• রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন

নির্বাচনটা আমরা করে ফেলতে পারবো : আইজিপি

প্রভাত রিপোর্ট / ১০ বার
আপডেট : শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

প্রভাত সংবাদদাতা, খুলনা: পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, গত ফ্যাসিস্ট আমলে যেই পরিমাণ কলঙ্ক আমাদের ওপর চেপেছে, এটি শুধরাতে সময় লাগবে। এটা এত সহজে যাবে না। কিন্তু নির্বাচনটা আমরা করে ফেলতে পারবো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ৪৩ হাজার সেন্টারের কয়টি সেন্টার বন্ধ করবেন? ৫০০ সেন্টার বন্ধ করবেন, রি-ইলেকশন হবে। ৪২ হাজার ৫০০ সেন্টারে করে ফেলবো। ৪২ হাজারে হয়ে যাবে, ৪১ হাজারে হয়ে যাবে। নির্বাচন ঠেকাতে পারবেন না। কারণ মানুষ নির্বাচনমুখী। এটাই হচ্ছে বড় শক্তি। শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে খুলনা মহানগরীর বয়রায় অবস্থিত পুলিশ লাইন্সে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, মানুষ নির্বাচনকে স্বাগত জানাচ্ছে। উদগ্রীব হয়ে মানুষ অপেক্ষা করছে নির্বাচনের জন্য। কাজেই এখানে যেসব বাধা-বিপত্তি আছে, বিশৃঙ্খলা আছে, অপরাধ আছে, সন্ত্রাস আছে- আমার বিশ্বাস সমাজের কোনো লোকই চায় না, আর যেহেতু সবাই নির্বাচনের ব্যাপারে উদগ্রীব প্রত্যেকেই আমাদেরকে সহযোগিতা করবে। সমাজের সবচেয়ে সচেতন আপনারা (সাংবাদিক)। আপনাদের কাছ থেকে খবর পাই। আমার বিশ্বাস আমাদের হাতে যে দুই মাস সময় আছে, আমরা অবশ্যই দমন করতে পারবো।
নির্বাচন বানচালে নাশকতা বন্ধে পুলিশের পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে, সমাজের প্রতিটি মানুষ। পুলিশের একার পক্ষে বল প্রয়োগ করে এই নাশকতা শেষ করা অথবা মোকাবিলা করা সম্ভব না, যতক্ষণ না সমাজের সবাই আমাদেরকে সাহায্য করছে। আমার বিশ্বাস আমরা পারবো।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, আগে পুলিশ যেই রূপে ছিল- কিছু হলেই একজনকে ধরে নিয়ে আটকে ফেলা। কোর্টকে জানানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। তিন দিন আটকে রাখলাম, এক মাস আটকে রাখলাম। অথবা ক্রসফায়ারের নামে খুন করে ফেললাম। এই যে অন্যায়, অত্যাচার করে টিকে থাকা এটাতো সবলতার লক্ষণ নয়। সবল কর্তৃপক্ষ বা সবল সরকার কি মানুষের ওপর অত্যাচার করে? অত্যাচার কে করে? করে তো একটা দুর্বল সরকার। যার আইনি ভিত্তি নেই। যার নৈতিক শক্তি নেই। তার জন্যই দরকার হয় মানুষকে অত্যাচার করা, গুলি করা, লাঠি দিয়ে আঘাত করা, মানুষকে গুম করে ফেলা। এসব কাজগুলো দুর্বল কর্তৃপক্ষের বৈশিষ্ট্য। আমি মনে করি- আমরা নৈতিকভাবে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। তিনি বলেন, আমরা যখন ডিউটিতে যাই, পুলিশকে অনেক সময় মানুষ এক্সেপ্ট করতে পারে না। তাদের সেই স্মৃতি মনে পড়ে। যে এই পুলিশতো আমাকে গুলি করেছিল। তার জন্য অনেক সময় আক্রমণ করতে আসে। অনেক সময় আসামি ছিনিয়ে নিতে আসে। আমরা অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে এগুলো মোকাবিলা করি। আমরা এখানে গুলি করে মানুষকে মারি না, জোর করে লাঠিপেটা করি না, গ্যাস মারি না। আমরা কিন্তু এই জায়গায় টলারেন্স। আমরা সেই পুলিশ হতে চাই না গালি দিলে গুলি করবে। সন্ত্রাসীরা জানে যে ধরা পড়লে ক্রসফায়ার, ধরা পড়লে গুম। এই ভয় দিয়ে আমি সন্ত্রাস দমন করতে চাই না। আমি রুলসের মধ্য দিয়েই ধরা পড়লে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোর্টে পাঠাবো। চার্জশিট দেব, ওইখানে বিচার হবে। এর মধ্য দিয়েই আমি সন্ত্রাস দমন করবো। আমি ক্রসফায়ার দিয়ে দমন করতে চাই না। এর জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে, ঘুমহীন কাটাতে হচ্ছে।
নির্বাচনে সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহের বিষয়ে আইজিপি বলেন, আগে বাধা দিত সিল মারার কারণে। এ জন্য ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন সময়। আমরা আপনাদের বলবো ভাই আসেন, দেখে যান কেমন ভোট হচ্ছে। আমি উল্টা করবো। আপনি বরং টায়ার্ড হয়ে যাবেন। আপনাদের প্রতি আমার শত্রুতা নেই, শত্রুতা ছিল যখন আমি অন্যায় করেছি, দেখাতে চাইনি। দেখলে লিখে দেবে পত্রিকায়। আমি চাচ্ছি না সেটা। আমাদের ভেতরে যে অভ্যাসটা গড়ে উঠেছে এক বছরে যাবে না, চেষ্টা করছি। নির্বাচন কমিশন খুবই পজিটিভ।
