলাদেশে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়লে রিংকিকে তার দূর সম্পর্কের চাচা শফিকুল ইসলাম বাপ্পির বাড়িতে রাখা হয়। সেখানে পাঁচ দিন অবস্থান করলেও রবি আর সামনে আসেননি। এমনকি বিয়েতেও রাজি হয়নি তার পরিবার।
অভিযোগ রয়েছে, রবির বড় বোন শিখা ভয়ভীতি দেখিয়ে রিংকিকে আড়াল করার চেষ্টা করে এবং রবিকে লুকিয়ে রাখে। এ কারণে রবির সঙ্গে তার বিয়ের উদ্যোগ আর এগোয়নি।
রবির দাদা বলেন, “মেয়েটি আমাকে ভালো লেগেছে, আমি বিয়েতে রাজি ছিলাম। কিন্তু নাতি রবিকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে থাকলে অবশ্যই বিয়ের ব্যবস্থা করতাম।”
রিংকির বাবা আব্দুল রহিম বলেন, “দুই দেশের আইনি প্রক্রিয়ায় মেয়েকে ফেরত পেয়ে আমি খুশি। তবে আমার মেয়েকে ফাঁসিয়েছে বাংলাদেশের রবি নামের ছেলেটি। তার কারণেই মেয়ে এত ভোগান্তিতে পড়েছে।”
ভারতে ফেরার আগে আবেগঘন কণ্ঠে সাংবাদিকদের উদ্দেশে রিংকি বলেন, “রবির সঙ্গে দেড় বছরের সম্পর্ক ছিল। সে আমাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়েছিল। আমি পরিবারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। কিন্তু তার পরিবার আমাকে মেনে নেয়নি। এখন আমাকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আমি হেরে গেলাম, জিতে গেল রবি। তাহলে কি আমাকে পাচারের জন্য আনা হয়েছিল? আমি চাই, আমার মতো আর কোনো মেয়ে যেন এভাবে প্রতারণার শিকার না হয়।”
রিংকিকে হস্তান্তরের সময় ভারতের ময়নাগুড়ি থানার ইনচার্জ সুবাল ঘোষ, তার বাবা আব্দুল রহিম, পাটগ্রাম থানার এসআই শাহজাহান, বুড়িমারী ইমিগ্রেশন ইনচার্জ আশরাফুল ইসলাম, বিজিবি বুড়িমারী বিওপি ক্যাম্প কমান্ডার হাফিজুল ইসলাম, স্থলবন্দর চেকপোস্ট কমান্ডার আনজারুল ইসলামসহ দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়দের মতে, প্রেমের টানে এভাবে সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনা নতুন নয়। তবে এমন প্রতারণা ও ভোগান্তির শিকার হওয়ায় অনেকে এটিকে মানবপাচারের শঙ্কাজনক দিক বলেও অভিহিত করছেন।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও