প্রভাত রিপোর্ট: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছেন বিগত সরকারের সময়ে গুমের শিকার ভুক্তভোগীরা। তারা বলেন, আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তারা জেলে ডিভিশন পেতে পারেন। কিন্তু সাব জেলের নামে কোনও বৈষম্যের সুযোগ নেই। বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের হাজিরার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা। এ সময় উপস্থিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আব্দুল্লাহ হিল আমান আল আযমী, ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম আরমান ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান প্রমুখ।
আয়না ঘরে দীর্ঘ ৮ বছর গুমের শিকার জামায়াতের প্রয়াত সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ হিল আমান আল আযমী বলেন, ‘‘অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তারা বাহিনীর বাইরে র্যাবে যুক্ত হয়ে এসব অপকর্ম করেছেন। তবে তাদের সংখ্যা শতাংশেরও কম। তাই তাদের অপকর্মের দায়ভার পুরো সেনবাহিনীকে দেওয়া যাবে না। শুধু অপরাধে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’’
প্রায় ৮ বছর আয়নাঘরে থাকা মীর কাশেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আরমান বলেন, ‘‘সেনানিবাসের ভেতরে ঘোষিত সাবজেলে জেল কোড সঠিকভাবে অনুসরণ হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। বিশেষ করে তারা কি কোনোভাবে সার্ভিং সেনা সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কিনা, এটি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। যদি না হয় আমরা যারা ভুক্তভোগী ও সাক্ষী আছি, আমাদের জীবনের হুমকি আশঙ্কা থাকবে।’’
আরমান আরও বলেন, ‘‘আসামিরা গ্রেফতার অবস্থায় ক্যান্টনমেন্টে (সেনানিবাস) অবস্থানকালে বিচারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে তা খুবই আতঙ্কজনক বিষয় হবে। তাই জেল কোড সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘একজন ভুক্তভোগী হিসেবে আমার আশাবাদ যে, দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যদের দিয়ে যেন ভাড়াটে খুনির কাজ আর করা না হয়। জনগণের রক্ষক সেনাবাহিনীকে আর কোনোদিন যেন জনগণের মুখোমুখি করা না হয়। আমাদের সার্বভৌমত্বের রক্ষক সেনাবাহিনী যেন আর কোনোদিন কোনও শক্তির পুতুল না হয়ে যায়Í সেটা এই বিচারের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, যারা দায়িত্বরত ছিলেন বা যাদের তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় অপরাধীরা দেশত্যাগ করেছেন, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। এর আগে বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল সোয়া ৭টার দিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিনটি মামলার ওপর শুনানি হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
পরে আদালতে হাজির হওয়া ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপ তি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। একইসঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া গুমের দুই মামলায় পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২০ নভেম্বর ও জুলাই আন্দোলন ঘিরে রামপুরায় ২৮ হত্যা মামলায় ৫ নভেম্বর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।’