• মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ইতিহাসে স্বৈরশাসকদের শেষ পরিণতি কী হয়েছিল হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিচার নিয়ে যা বললো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘আই ডোন্ট কেয়ার’ লেখা ফটোকার্ড পোস্ট, ঢাবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার আটক ৬৭৮ কোটি মানিলন্ডারিংয়ে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড মালিকের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা পীরগঞ্জে বালু উত্তোলনের সংবাদ প্রকাশের পর আর্থিক জরিমানা ও ড্রেজার আটক শীতে খুশকি দূর হবে ৩ ঘরোয়া উপাদানে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সীমান্তে ৪ বাংলাদেশি আটক কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা (এআই) ফোরামে যোগ দিল ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তিতুমীর কলেজ ও আমতলীতে ককটেল বিস্ফোরণ, মেরুল বাড্ডায় বাসে আগুন শাহবাগের ছবির হাটে ককটেল বিস্ফোরণ
পাচার চলছে, উদ্ধারও হচ্ছে: মাদকসহ আসছে চোরাচালান পণ্য

সোনার দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ২ লাখ টাকা ছাড়ালো

প্রভাত রিপোর্ট / ৪৭ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫

বিশেষ প্রতিবেদন: দেশের বাজারে সোনার দাম আবার বাড়ানো হয়েছে। এতে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে ৩ হাজার ১৫০ টাকা। এতে এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ৭২৬ টাকা হয়েছে। দেশের বাজারে এই প্রথম এক ভরি সোনার দাম দুই লাখ টাকা হলো।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সোমবার (৬ অক্টোবর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে ৫ অক্টোবর সোনার দাম বাড়ানো হয়। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয় এক লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকা। আজ পর্যন্ত এটাই ছিল দেশের বাজারে সোনার সর্বোচ্চ দাম। এখন আবার দাম বাড়ানোর ফলে সেই রেকর্ড ভেঙে গেলো।
এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৩ হাজার ১৫০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭২৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৩ হাজার ১০ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৯১ হাজার ৬০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৫৭৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম এক লাখ ৬৪ হাজার ২২৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ২ হাজার ১৯২ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৫ টাকা।
গত ৫ অক্টোবর সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ২ হাজার ১৯২ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৯৯ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৮৮ হাজার ৫৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৭৯৬ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৬১ হাজার ৬৫১ টাকা। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ৫২৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৩৪ হাজার ২৫৩ টাকা। সোমবার পর্যন্ত এই দামে সোনা বিক্রি হয়েছে।
সোনার দাম বাড়ানো হলেও রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৬২৮ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ৩ হাজার ৪৫৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৯৬৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ২২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে স্বর্ণ চোরাচালান (পাচার) বিরতিহীনভাবে চলছে এবং এর সঙ্গে জড়িত চক্রগুলো নতুন কৌশল গ্রহণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিমানবন্দর থেকে স্থলবন্দর সব জায়গাতেই স্বর্ণ আটক ও উদ্ধারের ঘটনা বেড়েছে। পাচারকারীরা লাগেজ (ব্যাগেজ) বিধিমালার ফাঁকফোকর থেকে শুরু করে হুন্ডি ও পণ্য বিনিময় (বার্টার) পদ্ধতি পর্যন্ত নানা উপায়ে সোনা পাচার করছে বশেষ করে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশে অবৈধ পথে আসা ভারতীয় পণ্যের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে সোনা দিয়ে এমন চক্রের তথ্যও উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্বর্ণ চোরাচালান রোধে পদক্ষেপ নিলেও চ্যালেঞ্জও কম নয়। এই অবৈধ বাণিজ্য জাতীয় রাজস্ব, বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ ও স্থানীয় শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সীমান্ত ও বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ পাচারের ঘটনা ক্রমেই উদ্বেগজনক মাত্রা পাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে কেবল সীমান্ত এলাকাগুলোতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রায় ৭২৫ কেজি এবং তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস গোয়েন্দা অধিদপ্তর (সিআইআইডি) প্রায় ৮৪০ কেজি অবৈধ স্বর্ণ আটক করেছে। এর মধ্যে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই দুই বছরে ৪৩৬ কেজি সোনা জব্দ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র সাত মাসে বিজিবি ও সিআইআইডি মিলে১৪৩ কেজি চোরাচালানকৃত সোনা উদ্ধার করেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৯৬ কোটি টাকা। তবে কর্মকর্তাদের মতে, এটি মোট পাচারের সামান্য অংশমাত্র; বেশিরভাগ সোনা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।
স্বর্ণ পাচারকারীরা বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সীমান্ত পথে নিত্যনতুন কৌশল নেয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালের ৪ মে যশোরের শার্শা এলাকায় জিন্স প্যান্টের পকেটে লুকানো এক কেজিরও বেশি স্বর্ণসহ এক যুবককে আটক করে পুলিশ। একইভাবে ৩০ জুলাই যশোর সদর এলাকায় কোমরে লুকানো ৪২০ গ্রাম স্বর্ণসহ আরেক পাচারকারী বিজিবির হাতে ধরা পড়ে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) কেবল যশোর সীমান্তেই বিজিবি ৭.৫৫৪ কেজি স্বর্ণ ও ৭০.৫ কেজি রুপা পাচারের সময় জব্দ করেছে। বিজিবি জানায়, যশোরের মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অসংখ্য ছোট রুট ব্যবহার করে স্বর্ণ ভারতে পাচার হচ্ছে। বিজিবি ও কাস্টমসের তথ্যে দেখা গেছে, চোরাচালানকারীরা দেশের অন্তত আটটি জেলার ৯০টির বেশি সীমান্ত পথ ব্যবহার করে সোনা পাচার করছে; শুধুই যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার মধ্যেই প্রায় ৫০টি রুট সক্রিয় রয়েছে।
ভারত হচ্ছে এসব চোরাচালানকারীর মূল গন্তব্য। আন্তর্জাতিকভাবে স্বর্ণালঙ্কারের বিশাল বাজার ভারতের, যেখানে বার্ষিক প্রায় ৮০০ টন সোনার চাহিদা রয়েছে। ভারতের বাজারে শুল্ক ও কর মিলিয়ে সোনার মূল্য বেশি হওয়ায় প্রতিবছর ৮০-৯০ টনের মতো সোনা চোরাইপথে ভারতে ঢোকে বলে ২০২৩ সালে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এর বড় অংশই বাংলাদেশ ও মিয়ানমার হয়ে যায়, কারণ এসব রুটে নজরদারি তুলনামূলক শিথিল বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে বহুগুণ বেশি সোনা আসার একটি কারণই হলো এই ট্রানজিট রুট; আনুষ্ঠানিক পথে বা ব্যাগেজের আওতায় সোনা এনে পরে তা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পাচার করা হয়।
অপরদিকে বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় পোশাকসহ নানা পণ্যের ছড়াছড়ি দেখা যায়, যার বড় অংশই অবৈধ পথে আসে বলে কর্তৃপক্ষের ধারণা। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাজারে যে পরিমাণ ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা ইত্যাদি বিক্রি হয়, তার তুলনায় বৈধ আমদানি অতি নগণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শাড়ি ও পোশাক আমদানি হয়েছে প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকার, যার খুব কম অংশ সরাসরি ভারত থেকে আমদানি দেখানো হয়েছে। বাস্তবে অবশিষ্ট বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পোশাক এসেছে বা বাজারে বিক্রি হয়েছে শুল্ক ফাঁকি বা চোরাচালানের মাধ্যমে। সীমান্তের অবস্থা এমন যে বৈধ পথে ভারতীয় পণ্যের আমদানি কমলেও অবৈধ পথে ভারতীয় পণ্যের স্রোত অব্যাহত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সিলেটের কাপড় বাজারগুলো এখন ভারতীয় শাড়ি ও থ্রি-পিসে সয়লাব, যা সুপারশপ থেকে ফুটপাথ সর্বত্র মিলছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমান্ত পথে অবৈধ পণ্য আসতে তেমন কষ্ট পেতে হচ্ছে না এবং এগুলো সহজেই বাজারে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভারতীয় পণ্য (বিশেষত পোশাক) আমদানির আড়ালে বা পণ্য চালানে জাল-ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে একেবারে অবৈধ পথেই দেশের বাজারে ঢোকে।এর বিনিময়ে দেশ থেকে অর্থ না গিয়েও মূল্য পরিশোধ হচ্ছে স্বর্ণ পাচারের মাধ্যমে, যা দুই দেশের চোরাচালানি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অলিখিত সমঝোতার মতো কাজ করছে বলে জানা যায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রেও সীমান্তে এর প্রমাণ মিলেছে: যশোর সীমান্তে বিজিবির আটক তালিকায় সোনা-রুপার চালান যেমন আছে, তেমনি বিপুল পরিমাণ ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস, কম্বল, কসমেটিক্স, ওষুধ ইত্যাদির চালানও ধরা পড়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, স্বর্ণ ও রুপা পাচারকারীরা মূলত ভারতে এগুলো দিয়ে আসছে, বিনিময়ে বাংলাদেশে আসছে মাদকসহ অন্যান্য পণ্য; আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে পরিমাণ আটক করছে, তার কয়েক গুণ বেশি চোরাচালানীরা পার করে দিচ্ছে বলে ধারণা।