আইজিপি বলেন, পুলিশের সবগুলো ইউনিটিতে আমাদের প্রশিক্ষণ চলছে। নির্বাচনে আগের চেয়ে এবার দায়িত্ব পালন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চাচ্ছে এই নির্বাচন সবচেয়ে ফ্রি, ফেয়ার এবং উৎসবমুখর হবে। এ জন্য আমাদের দায়িত্বটা আমরা যেন সবচেয়ে ভালোভাবে পালন করতে পারি, সে জন্য আমরা নিজেরা প্রশিক্ষিত হচ্ছি। গত তিনটি নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক আছে, নানা সমালোচনা আছে। সেই সব সমালোচনা থেকে আমরা যেন বেরিয়ে আসতে পারি। সকলের সহায়তায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে একটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা যেন ভূমিকা পালন করতে পারি। সেই বিষয়েসকলকে মনে করিয়ে দিতে সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই খুবই উজ্জীবিত। ইনশাআল্লাহ- নির্বাচনে আমাদের ওপর যে দায়িত্ব এসেছে, সেটা পালন করতে পারবো।
প্রশিক্ষণ আয়োজন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আমাদের একটি বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা আছে। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের তিনটি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে, নানান সমালোচনা আছে। আমরাও সেই বিতর্ক এবং সমালোচনার শিকার হয়েছি, অংশীদার হয়েছি। ওই তিনটি নির্বাচনেই আমরা অংশগ্রহণ করেছি। আমাদের সেই অভিজ্ঞতাটাকে শোধরানোর জন্য আমরা যে ভুলগুলো করতে বাধ্য হয়েছি, সেই ভুলগুলো যেন না করি পক্ষপাতিত্ব, কোনো জায়গায় অন্যায়-অবিচার, প্রশ্রয় না দেওয়া সবকিছু ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আমরা সরকারের অঙ্গীকার যে সবচেয়ে সুষ্ঠু একটি নির্বাচন করা। এটা যেন আমরা করতে পারি এ জন্য আমাদের সমস্ত কু-অভ্যাস, বদ-অভ্যাস আগে যা হয়ে গেছে না কেন সবকিছু ভুলে গিয়ে আমরা যেন এটা সুশৃঙ্খলভাবে ও সুন্দরভাবে করতে পারি। এ জন্য আমরা নিজেরাই প্রশিক্ষিত হচ্ছি। এই প্রশিক্ষণ স্ব-প্রশিক্ষণ, নিজেরাই নিজেদেরকে শিক্ষিত করছি। বাহির থেকে কোনো প্রশিক্ষক আনছি না। আমাদের যারা দীর্ঘদিন কাজ করেছে, অভিজ্ঞতা আছে তাদের মাধ্যমে আমরা প্রশিক্ষিত হচ্ছি।
বিতর্কিত পুলিশ সদস্যদের তালিকা করা হয়েছে কিনা? নির্বাচন পরিচালনায় তাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তালিকা করা হয়নি। তবে এসপি, ডিআইজি যাকে মনে করছেন নির্বাচনের সময় উনি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবেন না, তাদেরকে চিহ্নিত করছেন। জানুয়ারিতে আমরা তাদের ওই সংখ্যাটাকে বিবেচনায় নেব।
পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, খুব বেশি সংখ্যক মামলার চার্জশিট হয়নি। আমাদের খুনের মামলা ১৯টি হয়েছে। আর খুনের বাহিরে ৩৬টি। গত এক বছরে প্রথম ৫-৬ মাস তদন্তের অগ্রগতি তেমন একটা হয়নি। তার পরের ৬ মাসে আমরা কিছুটা গুছিয়ে আনতে পেরেছি। এই বছরে আমার বিশ্বাস অনেক মামলা শেষ করে আনবো। কতজন পুলিশ চার্জশিটে রয়েছে এই মুহূর্তে সংখ্যাটা কাছে নেই। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অন্তত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে পাঠিয়েছি। এর বাহিরে হয়তো আরও ৩০-৩১ জন আছে, তাদেরকে এখনো পারিনি।
এআই দিয়ে গুজব ছড়ানো রোধে পুলিশের সাইবার ইউনিট প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, এই বিষয়ে আমরা খুবই দুর্বল। এই যে অত্যাচার আমরা সহ্য করছি, আপনারাও করছেন। মিস ইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন এবং ফেক নিউজ। কারও সম্পর্কে টোটালি কাল্পনিক একটি তথ্য তৈরি করে এআই দিয়ে এটাকে একেবারে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়। এটার বিরুদ্ধে আমরা যখন লিখি পুরো জিনিসটা ফলস। সবচেয়ে বেশি ফেসবুকে, এ জন্য আমরা বিটিআরসিকে লিখি, বিটিআরসি তখন মেটাকে মিথ্যা জিনিসটা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য জানায়, মেটাকে ১০০টা অনুরোধ করলে ৪০টা রাখে ৬০টা উনারা রাখে না। আমাদের স্বাধীনতার কোন জায়গায় গিয়ে আমাদেরকে সীমিত করবো- এই সিদ্ধান্ত আমাদেরকেই নিতে হবে। আমরা আপনাদেরকে চাপিয়ে দিতে পারবো না।
গায়েবি মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই দরখাস্ত করছে আমি নিরীহ, আমাকে এই দায় থেকে অব্যাহতি দেন। শুধু ওইটায় না, কেউ যদি দরখাস্ত নাও করে আমরা নিজের থেকেই মামলাটি দেখে নির্দোষদের বের করে এসপিরা রিপোর্ট তৈরি করে কোর্টে পাঠাচ্ছে। তারপরও চোখ এড়িয়ে গেলে তারা যেন এপ্রোচ করেন আমাদেরকে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও