প্রভাত রিপোর্ট: মালয়েশিয়ায় দু’টি কোম্পানির নির্যাতন এবং জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানোর প্রতিবাদে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে সোমবার (১০ নভেম্বর) মাইগ্রেন্ট ওয়েলফেয়ার নেটওয়ার্ক মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ- ভিত্তিক একটি বাংলাদেশি প্রবাসী নেটওয়ার্ক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। মানববন্ধনে মালয়েশিয়ার দুইটি কোম্পানি মডিকেরাম এবং কাওয়াগুচি ম্যানুফেকচারিয়ের শোষণের শিকার ৪৩১ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের জন্য দ্রুত সহায়তা দাবি এবং মালয়েশিয়ায় প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর ব্যাপক নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
মানববন্ধনে মাইগ্রেন্ট ওয়েলফেয়ার নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষসহ আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানায়— যেন শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া আমরা গণমাধ্যম, মানবাধিকারকর্মী, শ্রমিক অধিকার আন্দোলন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে এ বিষয়ে অবিলম্বে মনোযোগ দিতে অনুরোধ জানান তারা।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, বাংলাদেশ হাইকমিশন (মালয়েশিয়া) এবং প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় (ঢাকা) আধুনিক দাসত্বের শিকার ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, বরং তাদের কার্যক্রমের কারণে শ্রমিকরা প্রতিশোধমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন।
ভুক্তভোগী কর্মীরা জানান, মেডিক্রেমে বছরের পর বছর শ্রমিকরা বিলম্বিত বেতন, হুমকি, নির্যাতন ও অমানবিক বাসস্থানের শিকার হয়েছেন। কোম্পানি তাদের পাসপোর্ট জব্দ করে রাখায় তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। কাজের অনুমতিপত্র (পারমিট) নবায়ন না হওয়ায় অনেকে অবৈধ হয়ে গেছেন, যা জোরপূর্বক শ্রম ও আধুনিক দাসত্বের নিদর্শন। বহু ধর্মঘট ও বাহ্যিক চাপের পর কোম্পানি একবার রিক্রুটমেন্ট ফি ফেরত দিলেও, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ১৫ জন শ্রমিককে জোরপূর্বক দেশে পাঠানো হয়। কারণ তারা পারমিট নবায়ন ও আগের শ্রমিকদের বকেয়া ফেরতের দাবি তুলেছিলেন।
কর্মীরা জানান, আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে প্রতিশোধমূলক ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে এই কোম্পানিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।
কর্মীরা আরও জানান, কাওয়াগুচি সনি, প্যানাসনিক এবং দাইকিন – এর মতো বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের সরবরাহকারী ছিল। শ্রমিকরা প্রচুর রিক্রুটমেন্ট ফি পরিশোধ করেও ২০২২ সাল থেকে বেতন অনিয়মের শিকার হন এবং গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ মাস কোনও বেতন পাননি। পরে ৩০৮ জন শ্রমিককে ওই প্রতিষ্ঠানের ক্রেতারা কিছু ক্ষতিপূরণ ও রিক্রুটমেন্ট ফি ফেরত দেন। তবে বকেয়া বেতন এখনও পরিশোধ হয়নি, যদিও মালয়েশিয়ার শ্রম দফতর গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর এক সমঝোতা বৈঠকের পর সম্মতিপত্র জারি করে। তবুও কোম্পানির তাইওয়ানি মালিক এখনও ২৫১ জন শ্রমিকের কাছে ৩০ লাখ রিঙ্গিত দেনা এবং কোম্পানি বকেয়া পরিশোধ না করেই বন্ধ ঘোষণা করে। এটি মালয়েশিয়ার শ্রম সুরক্ষা ব্যবস্থার গুরুতর ব্যর্থতা তুলে ধরে।
মানববন্ধনে শ্রমিকরা সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এসব গুরুতর অপরাধে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।