এই স্বর্ণের বিনিময়ে ভারতীয় পণ্য আমদানির চক্র সবচেয়ে বেশি সক্রিয় সীমান্ত-সংলগ্ন জেলাগুলোতে। মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরা প্রভৃতি জেলার সীমান্তপথে স্বর্ণের অবৈধ চলাচল এবং বিপরীতে কাপড়-চোপড়সহ পণ্য প্রবেশের ঘটনা বেশি। বিজিবির এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত উৎস দেশে (মধ্যপ্রাচ্যে) স্বর্ণ সস্তা দামে কেনা হয়, বৈধ/অবৈধ পথে বাংলাদেশে আনা হয়, তারপর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে নিয়ে সেখানে চাহিদার কারণে বেশি দামে বিক্রি বা পণ্যের মূল্য হিসাবে সমন্বয় করা হয়। এভাবেটাকা-পয়সার লেনদেনের বদলে সোনা নিজেই বিনিময়-মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই চক্রের হাতে।
ব্যাগেজ রুল, হুন্ডি ও বার্টার ট্রেড: পাচারকারীরাব্যাগেজ বিধিমালার অপব্যবহার, হুন্ডিএবংবার্টার ট্রেডেরমাধ্যমে সোনা লেনদেনের ফাঁদ গড়ে তুলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার প্রবাসীদের মাধ্যমে স্বর্ণ আনার অনুমানিক ছাড় দিয়েছিল, যার সুফল নেওয়ার বদলে অনেক চক্র তা অপব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। গত পাঁচ বছরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রীরা ব্যাগেজ রুলে প্রায় ১৪২ টন সোনা এনেছেন; ধারণা করা হয়, এই সোনার বড় অংশই পরে পাচারকারীরা ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে। আগে বিদেশফেরত যাত্রীরা প্রতি সফরে একটি করে (প্রায় ১১৭ গ্রাম ওজনের) স্বর্ণের বার শুল্ক দিয়ে আনতে পারতেন এবং আনলিমিটেড১০০ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার শুল্কমুক্ত আনতে পারতেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে চক্রগুলো ভাড়াটে বাহক নিয়োগ করে বৈধতার আড়ালে সোনার বার দেশে আনিয়েছে। পরে এসব সোনা বিমানবন্দর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হয় বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা। সোনা ব্যবসায়ী ও কাস্টমস গোয়েন্দাদের মতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় এত সোনা অতিরিক্ত, ফলে অনুমান করা হয় বহির্বিশ্ব (বিশেষত ভারত) এই সোনার গন্তব্য।
হুন্ডি বা অনানুষ্ঠানিক অর্থ স্থানান্তর ব্যবস্থার সঙ্গেও স্বর্ণ পাচারের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে। বাজুস (বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন) নেতারা জানান, বছরে প্রায় ৮০,৩০০ কোটি টাকার স্বর্ণ এবং ১০,৯৫০ কোটি টাকার হীরা বাংলাদেশ হয়ে পাচার হয়, যা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমায় এবং মানি লন্ডারিং বাড়িয়ে অর্থনীতিকে ক্ষতি করছে। হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ টাকার লেনদেনের অনেকাংশই এই স্বর্ণ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্য বা অন্যান্য দেশ থেকে সোনা এনে বাংলাদেশে জমা করা হয়, পরে হুন্ডি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেই সোনার বিনিময়ে টাকার হিসাব মেটানো হয় এবং সোনা ভারতের বাজারে পাচার করা হয় বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারাও স্বীকার করেন যে অস্ত্র, মাদক ও হুন্ডির চক্রের সঙ্গেও স্বর্ণ পাচারের যোগসূত্র রয়েছে।
সবচেয়ে আলোচিত কৌশল হলোবার্টার বা পণ্য-বিনিময় পদ্ধতি, যেখানে ভারত থেকে আসা মাদকসহ চোরাই পণ্যের মূল্য সোনা দিয়ে পরিশোধ করা হচ্ছে। কাস্টমস গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) সৈয়দ মুসফিকুর রহমান সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, “শোনা যায় যে ভারত থেকে চোরাই পথে যে পণ্য আসে, তার দাম পরিশোধ হয় স্বর্ণের মাধ্যমে।”এতে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা সোনা চোরাই পথে ভারতে ঢুকছে এবং বাংলাদেশ মূলত ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ পাচারকারীরা নগদ অর্থ বা ব্যাংক চ্যানেলের বদলে অবৈধ সোনাকেকারেন্সিহিসেবে ব্যবহার করে দু’দেশের চোরাচালানি পণ্যের বাণিজ্য পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ থেকে সোনা ও রুপা যায় ভারতে, আর ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে আসে মাদক, অস্ত্র, কাপড়-চোপড়, প্রসাধনীসহ নানা পণ্য।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও